নানামুখী চাপে আজ মধ্যবিত্তরা অস্তিত্ব সংকটে। দিশেহারা অবস্থা বলা চলে। অথচ বাংলাদেশের অভু্যদয়ে এই মধ্যবিত্তরাই সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছিল। শুধু মুক্তিযুদ্ধ নয়, এ দেশের সব সামাজিক রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনে, সমাজ পরিবর্তনে মধ্যবিত্ত শ্রেণি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে এসেছে। ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভু্যত্থান, সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়লাভ, গৌরবময় মহান মুক্তিযুদ্ধ- প্রতিটি ক্ষেত্রেই মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে মধ্যবিত্ত শ্রেণির অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে- তারা আর আগের মতো সমাজে বিশেষ ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারছে না। এক ধরনের উন্নাসিকতা, গাছাড়া ভাব নিয়ে কোনোভাবে দিন পার করছে যখন তারা। নানামুখী চাপে পিষ্ট, বিপর্যস্ত, নাকাল মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ ধীরে ধীরে মুক্ত চিন্তাচেতনার পথ থেকে সরে ভিন্ন পথের অনুসারী হচ্ছে। এটা গোটা সমাজকাঠামোতে প্রতিক্রিয়াশীলতার বিকাশ ঘটাতে সহায়ক হয়ে উঠেছে- যা কোনোভাবেই কাম্য কিংবা প্রত্যাশিত হতে পারে না। অতএব, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি চলমান রাখার স্বার্থে মধ্যবিত্ত শ্রেণির ঘাড় থেকে যাবতীয় চাপের বোঝা হালকা করার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে। এ নিয়ে অবহেলা কিংবা এড়িয়ে যাওয়ার ফলাফল খারাপ হবে নিঃসন্দেহে। ১৯৭৮ সালে অর্থনৈতিক সংস্কার শুরু হওয়ার পর থেকেই চীনের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা শুরু। পরের চার দশকের মধ্যে চীন বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বে সেই চীনেই এখন সবচেয়ে বেশি মধ্যবিত্ত। চীনের এই অগ্রযাত্রার পেছনে বড় ভূমিকা মধ্যবিত্তের। চীনের উন্নয়নে মধ্যবিত্তের ভূমিকা একাধিক গবেষণা রয়েছে। চীনের বাড়তে থাকা মধ্যবিত্তই দেশটির ভবিষ্যৎ নির্ধারক। অর্থনৈতিক উন্নয়নে মধ্যবিত্তের ভূমিকা বা গুরুত্ব কতটা? অর্থনীতিতে নোবেল জয়ী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও এস্থার দুফলো ২০০৭ সালে বিশ্বের মধ্যবিত্ত শ্রেণি নিয়ে একটি গবেষণা করেছিলেন। অর্থনৈতিক উন্নয়নে তারা মধ্যবিত্তের তিনটি ভূমিকার কথা বলেছিলেন। যেমন : ১. উদ্যোক্তা সাধারণত মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকেই বেশি আসে। তারা সমাজে উৎপাদনশীলতা বাড়ায় ও কর্মসংস্থান তৈরি করে। ২. মধ্যবিত্ত মূল্যবোধ মানবপুঁজি আহরণ ও সঞ্চয়ের ওপর জোর দেয়- যা অর্থনীতিক উন্নয়নের প্রধান উপকরণ। ৩. মধ্যবিত্তরা দরিদ্রদের তুলনায় বেশি ভোগ করে এবং একটু বেশি গুণগত মানের পণ্য বা সেবা পেতে কিছুটা বেশি খরচ করতেও রাজি থাকে। এর মাধ্যমে মধ্যবিত্তরা বাজারে যে চাহিদা সৃষ্টি করে, তা বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়তা করে। গবেষক ও অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, মধ্যবিত্তরা অধিকতর ভালো শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায়ও বড় ভূমিকা পালন করে। কেননা, দরিদ্রদের তুলনায় তারা ভালো সরকারি সেবা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে আরও বেশি জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা দাবি করতে পারে। প্রবৃদ্ধি বাড়ায়, এমন সব নীতিকেও তারা সমর্থন দেয়। মধ্যবিত্তরাই অভ্যন্তরীণ বাজার বড় করে। মধ্যবিত্ত কারা, এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। তবে আয়ের দিক থেকে বিশ্বের মানুষকে সাধারণত পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন: দরিদ্র, স্বল্প আয়ের মানুষ, মধ্য আয়ের মানুষ, উচ্চ মধ্যম আয়ের ও উচ্চ আয়ের মানুষ। কোভিড মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। অর্থনীতির মন্দা বিশ্বব্যাপী জীবনযাত্রার মান কমিয়ে দিয়েছে। আয় কমে যাওয়ায় বিশ্বের মধ্যবিত্তের বড় অংশই দরিদ্র শ্রেণিতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মধ্যবিত্তের বাস পূর্ব এশিয়ায়, এরপরেই আছে দক্ষিণ এশিয়া। পূর্ব এশিয়ার বড় দেশ চীন এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত। এই দুই দেশেই মধ্যবিত্তের বসবাস বেশি। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন ২০১৫ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। তখনকার হিসাবে বাংলাদেশের ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠী বা ৩ কোটি ৫৮ লাখ মানুষ ছিল মধ্যবিত্ত। গবেষণায় বলা হয়েছিল, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মধ্যবিত্ত হবে। সেই গবেষণায় আরও বলা হয়েছিল, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ৯ শতাংশ মধ্যবিত্ত ছিল। প্রায় দুই দশক পরে মধ্যবিত্তের হার দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। এ সময়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশে দারিদ্র্য বিমোচনও দ্রম্নত হয়েছে। উন্নয়ন টেকসই হয়েছে। তবে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ডয়েচে ভেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিনায়ক সেন বলেছেন, মধ্যবিত্ত বলতে আমরা আসলে বুঝি যারা দারিদ্র্য রেখার ওপর আছে। আয়ের দিক থেকে ২ থেকে ৪ ডলারের মধ্যে যারা, তারা হচ্ছে মধ্যবিত্ত। আমাদের প্রেক্ষাপটে যেসব পরিবারের আয় ৪০ থেকে ৮০ হাজারের মধ্যে, তাদের আমরা মধ্যবিত্ত বলতে পারি। এই হিসাবে কোভিড পরিস্থিতির আগে বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত প্রায় ৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বোস্টন কনসালটিং গ্রম্নপ (বিসিজি) ২০১৫ সালেই বাজার ও চাহিদার দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত নিয়ে একটি গবেষণা করেছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সামর্থ্য বাড়ছে। প্রতি বছর ২০ লাখ মানুষ মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে যুক্ত হচ্ছে। সচ্ছল বা উচ্চবিত্তের সংখ্যাও বাড়ছে সমানতালে। ফলে ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর (এফএমসিজি) জন্য বাংলাদেশ বিশাল সম্ভাবনাময় বাজার। আর বাংলাদেশে প্রতি বছর সাড়ে ১০ শতাংশ হারে মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।
২০২৫ সালের মধ্যে মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে ৩ কোটি ৪০ লাখ হবে। মূলত মধ্যবিত্ত যারা, তারাই আয় হারিয়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। সুতরাং, মধ্যবিত্ত বিকাশের ওপর নির্ভর করে অর্থনীতি আরও এগিয়ে যাবে বলে যে প্রত্যাশা ছিল, তা অনেকটাই হোঁচট খাচ্ছে। এ রকম এক পরিস্থিতিতে গতানুগতিক নীতি বদলে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণের যে চ্যালেঞ্জ, সরকার তা কতটুকু নিতে পারবে, সেটাই বড় প্রশ্ন।
গত কয়েক মাসের উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে সীমিত আয় ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জীবনে ভোগান্তি বেড়েছে। অনেকে আশায় ছিলেন, বাজেটে তাদের ভোগান্তি কমাতে কোনো কিছু থাকবে। কিন্তু বর্তমান অর্থবছরের বাজেটে মধ্যবিত্তের ওপর চাপ কমানোর তেমন উদ্যোগ নেই, বরং বাজেটের কিছু কর প্রস্তাব অনুমোদন তাদের বাড়তি চাপে ফেলতে পারে। এতে পদে পদে ভোগান্তি বাড়বে, খরচও বাড়বে। শুল্ক-কর বাড়ানোর ফলে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ফ্রিজের মতো দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়বে- যা মধ্যবিত্তের খরচ বাড়াতে বাধ্য করবে। আবার সঞ্চয়পত্র কেনা ও ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রেও শর্ত কঠিন করা হয়েছে। সারা বছরের আয়-ব্যয় জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন দিতে হবে। রিটার্নের রসিদ না দেখালে ঋণ পাবেন না, সঞ্চয়ও করতে পারবেন না। মূল্যস্ফীতির চাপে সীমিত আয়ের মানুষের সংসার খরচ বেড়েছে। তাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে করমুক্ত আয়সীমাও বাড়ানো হয়নি বাজেটে। এই মুহূর্তে মধ্যবিত্তের প্রধান সমস্যা হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি। তাদের একটু স্বস্তি দিতে বাজেটে কিছু নেই, বরং তাদের অতিরিক্ত চাপের মধ্যে ফেলা হয়েছে। রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা আরোপ করায় তাদের জীবনযাপন আরও কঠিন হবে। কিছু অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যে বাড়তি শুল্ক-কর আরোপ করার ফলে তাদের খরচ বাড়বে। বাজেট দেখে মনে হয়েছে, মধ্যবিত্তের বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় আনা হয়নি। মূল্যস্ফীতিকে শুধু স্বীকার করা হয়েছে, সমাধান নেই। বাজেটের নতুন নতুন শুল্ক-কর প্রস্তাব ও শর্তগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মধ্যবিত্তের জীবনে ভোগান্তি বাড়াবে। এক বছর ধরে নিত্যপণ্যের দাম বেশ বেড়েছে। কিন্তু ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকায় অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ফলে আগের মতো বার্ষিক আয় তিন লাখ টাকার বেশি হলেই কর দিতে হবে। কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হলে কিছুটা স্বস্তি মিলত। মধ্যবিত্তকে স্বস্তি দেওয়ার বদলে কর আহরণকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এই শ্রেণির দিকে সুনজর দেননি তিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে ৩৮ ধরনের সেবা পেতে হলে আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। রিটার্ন জমা না নিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠান এই ৩৮ সেবা দেবে, তাদের ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। ওই ৩৮টি সেবার মধ্যে বেশ কিছু মধ্যবিত্তের জীবনঘনিষ্ঠ। যেমন ব্যাংকঋণ পাওয়া, সঞ্চয়পত্র কেনা, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার, অনলাইনে বেচাকেনার ব্যবসা, রাইড শেয়ারিংয়ে মোটরগাড়ি দেওয়া ইত্যাদি। এমনকি সন্তানকে ইংলিশ ভার্সনে পড়াশোনা করালেও রিটার্ন জমা দিতে হবে। এসব সেবা পেতে একবার করজালে ঢুকলে প্রতি বছর নিজের আয়-ব্যয়ের বিবরণী এনবিআরে জমা দিতে হবে। মেয়ের বিয়ে, অসুখ-বিসুখসহ বিভিন্ন জরুরি প্রয়োজনে ব্যাংকঋণ নেন মধ্যবিত্তরা। এবার বাজেটে সেই পথকে কঠিন করে তোলা হয়েছে। যেমন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ঋণের আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানতে চাইবেন ঋণ আবেদনকারী আয়কর রিটার্ন দিয়েছেন কি না। রিটার্ন জমার রসিদ বা প্রাপ্তি স্বীকারপত্র জমা না দিলে ঋণ দেবে না ব্যাংক, দিলে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা আরোপ। ব্যাংকে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) বা অন্য কোনো আমানতের সুদের টাকায় সংসারের বড় অংশ খরচ করেন অনেক মধ্যবিত্ত। সুদের টাকা বেশি পেলে তাদের স্বস্তি দেয়। অর্থমন্ত্রী এবার সেই স্বস্তির জায়গায় শর্ত দিয়েছেন। মধ্যবিত্ত শ্রেণির পাশাপাশি তরুণ জনগোষ্ঠীর কাছে এখন ক্রেডিট কার্ড বেশ জনপ্রিয়। এত দিন ক্রেডিট কার্ড নিতে হলে শুধু টিআইএন নম্বর থাকলেই হতো। এ বছর রিটার্ন জমাও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সংসারের খরচ জোগান দিতে এখন অনেক গৃহিণী ওয়েবসাইট খুলে কিংবা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহার করে অনলাইনে ব্যবসাবাণিজ্য করেন। কেউ পোশাক-আশাক বিক্রি করেন, কেউ গৃহস্থালী পণ্য বিক্রি করেন। তাদের ব্যবসা করা আরও কঠিন হলো। তাদেরও এখন থেকে টিআইএন খুলে রিটার্ন দিতে হবে।বিনিয়োগে কর কমানোর সুবিধাও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। করের বোঝা মধ্যবিত্তের ওপরেই বেশি পড়ে। তাই তাদের অনেকেই সঞ্চয়ের টাকায় সঞ্চয়পত্র কিনে কর কমানোর চেষ্টা করেন। সীমিত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের মধ্যে যতটা পারা যায় আয়ের বড় অংশ বিনিয়োগ করে কর ছাড় নেওয়ার চেষ্টা থাকে। এবার বিনিয়োগের সুযোগ আরও সীমিত করা হলো। মধ্যবিত্তরা এবারে বিনিয়োগ নিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়বেন। করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে মধ্যবিত্তের জীবনে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ বড় অনুষঙ্গ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দিয়েই মা-বাবা, ভাইবোন, ছেলেমেয়েসহ দূরদূরান্তের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলা যায়। ফেসবুক, মেসেঞ্জার, গুগল করতে লাগে একটি স্মার্টফোন। আবার শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাস ও টিউশনও করে থাকে। চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীরা অনলাইনে নানা ধরনের বৈঠক করেন। এবারের বাজেটে মোবাইল ফোন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মোবাইল ফোনের দাম আরও ৩-৪ হাজার টাকা বাড়তে পারে। করের টাকা বকেয়া থাকলে কর কর্মকর্তাদের করদাতাদের গ্যাস, বিদু্যৎ, পানিসহ বিভিন্ন পরিষেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। মোবাইল ফোন, ফ্রিজ, ল্যাপটপের মতো নিত্যব্যবহার্য বেশ কিছু পণ্য কিনতে বেশি অর্থ খরচ করতে হবে। সব মিলিয়ে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি চাপে থাকবে। মধ্যবিত্তরা এখন ত্রিমুখী আক্রমণের শিকার। এগুলো হলো বৈষম্যমূলক বাজেটীয় পদক্ষেপ, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এসব আক্রমণে মধ্যবিত্তের জীবন কঠিন হয়ে পড়েছে। বাজেটে ধনীদের বেশি সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মধ্যবিত্তের জন্য তেমন কিছু নেই। আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির কারণে মধ্যবিত্তরাই বেশি চাপে পড়েছে। সর্বশেষ বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে মধ্যবিত্ত ও গরিবরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে মধ্যবিত্তের প্রতি মনোযোগ দেওয়া হয়নি। কারণ, মধ্যবিত্তের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নেই। বাজেটে তাদের অবহেলা করা হয়েছে। বরং অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় মধ্যবিত্তদের কর ফাঁকিবাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বাজেট থেকে গরিব মানুষ কিছু পায়নি, বরং বিদেশে বেনামে সম্পদধারীদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এবার সংকটপূর্ণ অর্থবছরের বাজেট দেওয়া হয়েছে। মধ্যবিত্তদের গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আগামী অর্থবছরেও সংকট আরও বাড়তে পারে। গত ১০-১৫ বছরে অর্থনীতিতে এমন চাপ দেখা যায়নি।
রেজাউল করিম খোকন : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, কলাম লেখক