বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ কার্যকর উদ্যোগ নিন

নতুনধারা
  ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

'দুর্নীতি' আমাদের দেশে বহুল আলোচিত একটি বিষয়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দুর্নীতির কারণে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। দুর্নীতি থেকে শুরু করে যে কোনো ধরনের অনিয়ম বা অব্যবস্থাপনা পরিলক্ষিত হলে তা নিশ্চিতভাবেই উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। সঙ্গত কারণেই এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্টদের কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা জরুরি।

সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বিশ্বের মধ্যে দুর্নীতির ধারণা সূচকে একধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে 'সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত' দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। যা গতবার ছিল ১২তম। তবে দুর্নীতির এই সূচকে বা স্কোরের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনো অগ্রগতি হয়নি। বাংলাদেশের স্কোর ২৬, গতবারও একই ছিল। চার বছর ধরেই একই স্কোর রয়েছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) পরিচালিত 'দুর্নীতির ধারণা সূচক-২০২১' শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রসঙ্গত বলা দরকার, রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবির প্রধান কার্যালয়ে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দুর্নীতির এই ধারণা সূচকের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক এবং তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের অবস্থান হতাশাজনক। কারণ, ১০ বছর ধরে প্রবণতা হলো স্কোরটি এক জায়গায় স্থবির হয়ে আছে। আমরা মনে করি, যে তথ্য উঠে আসছে তা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ অব্যাহত রাখা। কেননা, দেশ ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে, নানা খাতের উন্নয়ন বিশ্বের কাছে মডেল হচ্ছে, এমতাবস্থায় দেশে দুর্নীতি রোধ না হওয়ারটা অত্যন্ত পরিতাপের। এ ক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার বিকল্প নেই।

এটাও আমলে নেওয়া সমীচীন, বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক বলেছেন, সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা দেখানোর রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলেও সেটি ঠিকমতো কার্যকর হচ্ছে না। আর এর কারণ হিসেবে বলেছেন, যাদের হাতে এই দায়িত্ব, তাদের একাংশই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। আমরা মনে করি, এই ধরনের আলোচনা যখন আসছে, তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে দুর্নীতি রোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য।

স্মর্তব্য যে, এর আগে এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে, দুর্নীতির ভালো স্কোর করার মতো আইনি ও কাঠামোগত সক্ষমতা আছে। কিন্তু প্রয়োগের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার জন্যই স্কোরে এগোতে পারছে না বাংলাদেশ। এছাড়া বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি করেছে। কিন্তু দুর্নীতি থাকার ফলে এর সুফল মানুষ ঠিকমতো পাচ্ছে না- এমন বিষয়ও বারবার উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, উন্নয়নের সুফল দুর্নীতির কাছে বাধাগ্রস্ত হলে তা অত্যন্ত পরিতাপের, যা আমলে নেওয়া জরুরি। দুর্নীতি রোধে কঠোর হতে হবে এবং যারাই এর সফঙ্গ জড়িত থাকুক না কেন তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। চুনোপুঁটি ধরা পড়লেও যদি রাঘববোয়ালরা ছাড় পায়, তবে এর ফল ইতিবাচক হবে না এমন মনে করা অযৌক্তিক নয়। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কেউই ছাড় পাবে না- এমন বিষয়কে সামনে রেখে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করলে এর সুফল পওয়া সম্ভব বলেই আমরা মনে করি। ভুলে যাওয়া যাবে না, পত্রপত্রিকায় এর আগে এমন বিষয়ও উঠে এসেছে যে, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও শিল্পবাণিজ্যসহ প্রায় সব সেক্টরেই দুর্নীতি ছড়িয়ে গেছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক চিত্র আমলে নিতে হবে এবং পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই যে, দুর্নীতি রোধ করতে না পারলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সর্বত্রই- যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সঙ্গত কারণেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক। দুর্নীতি রোধে সীমাবদ্ধতা কী- সেটাকে আমলে নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে দুর্নীতি রোধে 'জিরো টলারেন্স' নীতি গ্রহণ করতে হবে আর তা হতে হবে আইনের শাসনের মাধ্যমে। দুর্নীতির সার্বিক চিত্র আমলে নেওয়া এবং সৃষ্ট পরিস্থিতি অনুধাবন করে দুর্নীতি রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে