জঙ্গিবাদ বড় ধরনের বৈশ্বিক সংকট। সঙ্গত কারণেই এই সংকট নিরসনে সর্বাত্মক উদ্যোগ জারি রাখা অপরিহার্য। প্রসঙ্গত বলা দরকার, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। এ সময় তাদের গুলিতে দুই পুলিশ সদস্যও নিহত হন। পরে অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হন। ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় মামলা করে পুলিশ। এমন বিষয়ও লক্ষণীয় যে, এই ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে গুটিয়ে গেলেও বিভিন্ন সময়ে জঙ্গিদের ফের সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা দেখা গেছে। আমরা মনে করি, ভয়াবহ ও নিন্দনীয় সেই জঙ্গি হামলার ঘটনা কোনোভাবেই যেমন ভুলে যাওয়ার নয়- তেমনিভাবে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সর্বাত্মক সতর্কতা ও উদ্যোগ বজায় রাখতে হবে।
সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলা মামলার পেপার বুক প্রস্তুত হয়েছে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। এটাও সামনে এসেছে যে, দ্রম্নত হাইকোর্টের শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি জানিয়েছেন, চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি যেন দ্রম্নত নিষ্পত্তি করা যায়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমরা মনে করি, এই মামলার দ্রম্নত নিষ্পত্তির পাশাপাশি, কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী দেশকে যেন অস্থিতিশীল না করতে পারে সেই লক্ষ্যে পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে। তারা যেন সংঘটিত হতে না পারে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।
এটা ভুলে যাওয়া যাবে না, হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ ওই হামলার পর কেবল মাদ্রাসাপড়ুয়া বা গরিব ঘরের ছেলেরাই নয়, নামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়া ধনী পরিবারের সন্তানরাও বাড়ি থেকে পালিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে জঙ্গিবাদের মতো ভয়ংকর পথে জড়ানোর তথ্যও সামনে এসেছিল। এ ছাড়া সরকার তথা প্রশাসনও জঙ্গিবাদ দমনে কঠোর হয়েছে। তাই আমরা বলতে চাই, এই মামলা নিষ্পত্তির পাশাপাশি, কোনোগোষ্ঠী যেন তাদের অপচেষ্টার মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রম চালাতে না পারে, দেশে যেন জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে- সেটি নিশ্চিত করতে সামগ্রিক পদক্ষেপ জারি রাখতে হবে।
বলা দরকার, দেশে তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন হয়েছে। অনলাইনে নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মানুষের জীবনযাপনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে সোশ্যাল মাধ্যম তথা অনলাইন তৎপরতা। কেনাকাটা থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রয়োজনে এখন মানুষ অনলাইনের দারস্থ হয়। ফলে জঙ্গিরা যেন অনলাইনেও তাদের কার্যক্রম চালাতে না পারে, কিংবা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে না পারে সেদিকেও সজাগ থাকতে হবে। এটা মনে রাখাতে হবে যে, হলি আর্টিজান হামলার পর নানা বিষয় সামনে এসেছিল। আলোচনা আসে, ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ুয়া, নামকরা বেসরকারি বিশ্ব বিদ্যালয়ের সচ্ছল পরিবারের ছেলেরা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। এমনকি অপরাধ বিজ্ঞানীরা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েও বেশ হিমশিম খেয়েছেন। কারণ সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন কে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হবে। ফলে দেশে জঙ্গিবাদ নির্মূলে ব্যাপকভাবে সজাগ থাকা ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখার বিকল্প নেই।
আমরা এ কথা বলতে চাই, দেশবিরোধী জঙ্গি চক্রের মূলোৎপাটনই জনগণ প্রত্যাশা করে। ফলে জঙ্গিবাদ সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি এমন নারকীয় ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া যাবে না। এটাও স্মর্তব্য যে, সরকার জঙ্গিবাদকে সরকার কঠোর হাতে দমন করেছে। তদুপরি মাঝে মাঝেই জঙ্গিরা তৎপর হতে চেষ্টা করছে- এমন খবর পত্রপত্রিকায় আসে, যা এড়ানো যাবে না। দেশের কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার উদ্ভব হলে তা কঠোর হাতে দমন করতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, হলি আর্টিজানে ভয়াবহ ও কলঙ্কজনক হামলার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি। কারণ এটা মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়। পাশাপাশি অবস্থানই এ দেশের মানুষের সংস্কৃতি। ফলে এই বিষয়গুলোকে আরো দৃঢ় করতে হবে। যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি রুখে দিতে হবে। কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে দেশ থেকে জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন হবে- এমনটি প্রত্যাশিত।