সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

বাণিজ্য যুদ্ধের পদধ্বনি!

শুল্কের জালে জড়াল যুক্তরাষ্ট্র কানাডা মেক্সিকো ও চীন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ০৫ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
বাণিজ্য যুদ্ধের পদধ্বনি!
মার্কিন শুল্ক বসানোর ঘোষণা কানাডার দোকানগুলোতে অনুরোধ করা হচ্ছে দেশি পণ্য কিনতে - ইন্টারনেট

শুল্ক জালে জড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র কানাডা মেক্সিকোও চীন।এসব দেশ পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ করায় বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ছে। শুল্কারোপের কারণে এসব দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতি সম্মূখীন হচ্ছে। আর সেই সঙ্গে বাড়ছে বাণিজ্য যুদ্ধের আশংকাও। চুক্তির সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছেন। চলতি বছরের শুরুতে তিনি এ পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার থেকে শুল্ক কার্যকর হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে দেখা গেছে দরপতন। চীন থেকে আমদানি পণ্যে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ তিন বাণিজ্যিক অংশীদারই সপ্তাহ কয়েক আগের তুলনায় বাণিজ্যিক বাধার মুখোমুখি হবে। ট্রাম্প সোমবার হোয়াইট হাউসে বলেন, "মেক্সিকো বা কানাডার জন্য কোনো সুযোগ অবশিষ্ট নেই।

তবে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানিয়া জোলি সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, "স্পষ্ট করে বলতে চাই, ট্রাম্প যদি শুল্ক আরোপ করেন, আমরাও প্রস্তুত।" তিনি বলেন, মার্কিন শুল্কের পাল্টায় অটোয়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি পণ্যের ওপর ১৫৫ বিলিয়ন ডলারের (১২২ বিলিয়ন পাউন্ড) শুল্ক আরোপের

পরিকল্পনা করেছে। প্রথম ধাপে পাস্তা, পোশাক ও সুগন্ধির মতো দৈনন্দিন পণ্যে ৩০ বিলিয়ন ডলারের শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি রয়েছে। জোলি বলেন, কানাডা বাণিজ্য যুদ্ধ চায় না, তবে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করলে পাল্টা আঘাত হানা হবে। কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "অস্তিত্বের প্রশ্নে শুল্ক আমাদের জন্য একটি হুমকি, কানাডায় হাজার হাজার চাকরি ঝুঁকিতে রয়েছে।" মার্কিন শুল্কের পাল্টায় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে মেক্সিকো এবং চীনও। তাতে বড় ধরনের বাণিজ্য যুদ্ধের শঙ্কা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ মাদক ও অবৈধ অভিবাসীদের 'অগ্রহণযোগ্য' প্রবাহের প্রতিক্রিয়ায় কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দেন ট্রাম্প। গেল মাসেই সব ধরনের শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। পরে কানাডা ও মেক্সিকোর ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়নে এক মাস বিলম্বে সম্মত হয় যুক্তরাষ্ট্র। তাতে উত্তর আমেরিকার প্রতিবেশীরা সম্ভাব্য বাণিজ্য যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে আসে। তবে ফেব্রম্নয়ারিতেই চীন থেকে আসা পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। তার মানে দেশটির পণ্য এখন অন্তত ২০ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হবে। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, বাণিজ্য ভারসাম্য ঠিক করতে এবং দেশীয় শিল্পকে রক্ষায় শুল্ক একটি দরকারি অস্ত্র। উত্তর আমেরিকায় কয়েক দশক ধরে অবাধ বাণিজ্য সুবিধা উপভোগ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন পদক্ষেপের কারণে দেশটি অর্থনৈতিকভোবে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা নাকচ করে দিয়েছেন ট্রাম্প। অবশেষে বাস্তবে রূপ নিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বহুদিনের হুমকি। ওয়াশিংটন ডিসির স্থানীয় সময় ঠিক রাত ১২টা থেকে কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং চীনের ওপর নতুন ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়েছে। কানাডা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, যদি আমেরিকা তাদের পণ্যে শুল্ক আরোপ করে, তাহলে তারা পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। সোমবার দেশটি ঘোষণা করেছে, তারা ১৫৫ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসাবে। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রম্নডো বলেছেন, প্রথম ধাপে কানাডা ৩০ বিলিয়ন ডলারের পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করবে, আর বাকি ১২৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষেত্রে ২১ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার কথায় স্পষ্ট, যতদিন আমেরিকার শুল্ক বহাল থাকবে, ততদিন মার্কিন পণ্যে কানাডার শুল্কও কার্যকর থাকবে। এর আগেও কানাডা এমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের সময় দেশটি ডলার-ফর-ডলার ভিত্তিতে ১৬.৬ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলারের শুল্ক বসিয়েছিল। তবে কানাডার হাতে আরেকটি শক্তিশালী অস্ত্র আছে, যা আমেরিকার জন্য আরও বেশি কষ্টদায়ক হতে পাওে, তা হলো জ্বালানির প্রবাহ সীমিত করা। কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান তেল সরবরাহকারী, পাশাপাশি ৩০ শতাংশ মার্কিন রাজ্যে বিদু্যৎও সরবরাহ করে। যদি এই খাতেও কোনোও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, তাহলে তা আমেরিকার জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে। সূত্র: বিবিসি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে