শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মরণঘাতক ক্যানসার ব্যক্তি সচেতনতা জরুরি

নতুনধারা
  ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

মরণঘাতক ক্যানসার থেকে রক্ষা পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব। মাধ্যমিক বা শেষ স্তরে এসে রোগীকে বাঁচানো যায় না। দুঃজনক বাস্তবতা হচ্ছে, দেশে প্রাণঘাতী রোগ ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও জাতীয় কোনো নীতিমালা হয়নি। ক্যানসার প্রতিরোধে ২০০৯ সালে জাতীয় কর্মকৌশল তৈরির ১৪ বছর অতিবাহিত হলেও বাস্তবায়নে নেই অগ্রগতি। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার প্রতিরোধ এখনো সম্ভব হয়নি। ক্যানসারের চিকিৎসা ব্যয়বহুল ও বিক্ষিপ্ত। এমন প্রেক্ষাপটে শনিবার দেশব্যাপী পালিত হয়েছে বিশ্ব ক্যানসার দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য 'ক্লোজ দ্য কেয়ার গ্যাপ' অর্থাৎ ক্যানসার চিকিৎসায় ঘাটতি কমাই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাবিস্নউএইচও) 'দ্য গেস্নাবাল ক্যানসার অবজারভেটরি-২০২০'-এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৫ লাখ ক্যানসার রোগী ছিল। প্রতি বছর দুই লাখ রোগী ক্যানসারে আক্রান্ত হয় এবং দেড় লাখ মারা যায়। ডাবিস্নউএইচওর হিসাবে ২০৩০ সাল নাগাদ ক্যানসারে বিশ্বে প্রায় দুই কোটি ২০ লাখ মানুষের মৃতু্য হবে এবং বাংলাদেশে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হবে। সংস্থাটির তথ্য মতে, বিশ্বে ক্রমেই বাড়ছে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা। বর্তমানে বিশ্বে মৃতু্যর দ্বিতীয় প্রধান রোগে পরিণত হয়েছে ক্যানসার। প্রতি বছর এতে মারা যায় প্রায় এক কোটি মানুষ। রোগীর সঙ্গে মৃতু্যর সংখ্যাও বাড়ছে।

উলেস্নখ্য, বাংলাদেশে ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় শয্যা আছে মাত্র ৫০০। অর্থাৎ এক শয্যার বিপরীতে রোগী তিন হাজার। ক্যানসার চিকিৎসার জন্য রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপির জন্যও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়। এ সেবা পেতে তিন থেকে চার মাস অপেক্ষা করতে হয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাণিজ্য করছে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি সিন্ডিকেট। অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা না থাকায় দেশের সব জেলার রোগী এ হাসপাতালেই ভিড় করেন। ফলে রোগী বাগিয়ে নিতে হাসপাতালের অধিকাংশ চিকিৎসকই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তিগতভাবে ক্লিনিক খুলেছেন। এসব ক্লিনিকে রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে। ব্যয়বহুল চিকিৎসা নিতে গিয়ে অনেকে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন।

সরকারি পর্যায়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল; চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে ক্যানসার হাসপাতাল ছাড়া কোনোটিতেই পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা নেই। বেসরকারিভাবে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতাল, স্কয়ার হাসপাতাল, ডেল্‌?টা হাসপাতাল, আহ্‌?ছানিয়া মিশন ক্যানসার হাসপাতাল, খাজা ইউনুস, নর্থ-ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যানসারের যে চিকিৎসা দেওয়া হয়, তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। যার কারণে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন অনেকেই। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে- ক্যানসার চিকিৎসার জন্য দরিদ্র মানুষ যাবেন কোথায়? তাদের করণীয়ই বা কী?

হাসপাতালের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরও সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সরকারি পর্যায়ে কোনো অনকোলজিস্ট নার্স নেই। মেডিকেল ফিজিসিস্ট বিশেষজ্ঞের ১০ পদ সৃষ্টি করা হলেও নানা জটিলতায় নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। মেডিকেল ফিজিসিস্ট ছাড়া আধুনিক রেডিওথেরাপি চিকিৎসা দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের দেওয়া জনবল নিয়ে রেডিওথেরাপি চলছে। রেডিওথেরাপি টেকনোলজিস্টের ৬৫ পদের মধ্যে ৩৯টিই শূন্য আছে।

আমরা মনে করি, দ্রম্নত এই সংকট দূর করতে হবে। পাশাপাশি যে সব হাসপাতালে অনিয়ম ও দুর্নীতি রয়েছে সে সবের ব্যাপারেও অধিক মনোযোগী হতে হবে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়াও জরুরি। এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে