সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিকদের নিয়োগের দাবীতে ৭২ঘন্টার আল্টিমেটাম

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
  ১৮ মে ২০২৫, ২১:৩০
আপডেট  : ১৮ মে ২০২৫, ২১:৪৬
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিকদের নিয়োগের দাবীতে ৭২ঘন্টার আল্টিমেটাম
ছবি : যায়যায়দিন

দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ভুগর্ভে কর্মরত শ্রমিকদের নিয়োগ সংক্রান্ত সাব কন্টাক্ট বাতিল করে, সরাসরি খনির মুল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চিনা কোম্পানীর অধিনে নিয়েগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন খনি শ্রমিকরা।

দাবী পুরনের জন্য ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম ঘোষনা করেছেন তারা। ৭২ ঘন্টার মধ্যে এই দাবি পূরণ না হলে, কাঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী দিয়েছেন।

1

রোববার (১৮মে) বেলা ১১টায় খনির প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন ভুগর্ভস্থ খনি শ্রমিকরা। মিছিল শেষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা এ দাবি উত্থাপন করে আল্টিমেটাম ঘোষনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শ্রমিক নেতা শহিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, বড়পুকুরিয়া খনির কারনে তাদের বাড়ি ঘর, ফসলি জমি, কর্মসংস্থান সবকিছু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ২০ গ্রামের বাসিন্দাদের প্রত্যেক পরিবার থেকে খনিতে চাকুরি দেয়ার কথা থাকলেও, সেই দাবী পুরোপুরি পুরন হয়নি। তাদের কে খনির মূল ঠিকাদার সিএমসি,এক্সএমসি এর সাথে চুক্তিবদ্ধ না করে সাব কন্টাক্টর জেএসএমই এর সাথে চুক্তি বদ্ধ করা হয়। আগামী ৪/৫ মাস পর চিনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জেএসএমই এর কাজের মেয়াদ শেষ হবে। এসময়ের মধ্যে ভুগর্ভস্থ শ্রমিকদের জীবন ঝুঁকির কোন দায়ভার নিবেনা মর্মে গত ৬ মে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জেএসএমই শ্রমিকদের জানিয়েছে। এ ঘোষণার পর থেকে ঠিকাদারের আওতাভুক্ত খনির ১৭৪ জন শ্রমিক কর্মবিরতি পালন করছে। কিন্তু খনি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত শ্রমিকদের সাথে কোন প্রকার আলোচনা করছেন না।

সংবাদ সম্মেলন তিনি শ্রমিকদের দূরাবস্থার কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা খনির অভিজ্ঞ শ্রমিক। ৫/৭ বছর থেকে খনিতে কর্মরত আছি। আমাদের অন্য কোন সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের বয়সও নেই। এদিকে জমিজমা, ক্ষেত খামার সবই খনির কারনে ভূমি অবনমনে জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। খনি কর্তৃপক্ষ বলেছিলো খনি যতদিন থাকবে আমাদের চাকুরিও ততোদিন থাকবে। তাহলে আজ কেন আমাদের চাকুরি থাকবেনা বলে জানাচ্ছে।

আমরা জীবনেরা ঝুঁকি নিয়ে ১৪০০ফিট মাটির নিচে গিয়ে কাজ করি। চুক্তি অনুযায়ী কোন শ্রমিক দুর্ঘটনার শিকার হলে তার পরিবার আর্থিক ক্ষতি পূরণ পাবে। কিন্তু চুক্তির মেয়াদ ৫ মাস বাঁকি থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিএসএমই কোন ক্ষতিপূরণ দিবেনা বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। তাহলে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কি করে কাজ করব?

এসময় তারা জেএসএমই এর সাথে সাব কন্টাক্ট বাতিল করে মূল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এক্সএমসি কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে নিয়োগের দাবি করেন। আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে খনি কর্তৃপক্ষ কোন উদ্যোগ না নিলে কঠোর আন্দোলনে যাবেন বলে ঘোষণা করেন শ্রমিকরা।

এ বিষয়ে কথা বললে খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) খান মো. জাফর সাদিক জানান, খনির ভূগর্ভে টানেল তৈরি জন্য মূল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এক্সএমসি, সিএমসিকে চুক্তি দেয়া হয়। তাদের কাজের কিছু অংশ জেএসএমই কে সাব কন্টাক্ট দিয়েছে। এই কাজ শেষ হতে আনুমানিক আর ছয় মাস বাঁকি রয়েছে।

তিনি বলেন, কাজ শেষ হলে ওই ঠিকাদারের চাইনিজ কর্মীরা চলে যাবে। যেহেতু কাজ শেষ, তাহলে ওই ঠিকাদারের আওতায় থাকা বাংলাদেশি শ্রমিকরা কিভাবে থাকবে। তারপরও আমরা তাদেরকে বাকি কাজ শেষ করতে বলেছি। যেহেতু তারা অভিজ্ঞ এবং আমাদেরই এলাকার তাই পরবর্তীতে নতুন কোন কাজের সুযোগ হলে অবশ্যই তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলে তিনি জানান।

তবে তিনি বলেন , শ্রমিকরা দুর্ঘটনার শিকার হলে ক্ষতি পূরণ পাবেনা এটি সত্য নয়।

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, মূল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিএমসি এক্সএমসি তাদের কাজের কিছু অংশ জেএসএমই কে সাব কন্টাক্ট দিয়েছে। এই কাজের কোন মেয়াদ হয়না। কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত তাদের চুক্তি। শ্রমিকদের দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণের বিষয়ে তিনি বলেন, শ্রমিকদের ক্ষতি পূরণ দেয়া হবেনা এই দাবি সত্য নয়। কাজ করতে এসে কেউ দুর্ঘটনার শিকার হলে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ পাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে