সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী ও দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদের অনুগতদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং প্রতিশোধমূলক হত্যাকান্ডে এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৭ শতাধিক মানুষই বেসামরিক নাগরিক। যুদ্ধ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী একটি গোষ্ঠীর বরাত দিয়ে রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ ওই গোষ্ঠীর মতে, সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী দেশটির উপকূলে অব্যাহত সহিংসতায় আলাউইত ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শত শত বেসামরিক লোককে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, গত দুই দিনে মোট ১ হাজার জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যা গত বছরের ডিসেম্বরে বিদ্রোহীদের হাতে আসাদ সরকারের উৎখাতের পর থেকে সিরিয়ায় সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা। প্রাণহানির এই সংখ্যার মধ্যে বহু সংখ্যক সরকারি সেনা এবং আসাদের অনুগত বন্দুকধারীরাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যারা গত বৃহস্পতিবার থেকে উপকূলীয় লাতাকিয়া এবং তারতুস প্রদেশে সংঘর্ষে লিপ্ত রয়েছে।
সিরিয়ার অন্তবর্তী সরকার বৃহস্পতিবার থেকে এই দমন অভিযান শুরু করে। তারা বলেছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট আসাদের সমর্থক জঙ্গিরা লাতাকিয়া প্রদেশে তাদের বাহিনীর ওপর প্রাণঘাতী চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়েছে আর এটি একটি উদীয়মান বিদ্রোহ। সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, জঙ্গিদের সঙ্গে তীব্র সংঘর্ষে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কয়েক ডজন সদস্য নিহত হয়েছে। সিরিয়ার কর্মকর্তারা অভিযান চলাকালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা স্বীকার করেছেন। তবে এসব ঘটনার জন্য তারা সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীকে সমর্থন দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসা অসংগঠিত বেসামরিক জনতা ও যোদ্ধাদের দায়ী করেছেন। এরা লড়াই চলাকালে বিশৃঙ্খলার মধ্যে এসব অপরাধ করেছে বলে দাবি তাদের। শনিবার সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমকে জানান, সহিংসতা বন্ধ করতে ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে উপকূলমুখি সব সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আর উপকূলীয় শহরগুলোর রাস্তায় নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে মোতায়েন করা হচ্ছে। তিনি জানান, মানবাধিকারের লঙ্ঘন পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটি জরুরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সামরিক কমান্ডের আদেশ অমান্যকারী যাকে পাবে তাকে সামরিক আদালতে সোপর্দ করবে। সহিংসতার যেসব প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে সেগুলোর একটিতে বলা হয়েছে, এক গ্রামে বহু আলাউইতি পুরুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। এতে সিরিয়ার ক্ষমতাসীন ইসলামপন্থি কর্তৃপক্ষ অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন চালানোর সক্ষমতা রাখে কি না, তা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠেছে।