বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

প্রাণিবিদ্যা চর্চায় নতুন উদ্দীপনা

লামিয়া আক্তার
  ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
প্রাণিবিদ্যা চর্চায় নতুন উদ্দীপনা
প্রাণিবিদ্যা চর্চায় নতুন উদ্দীপনা

বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে ১১তম প্রাণিবিদ্যা অলিম্পিয়াড ২০২৪-এর ঢাকা অঞ্চলের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই অলিম্পিয়াডে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে এ প্রাণিবিদ্যা অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়।

অলিম্পিয়াডে অনলাইনে প্রিরেজিস্ট্র্রেশন সম্পন্ন করে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত দিন ভেনু্যতে উপস্থিত হয়ে প্রতিযোগিতার জন্য চূড়ান্ত রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে।

1

অনুষ্ঠানটির আয়োজন ও উপস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক তাজুল ইসলাম শামিম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সভাপতির সাধারণ সম্পাদক ড. হামিদা খাতুন, প্রফেসর ড. সগীর আহমেদ, ঢাকার আঞ্চলিক সম্পাদক প্রফেসর ড. রওশন আরা বেগম, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর তামান্না বেগম, উপাধ্যক্ষ ড. ফরিদা ইয়াসমিন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. আফরোজা সুলতানা এবং প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের প্রাণিবিদ্যার শিক্ষার্থীগণ।

আয়োজনের শুরুতে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের উপস্থিতিতে র?্যালি ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে ৩০ নম্বরের বহুনির্বাচনী পরীক্ষার আয়োজন করা হয় যেখানে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.৫ নম্বর কর্তন করা হয়।

দুইটি গ্রম্নপে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক-গ্রম্নপ (উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়) এবং খ-গ্রম্নপ (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়)। 'ক' গ্রম্নপের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নরসিংদী সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাদিয়া হক জান্নাতি এবং রানার্স আপ হয়েছেন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মহসিন মলিস্নক। এছাড়াও 'খ' গ্রম্নপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী হুরায়রা হাবিব এবং রানার্সআপ হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আফিয়া তাফান্নুন নাবিলা। বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেন সভাপতি হামিদা খাতুন, প্রফেসর ড. আফরোজা সুলতানা ও আহ্বায়ক প্রফেসর ড. রওশন আরা বেগম।

একইদিনে ফলাফল প্রকাশের পাশাপাশি সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট বিতরণ করা হয়েছে। বিজয়ীদের পাশাপাশি অংশগ্রহণকারী সবার জন্য ছিল 'অংশগ্রহণকারীর সনদ'। অংশগ্রহণকারী সবার জন্য ছিল দুপুরের খাবারের আয়োজন এবং ফলাফল তৈরি হওয়া পর্যন্ত কলেজ অডিটোরিয়ামে প্রাণিবিদ্যা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভা এবং সেশন আয়োজনের ব্যবস্থা ছিল। শিক্ষার্থীরা উক্ত সেশনে প্রাণিবিদ্যা বিষয়ক তাদের জ্ঞান ও সৃজনশীলতাকে বৃদ্ধি করতে পেরেছে।

অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব শুরু হয় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে। অতঃপর বাংলাদেশ প্রাণিবিদ্যা সমিতির সভাপতি হামিদা খাতুনকে ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়ে বরণ করে নেয় অত্র কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. আফরোজা সুলতানা। অন্য অতিথিদের ও ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেয় কলেজের সম্মানিত শিক্ষকরা। এ পর্বে গুরুত্বপূর্ণ একটি সেশন পরিচালনা করেন প্রাণিবিদ্যা বিষয়ক গবেষক আশিকুর রহমান সৌমিক। তিনি তার আলোচনা সেশনে আলোকচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণিদের বিলুপ্তির ঘটনা তুলে ধরেন। মেছো বিড়াল, মেছো বাঘ, বুনে হাসসহ অনেক প্রজাতির পাখি বিলুপ্তির পেছনে তিনি মানবসৃষ্ট কারণকেই দায়ী করেছেন। ঢাকা শহরে ২০০০-এর বেশি অবৈধ ইটের ভাটা স্থাপন পরিবেশের ওপর ঝুঁকি সৃষ্টি করছে বলে তিনি মনে করেন। তরুণ প্রাণিবিদের তিনি নিজেদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে এবং ধরিত্রীর সুস্থতায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে আহ্বান করেছেন।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে অতিথিগণ তাদের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন। সবাই তাদের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রাণিবিদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। এ সময় বাংলাদেশ প্রাণিবিদ্যা সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. সগীর আহমেদ তার আলোচনায় বায়োটেকনোলজির উপকারী দিক সম্পর্কে ব্যক্ত করেন। তরুণ প্রাণিবিদদেরকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাণিকে ভালোবাসবে, পরিবেশকে ভালোবাসবে, সমাজকে ভালোবাসবে, সর্বোপরি দেশকে ভালোবাসবে।

আহ্বায়ক প্রফেসর ড. রওশন আরা বেগম বলেন, প্রাণিদেরও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে।

কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর তামান্না বেগম কলেজ ক্যাম্পাসে একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা পৃথিবীকে বদলে দিতে পারব না, তবে আমরা আমাদের চারপাশকে বদলে দিতে পারব, নিজ নিজ জায়গা থেকে ছোট ছোট উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে।

আয়োজকরা জানান, এবারের অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারীদের অসাধারণ পারফরম্যান্স প্রাণিবিদ্যা শিক্ষার প্রতি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিজয়ীদের মধ্যে সনদ ও আকর্ষণীয় পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে তাদের মধ্যে আগামীতে সম্ভাবনাময়ী মনোভাব গড়ে উঠবে।

অনুষ্ঠানের শেষাংশে অতিথিরা প্রাণিবিদ্যা চর্চার গুরুত্ব ও সম্ভাবনার ওপর আলোকপাত করেন এবং ভবিষ্যতে এমন উদ্যোগ আরও প্রসারিত করার আহ্বান জানান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে