সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২
পাঠক মত

নিরাপদ খাদ্য এবং আমাদের দায়িত্ব

  ১৮ আগস্ট ২০২০, ০০:০০
নিরাপদ খাদ্য এবং আমাদের দায়িত্ব

বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য জরুরি হলেও তার চেয়ে বেশি জরুরি নিরাপদ খাদ্য। অনিরাপদ খাদ্য শুধু স্বাস্থ্যের ঝুঁকিরই কারণ নয়, বরং দেহে রোগের বাসা বাঁধারও অন্যতম কারণ। খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার দ্বার পর্যন্ত খাদ্যের গুণগত মান নিশ্চিত রাখা একটি বড় সরকারি ও বেসরকারি দায়িত্ব। নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি বর্তমানে বেশ আলোচিত। নানাভাবে খাদ্যে ভেজাল ও কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে। মানুষ এ খাবার গ্রহণ করছে। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে। মানুষের সুস্থ জীবনের জন্য নিরাপদ খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই। অর্থনীতি, নিরাপদ খাবার ও উপযুক্ত পরিবেশ যে কোনো উন্নয়নের উপাত্ত বৃদ্ধি করে, এগুলো এড়িয়ে টেকসই উন্নয়ন অর্জন আদৌ সম্ভব নয়। বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্য উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে, পাশাপাশি জনসংখ্যাও তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু খাদ্যের গুণগত পুষ্টিমান ও খাদ্যের নিরাপত্তার বিষয়টি অনেকটাই উপেক্ষিত রয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে অভিযান চললেও জরিমানা আদায়ের মাধ্যমেই তা থেমে যায়। বর্তমানে পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই নিরাপদ খাদ্যকে ভোক্তার অধিকার হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এর ব্যত্যয় দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশও ব্যতিক্রম নয়। আমাদের দেশে ২০০৯ সালে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন প্রণীত হয় এবং ২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইন প্রণীত হয়। কিন্তু এর সুষ্ঠু আইন প্রয়োগ না হওয়ায় এবং আমাদের সচেতনতার অভাবে অনিরাপদ খাদ্যের বেড়াজালে পড়তে হচ্ছে আমাদের। নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এখন খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণের প্রত্যেকটি ধাপেই খাদ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানো হয়ে থাকে। এসব বিষযুক্ত খাবার খেয়ে প্রতি মুহূর্তেই আমরা ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, প্রতি বছর প্রায় ৬০ কোটি মানুষ দূষিত খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়। এ কারণে প্রতি বছর মারা যায় ৪ লাখ ৪২ হাজার মানুষ। এ ছাড়া ৫ বছরের চেয়ে কম বয়সী শিশুদের ৪৩ শতাংশই খাবারজনিত রোগে আক্রান্ত হয়, মধ্যে প্রতি বছর প্রাণ হারায় ১ লাখ ২৫ হাজার শিশু। তাই আমাদের সবার উচিত নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা। প্রাণিজগতে নিরাপদ পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতকরণে একটি দক্ষ ও কার্যকর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করে খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, আমদানি-রপ্তানি, মজুদ, সরবরাহ ও বিপণন বিষয়ে নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ সালে প্রণীত আইনের যথার্থ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করা হলে সুস্থ-সবল সমৃদ্ধ জাতি গঠনের সফলতা ও চেতনার মাত্রা অসাধারণভাবে সফল হতে পারে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে রাষ্ট্রের কর্ণধারদের এগিয়ে আসার বিকল্প নেই বলে অভিজ্ঞমহল ও ভুক্তভোগীমহলের ধারণা। নিরাপদ খাদ্য যেমন সবার জন্য প্রয়োজন, তেমনি নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সবাইকে সচেতনতার সঙ্গে স্বীয় দায়িত্ব পালন করতে হবে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য পণ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, সরবরাহ ও বিপণন প্রতিটি পর্যায়ে সচেতনতা প্রয়োজন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব।

আমজাদ হোসেন

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে