বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

বেড়েছে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা সঠিক পদক্ষেপ নিন

  ১০ মে ২০২২, ০০:০০
বেড়েছে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা সঠিক পদক্ষেপ নিন

যতই দিন যাচ্ছে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৮৩০ জন। আর ২০১৯ সালে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান ৯৪৫ জন। ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৪৬৩ জনে। আর ২০২১ সালে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান ২ হাজার ২১৪ জন। ২০২১ সালে আগের বছরের চেয়ে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা ৫০ শতাংশ ও এই দুর্ঘটনাগুলোতে মৃতু্য ৫১ শতাংশ বেড়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৭৫ শতাংশের বয়স ১৪ থেকে ৪৫ বছর। ৪৮ শতাংশ মৃতু্যর কারণ মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনায় আহতদের ৯০ শতাংশই তরুণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় বেশি মৃতু্যর কারণ, যানজটে গণপরিবহণের বিকল্প হিসেবে মোটর সাইকেলের ব্যবহার বাড়ছে। দুই চাকার এই বাহনগুলো দীর্ঘযাত্রার জন্য আদর্শ নয়, ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের (পঙ্গু হাসপাতাল) তথ্য অনুযায়ী, চলতি মে মাসের প্রথম সাত দিনে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় আহত ১ হাজার ৪৭৪ জন সেবা নিয়েছেন। এর মধ্যে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশই মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার শিকার। মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় কেউ হাত বা পা ভাঙলে সুস্থ হতে ৩ থেকে ৯ মাস সময় লাগছে। মোটর সাইকেলের দুর্ঘটনায় রক্তক্ষরণ বেশি হয় এবং পায়ের হাড় বেশি ভাঙে।

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক ও গ্রামীণ সড়কে মোটর সাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে চালকরা নিয়ম মানছেন না। চালক ও আরোহীরা হেলমেট পরেন না। এক মোটর সাইকেলে দুজনের বেশি না ওঠার নিয়মটিও মানা হয় না। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অনিবন্ধিত মোটর সাইকেলও অহরহ চলে। অনেকেরই মোটর সাইকেল চালানোর কোনো প্রশিক্ষণ থাকে না।

দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে মোটর সাইকেলের সহজলভ্যতাকে অন্যতম কারণ বলে মনে করেন সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত মোটর সাইকেল ছিল ১৫ লাখের কম। বর্তমানে নিবন্ধিত মোটর সাইকেলের সংখ্যা প্রায় ৩৬ লাখ। ২০১৬ সাল থেকে প্রতি বছর ৩ লাখের বেশি মোটর সাইকেল নিবন্ধিত হচ্ছে। নিবন্ধিত মোটর সাইকেল ছাড়াও জেলা শহর ও গ্রামীণ এলাকায় অনিবন্ধিত অন্তত ১৫ লাখ মোটর সাইকেল চলে। কোনো দেশে এভাবে মোটর সাইকেল চলে না।

আমরা মনে করি, মহাসড়কে যাত্রী নিয়ে মোটর সাইকেল চালানো সম্পূর্ণভাবে নিরুৎসাহিত করতে হবে। একই সঙ্গে মোটর সাইকেল চালকরা যাতে মানসম্মত হেলমট ব্যবহার করেন এবং ট্রাফিক আইন মানেন, সেটি নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। অনেক সময় দেখা যায়, ফাঁক পেলেই চালকরা মোটর সাইকেল ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। গন্তব্যে যাওয়ার জন্য তাদের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করে। ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে, বাড়ছে হতাহতের পরিমাণ। সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগই কেবল পারে এই দুর্ঘটনা হ্রাস করতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে