বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
বাল্যবিয়ে বন্ধে সচেতনতা

নারী শিক্ষার্থীদের ভাবনা

বাল্যবিয়ে একটি গুরুতর সামাজিক সমস্যা- যা শিশুর অধিকার লঙ্ঘন করে এবং তাদের ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়। সাধারণত দারিদ্র্য, অশিক্ষা এবং সামাজিক কুসংস্কার বাল্যবিয়ের প্রধান কারণ। অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের শারীরিক ও মানসিকভাবে মা হওয়ার জন্য প্রস্তুত না থাকায় গর্ভকালীন জটিলতা এবং শিশুমৃতু্যর ঝুঁঁকি বাড়ে। এছাড়া, তারা শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়ে এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ হারায়। বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন থাকলেও এর সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়ায় সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। সচেতনতা বৃদ্ধি, শিক্ষার প্রসার এবং কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব। এজন্য পরিবার, সমাজ এবং সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এসব উলিস্নখিত বিষয় নিয়েই নারী শিক্ষার্থীদের সেই ভাবনাগুলোই তুলে ধরেছেন, চট্টগ্রাম কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী- মোহাম্মদ এনামুল হক
  ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
নারী শিক্ষার্থীদের ভাবনা
নারী শিক্ষার্থীদের ভাবনা

বাল্যবিয়ে বন্ধ হোক, ভবিষ্যৎ হোক আলোকিত

তানজিনা আক্তার

1

শিক্ষার্থী, অনার্স ৪র্থ বর্ষ, বাংলা বিভাগ,

চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ

বাল্যবিয়ে একটি ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি, যা সমাজের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সি মেয়ের বিয়ে বাল্যবিয়ে হিসেবে বিবেচিত হয়। এর মূল কারণগুলো হলো দারিদ্র্য, কুসংস্কার, নারী শিক্ষার অবহেলা, ইভটিজিং এবং সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা। বাল্যবিয়ের ফলে মেয়েরা মানসিক ও শারীরিকভাবে পরিপক্কতা অর্জন করতে পারে না, যা পরিবারে অশান্তি, মাতৃমৃতু্য, শিশুমৃতু্য এবং পুষ্টিহীনতার মতো ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে। অপরিপক্ক বয়সে মা হওয়ার ফলে শিশুর যথাযথ যত্ন ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট যথার্থই বলেছেন, 'আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি সভ্য জাতি উপহার দেব।' তাই বাল্যবিয়ে বন্ধে নারী শিক্ষার প্রসার, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি। পরিবার, সমাজ এবং সরকারের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাল্যবিয়ে রোধ সম্ভব।

শিক্ষাই পারে বাল্যবিয়ে

প্রতিরোধ করতে

সাইমা হাসান

শিক্ষার্থী, অনার্স ২য় বর্ষ, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ।

বাল্যবিয়ে একটি প্রথাগত সামাজিক সমস্যা, যা নারীর অধিকার ও স্বাধীনতাকে হরণ করে। সমাজে এখনো কন্যাসন্তানকে 'দায়' মনে করে অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়, যা তাদের শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। বাল্যবিয়ের প্রধান কারণ শিক্ষার অভাব। শিক্ষা মানুষকে সচেতন করে তোলে, অধিকার সম্পর্কে জানায় এবং কুসংস্কার দূর করতে সাহায্য করে।

শিক্ষিত মেয়েরা নিজেদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সচেতন হয় এবং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে। তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে শেখে এবং নিজের মতামত প্রকাশের ক্ষমতা অর্জন করে। একইসঙ্গে শিক্ষিত অভিভাবকরাও বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে সচেতন থাকেন এবং সন্তানদের সঠিক পথে পরিচালিত করেন।

অতএব, বাল্যবিয়ে রোধে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষা নারীদের স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করে এবং জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে তুলে নিতে সক্ষম করে।

বাল্যবিয়ে একটি ভয়াবহ

সামাজিক ব্যাধি

কাজী মালিহা আকতার

শিক্ষার্থী, অনার্স প্রথম বর্ষ,

উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ

বাল্যবিয়ে সমাজের জন্য একটি মারাত্মক সমস্যা, যা ছেলে-মেয়ে উভয়ের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার ফলে মেয়েরা শারীরিক ও মানসিকভাবে নানা জটিলতায় ভোগে। পরিপক্কতার অভাবে সংসারে কলহ বৃদ্ধি পায় এবং মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। অনেক কিশোরী বিয়ের পর পড়াশোনা বন্ধ করতে বাধ্য হয়, যা তাদের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়। অল্প বয়সে মা হওয়ার কারণে শিশুর যথাযথ যত্ন নিতে তারা ব্যর্থ হয়, যার ফলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।

বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সমাজের সকল স্তরের মানুষের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। সচেতনতা বৃদ্ধি, শিক্ষার প্রসার এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে এই সামাজিক ব্যাধি নির্মূল করা সম্ভব।

বাল্যবিয়ে সমাজের অগ্রগতির অন্তরায়

ঋতু দে

শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ।

বাল্যবিয়ে এখনো বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল ও বস্তিতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। এর প্রধান কারণ নিরক্ষরতা, দারিদ্র্য, নিরাপত্তাহীনতা, কুসংস্কার, ইভটিজিং এবং সামাজিক চাপ। অনেক অভিভাবক ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা ও যৌতুক এড়াতে অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিতে বাধ্য হন।

এই প্রথার ফলে মেয়েরা প্রজনন ঝুঁকি, স্বাস্থ্যঝুঁকি, রক্তস্বল্পতা এবং শিশুমৃতু্যর মতো মারাত্মক সমস্যার শিকার হন। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, অল্প বয়সে গর্ভধারণ মায়েদের স্বাস্থ্যকে চরম ঝুঁঁকিতে ফেলে। যদিও বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন রয়েছে এবং কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে, তবুও এটি পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।

শিক্ষার প্রসার, নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং বিয়ে নিবন্ধকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে। সরকারের পাশাপাশি সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও জনসচেতনতা ছাড়া এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।

বাল্যবিয়ে কিশোরীদের

মৃতু্যঝুঁঁকি বাড়ায়

উম্মে সালমা

শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ।

বাল্যবিয়ে বাংলাদেশের জন্য একটি ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি। অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার ফলে কিশোরীরা মাতৃমৃতু্য ঝুঁকি, অপরিণত গর্ভধারণ, প্রসবকালীন জটিলতা, শিশুমৃতু্য এবং স্বাস্থ্যঝুঁঁকির মতো সমস্যার সম্মুখীন হয়। এছাড়া, অনেক মেয়ে স্কুল ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়, যা তাদের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়। বাল্যবিয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ায় এবং তাদের স্বাবলম্বী হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করে।

এই সমস্যা সমাধানে সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। পরিবার, বিদ্যালয় এবং কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি করে কিশোরীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। একটি সচেতন সমাজই পারে মেয়েদের জন্য নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে।

সাধারণত দারিদ্র্য, অশিক্ষা এবং সামাজিক কুসংস্কার বাল্যবিয়ের প্রধান কারণ। অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের শারীরিক ও মানসিকভাবে মা হওয়ার জন্য প্রস্তুত না থাকায় গর্ভকালীন জটিলতা এবং শিশুমৃতু্যর ঝুঁঁকি বাড়ে। এছাড়া, তারা শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়ে এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ হারায়। বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন থাকলেও এর সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়ায় সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। সচেতনতা বৃদ্ধি, শিক্ষার প্রসার এবং কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে