সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

তারুণ্যের দৃষ্টিতে মায়ের ভালোবাসা

পৃথিবীর পবিত্রতম শব্দ 'মা'। প্রত্যেক ধর্মই মা-কে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে। মায়ের ভালোবাসা অতুলনীয়। মা-কে ভালোবাসার জন্য কোনো বিশেষ দিনের প্রয়োজন হয় না। তবে আধুনিকতার এই সময়ে বছরের একটি দিন মায়ের জন্য আলাদাভাবে পালিত হয়ে আসছে। মা দিবস ঘিরে কয়েকজন তরুণ শিক্ষার্থীদের মাকে নিয়ে অব্যক্ত কথা জানাচ্ছেন তানজিদ শুভ্র
  ১১ মে ২০২৪, ০০:০০
তারুণ্যের দৃষ্টিতে মায়ের ভালোবাসা
তারুণ্যের দৃষ্টিতে মায়ের ভালোবাসা

আমার সব অর্জনের কৃতিত্ব মায়ের

শেখ রিফাদ মাহমুদ

1

এডুকেশন রিলেশন অফিসার, কমনওয়েলথ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন।

কখনো, কোনোদিন যে মানুষের মুখে 'না' অথবা 'পারব না' এই দুটি শব্দ শুনিনি তিনি আমার মা। এক কথায় সুপারওম্যান তিনি। অসম্ভব বলে কোনো শব্দই যেন তার জানা নেই। যেকোনো পরিস্থিতি দৃঢ়তার সাথে মোকাবিলার অসম্ভব দক্ষতাও রয়েছে তার। সর্বদাই স্বামী, সন্তান, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীসহ সবার যেকোনো সমাধানে যেন তিনি একাই যথেষ্ট। অসম্ভব সাহস, মায়া, মমতা, মানবিকতার ভান্ডার তিনি।

ছোটবেলা থেকেই আদর্শিক, মানবিক শিক্ষাদীক্ষা পেয়েছি তার কাছে থেকে। মারপিট বা মানসিক নির্যাতন নয়, সঠিকভাবে বুঝানোর মাধ্যমে ভুল-ত্রম্নটি শুধরে দিয়েছেন। কখনো কোনোদিন কারো নামে মন্দ কথা শুনিনি তার মুখে। আমার 'মা' আমার এগিয়ে যাওয়ার শক্তি, অনুপ্রেরণা। আমার সব ভালো কাজ বা অর্জনের কৃতিত্বও তার। যেকোনো প্রতিকূলতায় সাহস জুগিয়ে যাচ্ছেন।

'মা দিবস' উপলক্ষে 'লাভ ইউ মম' বা 'মা, তোমাকে অনেক ভালোবাসি' এসব বলতে চাচ্ছি না। মা-কে আজীবন রাখতে চাই দোয়ায়, মোনাজাতে এবং সম্মান, শ্রদ্ধার আসনে।

মা উন্নতির পথে আলোকবর্তিকা

ফাতেমাতুজ জোহুরা তানিয়া

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ।

মা ছাড়া আমাদের জীবন অসম্পূর্ণ। মা স্নেহময়ী, মা মমতাময়ী। মা থাকলে ঘর পূর্ণ থাকে। মা ছাড়া ঘর শূন্য। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআনে বলা আছে- 'হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের মা-বাবাকে রহমত করুন। যেমনি শৈশবে তারা আমাদের লালন-পালন করেছিলেন।' -সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ২৩-২৪।

আলস্নাহ ও তাঁর রাসূলের পরেই মায়ের স্থান এবং মায়ের পায়ের নিচেই সন্তানের বেহেশত। এই পৃথিবীতে মায়ের চেয়ে বড় আপনজন আর কেউ নেই। পৃথিবীতে মায়ের ভালোবাসা নিঃস্বার্থ। মায়ের ভালোবাসা একদিনে প্রকাশ করা কখনোই সম্ভব নয়। মা ডাকতে গেলেই মনে হয় পুরো পৃথিবী হাতের কাছে; যত শান্তি আছে এখানেই সীমাবদ্ধ। মা শব্দের মধ্যেও লুকিয়ে আছে হাজার অজানা রহস্য। মা শব্দটি আমাদের জন্য শক্তি। যেদিকে তাকাই মায়ের মতো ভালোবাসা আর কোথাও পাওয়া যাবে না। সবার মতো আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশজুড়ে রয়েছে আমার মা। আমার মাকে ছাড়া আমি আমার জীবনের এক মুহূর্ত চিন্তা করতে পারি না। আমি আমার মাকে ভীষণ ভালোবাসি। পৃথিবীর যত কিছু আছে সবচেয়ে সেরা উপহার আমার মা। মা-ই আমার প্রথম শিক্ষক। পৃথিবী থেকে যেদিন বাবা না ফেরার দেশে চলে গেলেন সেদিন আমার মাকে দেখেছি কীভাবে বাবার ভূমিকা পালন করতে। আমার মা হয়ে উঠেছেন বাবা। শত প্রতিকূলতার মাঝেও তিনি শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরে রেখেছেন। এক মুহূর্তের জন্য বুঝতে দেয়নি বাবার শূন্যতা। কেবল মা-ই পারেন এমন অভাব পূরণ করতে। আমার মা একজন স্কুল শিক্ষিকা। আমার মায়ের সুন্দর বাচনভঙ্গি, পড়ানোর সহজাত ক্ষমতা, তার অসীম স্নেহ ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের জন্য তার ছাত্রছাত্রীরা সবাই তাকে ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে। এটা দেখে আমার খুব ভালো লাগে। মায়ের জন্য আমার গর্ব হয়। তাই আমি সবসময় চেষ্টা করি মাকে অনুসরণ করতে যাতে আমি মায়ের মতো সবার ভালোবাসা পেতে পারি। আমার মা-ই আমার অস্তিত্বের শেকড়। তাই তিনিই আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ, প্রিয় ব্যক্তিত্ব।

স্রষ্টা থেকে প্রাপ্ত শ্রেষ্ঠ উপহার 'মা'

হিমেল আহমেদ

শিক্ষার্থী, শহীদ বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারি মহাবিদ্যালয়, হাজারীবাগ, ঢাকা।

শখ আহ্লাদের বয়সে ছোট্ট একটি প্রাণ নিমিষেই এক অপরিচিত সংসারকে আপন করে নেয়। মান-অভিমান ভুলে গিয়ে সবকিছু মানিয়ে নেওয়া নিজ সঙ্গী গড়ে তোলে। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শুরু হয় আরেক নতুন জীবন। তার সব সুখ-দুঃখ সন্তানকে ঘিরেই আবর্তিত হয়।

মা, জীবনের প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে কড়া শাসনের জন্য তার প্রতি বড় বিরক্ত ছিলাম। তবে এখন সেই শাসনের মর্ম বুঝতে পারি। সেই কালের কড়া শাসনের ফলে বর্তমানে এই বিশৃঙ্খল প্রজন্মের মাঝেও আমি নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়াতে পারি। আগে ভাবতাম, আমিই আমার ভালো বুঝি। সেই ধারণা যে নিতান্তই ভুল ছিল, জীবনের এ পর্যায়ে এসে অনুধাবন করছি। মায়ের প্রতিটি বাণী ছিল কল্যাণকর, বর্তমানে অনুরূপ। জেনে-বুঝে, না জেনে কতই না কষ্ট দিই, তবুও তার কোনো অভিমান হয় না। সব অশ্রম্ন হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে যায়! দিনভর কত কত ভাব ব্যক্ত করি। শুধু একটি কথা বলা হয়ে ওঠে না- মা, তোমাকে বড্ড ভালোবাসি। স্রষ্টা থেকে প্রাপ্ত তুমি আমার শ্রেষ্ঠ উপহার।

মায়ের কখনো ক্লান্তি থাকে না

তানজিলা আক্তার

শিক্ষার্থী, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা।

''ভালোবাসি মা' লাইনটা পৃথিবীজুড়ে প্রতিটি সন্তানের মনের অভ্যন্তরে থাকলেও প্রকাশ করা হয়েছে এমন সংখ্যা নিছকই কম। কারণ প্রিয় জননী মাকে ভালোবাসি আমরা প্রতি সেকেন্ডে, প্রতি মুহূর্তে। আলাদা করে প্রকাশ করার পরিবর্তে অনুভবে ভালোবাসতে ভালোবাসি মাকে। জীবনের শত উত্থান পতনের ক্লান্তি সব যেন মমতাময়ী মায়ের স্নিগ্ধ চেহারার কাছে হার মানায়। দূর করে দেয় জমাট বাঁধানো বাইরের দুনিয়ার সব কালবৈশাখী ঝড়ের হাওয়া। হাড়কাঁপানো শীতে শরীরের তাপমাত্রা যখন অনেক বেশি থাকে, মায়ের উৎকণ্ঠা যেন ক্রমশ বেড়ে যায়। সারারাত নির্ঘুম থেকে মাথার কাছে বসে সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া চাওয়ার আকুল আবেদনে সুস্থ হয়ে যায় মায়ের নাড়ি ছেঁড়া ধন। সেবাশুশ্রূষা করে অমানসিক পরিশ্রম করে কোলের সন্তানটিকে স্বাভাবিক করতে মায়ের তুলনা মা কেবল নিজেই হতে পারে। মায়ের গায়ে গন্ধে যেন অন্যরকম একটা নেশা থাকে। যে গন্ধটাকে নিজের সাথে খানিকটা মেখে নিলে মিশে যায় জগতের সব শারীরিক আর মানসিক ক্লান্তি। নাড়ির টানের সাথে মায়ের সাথে থাকে এক অদৃশ্য বন্ধন। সন্তানের বিপদে আগাম বার্তায় ব্যাকুল হয়ে থাকেন তিনি। কোনো সান্ত্বনাই ভুলাতে পারে না তাকে। আবারও শরণাপন্ন হয় সৃষ্টিকর্তার দরবারে। শত অবহেলাতেও সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে এই প্রার্থনাতে মশগুল থাকে মায়াবতী আদুরে মা। বিনিময়ে নিজ স্বার্থের পরিবর্তে একটি শব্দই পাওয়া যায় তাদের শব্দভান্ডারে। ভালো হোক প্রিয় নাড়িছেঁড়া ধনের।

তবে সেই মায়ের কখনো ক্লান্তি থাকে না, নেই তার কোনো অসুখ। তারা চাইলেও দুনিয়াবি অসুখের কাছে হার মেনে দুদিন শয্যাশায়ী হতে পারে না। পারে না সকাল থেকে রাত অবধি থাকা দায়িত্ব পালনে পুঙ্খানুপুঙ্খ তলস্নাশি থেকে বিরত থাকতে। তারা ছোটে, তারা ছোটে। স্বামী, সন্তানকে নিয়ে দুনিয়ায় মহারানি হয়ে সবটা একা হাতে সামলে যায় নিরলসভাবে। চাঁদের আলোর মতো সব সংসারকে আলোকিত করে রাখে।

\হ

মা, আমার বিশ্বাস, আমার শক্তি

হুমাইরা খানম জেরীন

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ।

মা, পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ এবং আস্থার একটি নীড় যেখানে সন্তান বেড়ে ওঠে যত্ন আর ভালোবাসার ছোঁয়ায়। মা, বলে ডাক দিলেই আমরা প্রশান্তি অনুভব করি, নিমিষেই দূরীভূত হয় সারাদিনের ক্লান্তি। সেই ছোটবেলা থেকে মায়ের আঁচলে বড় হয়েছি। এখনও মায়ের সেই আঁচলের গন্ধের লোভ যেন যায় না! ঘর-সংসারের কাজ, সন্তান লালন-পালন, পরিবারের সদস্যদের দেখাশোনা ইত্যাদি কাজ কোনো পারিশ্রমিক ছাড়া, স্বার্থ ছাড়া একাই করেন একজন, আর তিনি হলেন মা। সন্তানের জন্য জীবন যৌবন উজাড় করে দেন একজন মা। মায়ের ভালোবাসা শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত শেষ হয় না। মায়ের তুলনা শুধু মা। একমাত্র মাকে হারানো সন্তান বুঝবে মায়ের শূন্যতা। আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে সব ছোট ছোট অর্জনগুলোতে রয়েছে আমার মায়ের অবদান। মায়ের সমর্থন আর ভালোবাসা আছে বলেই আমি এতদূর এগোতে পেরেছি। 'আমার মা, আমার বিশ্বাস, আমার শক্তি। অনেক বেশি ভালোবাসি মা।' পৃথিবীর সব মা ভালো থাকুক সন্তানের আলয়ে, বৃদ্ধ মায়ের ঠিকানা না হোক কোনো বৃদ্ধাশ্রমে।

প্রবাসে মা নেই

মো. জুবাইল আকন্দ

শিক্ষার্থী, ইম্পেরিয়াম ইন্টারন্যাশনাল কলেজ, মালয়েশিয়া।

পৃথিবীতে তুলনাহীন ভালোবাসার এক মহাসমুদ্রের নাম মা। মা পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ডাক। মা ডাকেই মানুষ খুঁজে পায় সীমাহীন শান্তি। মা-ই প্রতিটি সন্তানের নিরাপদ শান্তির ঠিকানা। মায়ের ভালোবাসা অতুলনীয়। মাকে ছাড়া মনে কোনো প্রশান্তি আসে না। মাকে ছাড়া সব কিছুই যেন ফাঁকা ফাঁকা মনে হয়। হৃদয়, জগৎ, সংসার পার্থিব সবকিছু হয়ে যায় অন্ধকার। সেই মাকে ছাড়া প্রবাসে কেটে গেল অনেকদিন। শুধু তাই নয়, মহাখুশির দিন ও আনন্দের দিন পবিত্র ঈদসহ সব আয়োজন এখন তাকে ছাড়া। আগে মা বলত যখন বাড়ি ছেড়ে বাইরে থাকবে তখন বুঝবে আমি কী! আসলেই প্রবাসে আসার পর বুঝতে পারছি আমার জন্য মা কী ছিল। বাড়িতে থাকতে ভাত খেয়ে পেস্নটটা পর্যন্ত ধরতাম না। আর এখন বাজার করা থেকে শুরু করে রান্না, কাপড় ধোয়া, পড়াশোনা এমনকি চাকরি করতে হয়। দেশে থাকতে কথায় কথায় বিরক্ত হতাম মায়ের ওপরে। একটু বোঝার চেষ্টা করিনি। আর এখন বুঝতেছি মায়ের মূল্য কতখানি। প্রতিটি আনন্দক্ষণে ভেসে ওঠে আমার মায়ের প্রতিচ্ছবি। বিষণ্নতায় আমার মন বোবা কান্না করে নীরবে নিভৃতে। প্রবাসে এমনিতেই একা সময় কাটাতে হয়। বিষণ্নতার ছোঁয়া প্রতিটি মুহূর্তে হৃদয়ে আঘাত হানে নীরবে। কাউকে বোঝানোর ভাষা নেই। একই যন্ত্রণা মনে, হৃদপিন্ড ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরে। তবুও নীরবে সহ্য করতে হয়। রাতে মায়ের কথা মনে হলে হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। একাকিত্ব গ্রাস করে আমাকে, তখন ভীষণ কান্না পায়। আমি কাঁদি আর আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজেকে সান্ত্বনা দেই, প্রবাসে মা নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে