রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

স্মার্ট বাংলাদেশ :প্রতিবন্ধকতা এবং উত্তরণের উপায়

তরুণ প্রজন্ম আমাদের দেশকে সুখী, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে তুলে ধরতে পারবে। তাই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে তরুণ প্রজন্মের চলমান নানা প্রতিবন্ধকতা নিরসনের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। তবেই ২০৪১ সাল নাগাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার 'স্মার্ট বাংলাদেশ' বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
মো. সাইফুল মিয়া
  ০৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
স্মার্ট বাংলাদেশ :প্রতিবন্ধকতা এবং উত্তরণের উপায়

সাশ্রয়ী, টেকসই ও জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশের প্রত্যাশা দীর্ঘদিনের। যেখানে অর্থের আধিপত্যের পরিবর্তে জ্ঞান, মেধা ও পরিশ্রমের জয়গান প্রতিষ্ঠা হবে। তখন শোষণ ও বৈষম্যের জায়গা দখল করবে সাম্য ও স্বাধীনতা। নাগরিক জীবনে এসব আক্ষেপ পূরণ করবে আগামীর 'স্মার্ট বাংলাদেশ'। এবারের ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সাল নাগাদ 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ী হতে বলেছেন। তখন থেকেই দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে 'স্মার্ট বাংলাদেশ' একটি প্রত্যয়, একটি স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। একই সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে এটি সুশীল সমাজে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ও বটে। মূলত স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি সমন্বয়ে 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ে উঠবে।

বাংলাদেশ আজ প্রযুক্তি খাতে অবিশ্বাস্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। ইতোমধ্যে বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সফল হয়েছে। কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে প্রযুক্তির প্রসার ঘটিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এখন স্কুল থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার হচ্ছে। শ্রেণিকক্ষে ব্যবহার হচ্ছে ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, স্পিকার ও ইন্টারনেট সংযুক্ত। এভাবেই ক্রমশ বেড়ে চলছে দেশে শিক্ষার প্রসার। শিক্ষা ছাড়াও সর্বক্ষেত্রে লাগছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের এখন যে উন্নতি করেছে, এক দশক আগেও তা কল্পনা করা যেত না। দেশের সর্বস্তরে মানুষ প্রতিনিয়ত অভ্যস্ত হচ্ছে প্রযুক্তি ব্যবহারে। করোনা মহামারি ধাক্কা ও বৈশ্বিক ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে মধ্যম আয়ের দেশে। ভবিষ্যৎ প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্ব নেতৃত্বদান ও চতুর্থ বিপস্নবে টিকে থাকতে 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ার প্রত্যয় যুগোপযোগী পদক্ষেপ বলে বিবেচিত।

1

ইতোমধ্যেই সরকার 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ে তুলতে বিশাল কর্মযজ্ঞ আয়োজন করেছে। এবারের ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসের প্রতিপাদ্য 'প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি।' শিক্ষা, চিকিৎসা, গবেষণা ছাড়াও প্রতিটি ক্ষেত্রে এখন প্রযুক্তি একচ্ছত্র আধিপত্য। চতুর্থ বিপস্নবে অংশগ্রহণ ও আগামীর 'স্মার্ট বাংলাদেশ' নেতৃত্ব দিতে প্রযুক্তি ব্যবহার দক্ষ হতে হবে। তাই বলা যায়, তরুণ প্রজন্ম আগামীর 'স্মার্ট বাংলাদেশ' এ প্রবর্তকের ভূমিকা রাখবে। বর্তমানেও মেধাবী ও অনুসন্ধিৎসু তরুণ প্রজন্ম দেশের শিক্ষা, শিল্প-সংস্কৃতি, খেলাধুলা ছাড়াও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাহসিকতার সঙ্গে নিজেদের অসাধারণ যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে আসছে। তাই 'স্মার্ট বাংলাদেশ' সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে তরুণ প্রজন্মের বিকল্প নেই। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার বড় একটা অংশ তরুণ প্রজন্ম। তবে আক্ষেপ হলো, তাদের অধিকাংশ শিক্ষিত বেকার। তাই বেকারত্ব আমাদের জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচনায়, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫ থেকে ৬ লাখ বেকার তরুণ আছেন। তারা কেউ স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েও পছন্দমতো কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে না। বিপুলসংখ্যক এই কর্মক্ষম জনশক্তি যেকোনো দেশের জন্য সম্ভাবনাময় মানবসম্পদ। তাই সঠিক ও যুগোপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে এই বিপুল সংখ্যক সম্ভাবনাময় মানবসম্পদ কাজে লাগাতে হবে।

তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে তরুণ প্রজন্ম সবার থেকে এগিয়ে আছে। এখন স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ছাড়া তরুণ পাওয়া দুষ্করও বটে। আধুনিক ডিভাইস বর্তমানে স্কুল শিক্ষার্থীদের থেকে শুরু করে এখন সর্বস্তরের মানুষের নিত্যসঙ্গী। প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে অনেক তরুণ জড়িত হচ্ছে অপরাধের। অথচ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর তরুণ প্রজন্ম একই প্রযুক্তির সাহায্যে নিজেদের জ্ঞান ও মেধাকে ব্যবহার দেশের উন্নতিতে অবদান রাখছে। তাই উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর সমকক্ষ হতে আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মকে প্রযুক্তির ব্যবহারে যথাযথ দিকনির্দেশনার দেওয়া জরুরি। বর্তমানে একজন শিক্ষিত বেকার সহজে স্বাবলম্বী হতে পারেন ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে। ঘরে বসেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কাজ করে অর্থ উপার্জন করা যায়। ফ্রিল্যান্সিং হলো মুক্ত পেশা। কাজ করার জন্য প্রয়োজন হয় না অফিসের। প্রয়োজন শুধু ইন্টারনেট সংযোগ। কাজের নেই নির্ধারিত সময়। নিজের সময় ও সুযোগমতো কাজ করা যায়। তাই বর্তমানে সারা বিশ্বের তরুণ-তরুণীদের নিকট ফ্রিল্যান্সিং বহুলভাবে জনপ্রিয়। প্রতিনিয়ত এর ক্ষেত্রও প্রসারিত হচ্ছে। বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি এখন তাদের কাজগুলো অফিসের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ছড়িয়ে দিচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপেস্নসে। এতে কোম্পানিগুলো কাজের জন্য পাচ্ছে দক্ষ কর্মী এবং কর্মীরাও অন্য দেশ থেকে রেমিট্যান্স আয়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারছে।

কৃষিপ্রধান এদেশে প্রযুক্তির ব্যবহার করে তরুণ প্রজন্ম কৃষিতে বৈপস্নবিক পরিবর্তন আনতে পারবে। একটা সময় কৃষকেরা লাঙল-জোয়াল ও বলদ দিয়ে হালের মাধ্যমে জমি প্রস্তুত করত। কিন্তু এখন প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, কম্বাইন্ড হার্ভেপারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি। ফসল কাটা ও মাড়াই করে প্যাকেটিং পর্যন্ত প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। এতে কৃষকের সময়, অর্থ ও পরিশ্রম কম লাগছে। একইভাবে শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রযুক্তির ব্যবহার করে সফল হওয়ার সুযোগও রয়েছে। বর্তমানে শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে। ফ্রিল্যান্সিং, কৃষি ও নিজস্ব ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রযুক্তির ব্যবহার করে স্বাবলম্বী হওয়ার অভূতপূর্ব নজির স্থাপনও করেছে। কিন্তু আমাদের বিপুল সংখ্যক তরুণ প্রজন্ম সঠিক পরিচর্যার অভাবে আশানুরূপ সাফল্য দেখাতে পারছে। বরং তারা বেকারত্ব নামক অভিশাপে পরিণত হয়েছে। প্রযুক্তি খাতে আমাদের নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। প্রথমেই আসে আধুনিক ডিভাইসজনিত সমস্যা। ডিভাইসের উচ্চমূল্যের কারণে দেশের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের তা ক্রয় করতে পারছে না। এরপর ইন্টারনেটে ধীরগতির কারণে প্রত্যন্ত এলাকার সবাই এর আওতায় আসতে পারছে না। তাছাড়া প্রযুক্তি প্রশিক্ষণের অত্যাধিক টাকা খরচ করাও সবার পক্ষে সম্ভব না। তাই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সাশ্রয়ী মূল্যে ডিভাইস সরবরাহ ও ফ্রি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা সময়ের দাবি।

আমাদের বিপুল সংখ্যক সম্ভাবনাময় মানবসম্পদ তরুণ প্রজন্ম আছে। সঠিক দিকনির্দেশনা ও পরিচর্যা পেলে অচিরেই অভিশাপ থেকে মানবসম্পদে পরিণত হবে। দেশে বিদ্যামান কতিপয় সমস্যা সমাধানকল্পেও দেখাবে অভূতপূর্ব সাফল্য। দেশের কল্যাণে তরুণ প্রজন্ম অকাতরে কাজ করে দেশকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় প্রত্যয় 'স্মার্ট বাংলাদেশ' এ পরিণত করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। তাই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সম্ভাবনাময় মানবসম্পদ তরুণ প্রজন্মের বিকল্প নাই।

তরুণ প্রজন্ম আমাদের দেশকে সুখী, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে তুলে ধরতে পারবে। তাই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে তরুণ প্রজন্মের চলমান নানা প্রতিবন্ধকতা নিরসনের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। তবেই ২০৪১ সাল নাগাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার 'স্মার্ট বাংলাদেশ' বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

মো. সাইফুল মিয়া :কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে