মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

অটিস্টিক শিশুর প্রতি আর অবহেলা নয়

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য জাতীয় বাজেটে বিশেষভাবে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে। সরকারের প্রতি নির্ধারণী পর্যায়ে এদের উপযোগী অর্থাৎ প্রতিবন্ধীবান্ধব নীতিগ্রহণ বাস্তবায়ন করতে হবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে।
মোশারফ হোসেন
  ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
অটিস্টিক শিশুর প্রতি আর অবহেলা নয়

শিশু মনোচিকিৎসক ড. লিও ক্যানার প্রথম অটিজম আবিষ্কার করেন। অটিজম শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ অটোস থেকে। 'অটোস শব্দটির অর্থ 'সেলফ' বা নিজ। ইংরেজি 'অটিস্টিক শব্দটি ও গ্রিক শব্দ। জাতিসংঘের ৩৭তম সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় নির্ধারিত সংজ্ঞানুযায়ী প্রতিবন্ধিতা বলতে শারীরিক বা মানসিক ক্ষতিগ্রস্ততা বা সীমাবদ্ধতার কারণে সৃষ্ট এমন কোনো প্রতিবন্ধকতা বা সীমাবদ্ধতা। যদি সেটি কোনো মানুষের স্বাভাবকি কার্যক্রমকে আংশিক বা পূর্ণভাবে বাধাগ্রস্ত করে। অটিজম কোনো রোগ নয়। অটিজম হলো এক ধরনের ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার বা বৈকল্য। কোনো শিশু অটিস্টিক কিনা, এক বাক্যে বলে দেয়া বড় মুশকিল। কারণটা হচ্ছে এটি নিরূপণ করার সঠিক কোনো মাপনি যন্ত্র, মাপকাঠি এখনো আবিষ্কার হয়টি। তবে বর্তমানকালে অটিজম নির্ণয়ের কিছু স্কেল ও গাইড সম্পর্কে জানা যায়। যেটির, দ্বারা কিছুটা হলেও সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

ব্যতিক্রমধর্মী শিশু, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু, প্রতিবন্ধী শিশু। লক্ষণীয় প্রতিবন্ধী শব্দটির বহুল ব্যবহার পরিলক্ষিত। প্রতিবন্ধীত্ব, প্রতিবন্ধকতা, প্রতিবন্ধিতা প্রভৃতি শব্দ খুব বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। মানবদেহের নানা ত্রম্নটিপূর্ণ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবন্ধিতার কয়েকটি শ্রেণিতে শ্রেণিকরণ করা যায়। যেমন- দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, মূক ও বাধার প্রতিবন্ধী মানসিক প্রতিবন্ধী প্রভৃতি।

ঐবধিৎফ ধহফ ড়ৎষধহংশু-এর মতে, '২ বছরের মধ্যে অটিস্টিক শিশুরা স্বাভাবিক শিশুদের থেকে পৃথক সেটি ধরা যায়।'

প্রতিবন্ধী শিশুরা এ সমাজেরই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অটিস্টিক শিশুরা সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন করতে অনেক ক্ষেত্রেই অক্ষম। তারা নিজেদের মতো থাকতে বেশি পছন্দ করেন। একটু জেদি প্রকৃতির হয়ে থাকে। অন্যদের সঙ্গে খুব স্বাভাবিক সাবলীল আচরণ করতে পারে না। তারা তাদের ভাবের আদান-প্রদান করতে পারে না। সাড়া প্রদানে ব্যর্থ হয়। সঠিক ভাষা দিয়ে প্রকাশ করতে অক্ষম, তাদের মধ্যে ভাষা বিকাশ ভঙ্গি, ভাষা প্রয়োগ ঘটাতে অক্ষম। প্রতিবন্ধী শিশু সেরিব্রাল পলিসিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জনাথন গ্রিন বলেন, 'অটিজম এমন একটি অবস্থা, যেটা শিশুর জন্মলগ্ন থেকেই থাকে বলে আমরা জানি, আসলে তা শুরু হয় জন্মেও আগে থেকেই।'

অটিজম শনাক্তকরণের প্রাথমিক কিছু লক্ষণসমূহ লক্ষণীয়। শিশু জন্মগ্রহণের প্রায় ৬ মাসের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উজ্জীবিত অর্থাৎ না হাসা, ৯ মাসের মধ্যে শিশুটি যার কাছে লালিত পালিত করে তার সঙ্গে কার্যত সাড়া না দেয়া। যেমন- বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ না করা; ১২ মাসের মধ্যে মুখে কোনো শব্দ না করা এবং আঙুল দিয়ে কোনো কিছুর না দেখানো; ১৬ মাসের মধ্যে কোনো শব্দ না করা; ২৪ মাসের মধ্যে ২টি শব্দ দিয়ে বাক্য না বলতে পারা। শিশুর মধ্যে হঠাৎ যোগাযোগ দক্ষতা ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া। অটিজমে শিকার হওয়া শিশুটি এদের ইন্দ্রিয় সচল থাকলেও কাজকর্ম ও সক্রিয়তাও যথেষ্ঠ সীমিত আকারে প্রকাশ পায়। এদের মস্তিষ্কের গড়ন ভিন্ন হয়ে থাকে মস্তিস্কের কাঠামোগত তফাতের কারণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকাশভঙ্গি লক্ষ্য করা যায়। ইন্দ্রিয় দ্বারা প্রাপ্ত তথ্যকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়। এমনকি বেশিরভাগ সময় বিরক্তবোধ করে থাকে। ব্যতিক্রমধর্মী শিশু স্বাভাবিক শিশু থেকে নানা দিক থেকে ভিন্নতর হয়ে থাকে। একটি ব্যতিক্রমধর্মী শিশু মানসিক বৈশিষ্ট্যের সংবেক্ষণ ক্ষমতা, ভাব বিনিময়ের বৈশিষ্ট্য আচরণগত ও আবেগীয় বৈশিষ্ঠ্যের বিকাশের দিক থেকে ও বিশেষ শারীরিক বৈশিষ্ঠ্য সম্পন্নতার দিক থেকে ভিন্নতর। আটিজমের এখনো সুনির্দিষ্ট সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে এ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যবেক্ষণ হয়েছে। তবে এও জানা যায়- স্নায়ু, মস্তিষ্ক, জেনেটিক, পরিবেশ খাবারদাবার এবং বাবা-মায়ের জীবনাচারণ, কর্মকান্ড প্রভৃতিকে কিছুটা হলেও দায়ী করা যেতে পারে আটিজমের আবিষ্কারক ড. ক্যানার বলেন, সাধারণত শিশুর জন্মের তিন বছরের মধ্যে আটিজমে উপসর্গ ও স্বাভাবিক দেখা যায়।

দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশসমূহের ক্ষেত্রে অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা বেশি। একটি শিশু প্রতিবন্ধী হয় নানাবিধ কারণে, যেমন গর্ভকালীন সময়ে পুষ্টিহীনতা বা বাবা-মায়ের অনিয়মজনিত অর্থাৎ অজ্ঞা অদূরদর্শিতা পরিবর্তনের কারণে নানা রকমের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবন্ধী হয়। এছাড়া, আকস্মিক, শারীরিক, মানসিক, পোলিও, টাইফয়েড, নিউমোনিয়া, রিকেট, রক্তচাপ, স্ট্রোক, হাড় বা অস্থির অসম অবস্থান, অঙ্গহানি দুর্ঘটনা ইত্যাদি। অটিজম এ আক্রান্ত শিশু মানেই মানসিক প্রতিবন্ধী নয়, নয় বুদ্ধি প্রতিবন্ধীও অটিস্টিক শিশু পরিবারের বোঝা নয়। একটি স্বাভাবিক শিশুর বুদ্ধাঙ্ক যেমন বেশি কত হয়ে থাকে, অটিস্টিক বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও তেমনই হয়।

শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জনাথন গ্রিন আরও বলেন, অটিজম এমন একটি অবস্থা। যেটি শিশুর জন্মলগ্ন থেকেই থাকে বলে আমরা জানি, আসলে তা শুরু হয় জন্মের আগে থেকেই। তিনি বলেন, 'প্রথম কয়েক বছর আপনি হয়তো অটিজমের সমস্যা পুরো মাত্রায় দেখতে পাওয়া না, কিন্তু নানা লক্ষণ দেখতে পাবেন এবং তিন বছরের মাথায় অটিজম ধরা পড়ে।'

প্রতিবন্ধীদের প্রতি সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে অংশ রয়েছে নানারকম কুসংস্কার, করুণা, পরিহাস, উপহাস, কটাক্ষ, বিরূপ মন্তব্য সমাজে প্রচলিত আছে- যা ভ্রান্ত ধারণা। সমাজের এক শ্রেণির মানুষ রয়েছে- যারা প্রতিবন্ধী শিশুকে পিতামাতার পাপের ফল বা বিধাতার অভিশাপ হিসেবে গণ্য করেন। আমাদের মধ্যে অনেকে মনে করেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনা ও প্রীতি অনুভব করেন এবং উচ্ছ্বসিত হন। তারাও জ্ঞানে গুণে-ধ্যানে, মেধা, মননশীলতায় ও আত্মশান্তির বলে বলীয়ান, মহিয়ান, গরিয়ান হতে চান। এমনও দেখা যায় যে, অটিস্টিক বাচ্চাদের কেউ কেউ ছবি আঁকা বা গণিত স্বাভাবিক বাচ্চাদের তুলনায় অনেক ক্ষেত্রে মেধার পরিচয় দিয়ে থাকে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, 'যিনি শিশুর যত্ন নিচ্ছেন, তিনি কীভাবে শিশুটির সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তা শিশুর মস্তিষ্ক এবং সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।'

বাংলাদেশের সমাজ বাস্তবতায় অটিজমকে কুসংস্কার অজ্ঞতা-অনভিজ্ঞতা, মানসিক দৈন্যতাহীনতার কারণে স্পেক্ট্রাম বৈকল্যসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তি সমাজের মূল ধারা থেকে যোজন-যোজন দূরত্বে অবস্থান করে। অথচ অটিজম স্পেক্ট্রাম সম্পন্ন শিশু যথাযথ শিক্ষা-চিকিৎসা আদর-যত্ন-স্নেহ মায়া-মমতা দিয়ে গড়ে তুলতে পারলে একজন স্বাভাবিকস শিশুর ন্যায় আচরণে অভ্যস্থ হয়ে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবে। এমনকি স্বাভাবিক শিশুর ন্যায় সমাজে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারবে। অটিজম শিশুকে অবহেলা-অযত্ন-অনাদর করার কারণে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ, ভাবের আদান প্রদান, আবেগীয় জায়গায়টিতে গুরুত্ব এড়িয়ে যাওয়ার, লুকিয়ে রাখা, প্রকাশ না করানোর ফলশ্রম্নতিতে তার শারীরিক-মানসিকতার দিক থেকে যথাযথভাবে বিকাশ বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। যেটি, সমাজে সামাজিক বৈষম্যকে আরও ত্বরান্বিত করে। সব ধর্মেই তাদের অধিকার এবং সম্মান প্রাপ্তির স্বীকৃতি উলিস্নখিত আছে। জন্মগ্রহণ কারও দোষ নয়, কর্মই প্রধান। অনেকে সমস্যাকে প্রাকৃতিক অভিশাপ বলে শিশুটিকে সমাজের আর ১০টা মানুষ থেকে লুকিয়ে রাখে। প্রতিবন্ধীদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে নানা ধরনের মুখরোচক কথাবার্তা প্রচার করে থাকে এক শ্রেণির মানুষ। এমন আচরণের কারণে অটিস্টিক শিশু হতাশা হয়ে যায়। মনোঃকষ্ট পেয়ে থাকে। যে পরিবারে প্রতিবন্ধী শিশুর জন্মগ্রহণ করে সেই পরিবারের পিতামাতা এক ভয়ানক সংকটাপন্ন অবস্থার মুখোমুখি হন। পিতামাতার অর্থনৈতিক সামাজিক-হানাহানি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জীবন বহুমুখী সমস্যার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করে থাকেন। এমতাবস্থায় প্রতিবন্ধিতার শিকার শিশু, শিশুর পরিবার অর্থাৎ পিতামাতাকে নানা উপায়ে সাহায্য সহযোগিতার হাতকে প্রসারিত করা স্ব-স্ব অবস্থান থেকে সবার এগিয়ে আসা খুব জরুরি।

প্রতিবন্ধী শিশু আমাদেরই সন্তান। আমাদের প্রতিবেশী, গ্রামবাসী, মহলস্নাবাসী, আমাদেরই আপনজন। আমাদের সমাজ, রাষ্ট্রের নাগরিক। প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি সদয় হতে হবে।

সুপারিশ

আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রতিটি শিশুই সৃষ্টি কর্তার অমূল্য সম্পদ। সৃষ্টিকর্তার উপহার। প্রতিবন্ধী শিশুর প্রতি দায়িত্ব তাদের এগিয়ে যাওয়া মানেই হচ্ছে অসহায়ের পক্ষে, অধিকার বঞ্চিতদের পক্ষে তথা, ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিজেকে আত্মনিয়োগ করা এটি সামাজিক আন্দোলনের অংশ বিশেষ হিসেবে নিজেকে শামিল করা। এটি সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কর্মকান্ড। প্রতিবন্ধী শিশু ও পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হলো:

অটিজমের নির্দিষ্ট কোনো, সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে এই সমস্যা থেকে উত্তরণের কিছুটা হলেও উত্তরণ সম্ভব। তবে বলা যেতে পারে- নানা প্রশিক্ষণ, সামাজিকীকরণ, তাদের সঙ্গে মেশা, মূল স্রোতের সঙ্গে নিয়ে একে তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ সহযোগিতার হাত বাড়লে স্বাভাবিক জীবনে ধীরে ধীরে ফিরে আসতে পারবে। পৃথিবীর অনেক দেশ এ ব্যাপারে সোচ্চার তন্মধ্যে জার্মানের কথা উলেস্নখ করা যেতে পারে। জার্মানির বিদ্যালয়ে স্বাভাবিক শিশু ও অটিস্টিক শিশুদের এক সঙ্গে পাঠদান করিয়ে থাকে। স্বাভাবিক বাচ্চাদের সঙ্গে মিশে অটিস্টিক শিশুটিও স্বাভাবিক আচরণে অভ্যস্থ হতে থাকে ধীরে ধীরে। সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে পূর্ণ অধিকার নিয়ে আনন্দ-সাহায্য-সহযোগিতার মধ্য দিয়ে। মনে রাখতে হবে প্রতিবন্ধী শিশু তার প্রতিবন্ধীত্বতার জন্য সে নিজে কিন্তু দায়ী নয়। তার নিয়তি অথবা পরিস্থিতির শিকার। তাকে সাহায্য সহযোগিতা, ভালোবাসা, স্নেহ-মায়া মমতা, সম্মান দেখানো মানে হচ্ছে মানবিক প্রদর্শনকরণ সেও সমাজের মানুষ। সমাজ রাষ্ট্র থেকে সুবিধা ভোগ করতে পারাটা, তার অধিকারের মধ্যে পড়ে। সে এই দেশের নাগরিক।

সরকারি-বেসরকারি, আধা সরকারি, ব্যক্তি পরিচর্যা সবাই সচেতন হয়ে চিকিৎসা, পরামর্শ, সেবা গ্রহণ করে নির্দেশনানুযায়ী যথাযথ প্রক্রিয়ায় যত্ন পরিচর্যা নিলে অটিস্টিক শিশু সমাজের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ পাবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তাদের স্বাভাবিক বিকাশ হবে। সে স্বাভাবিক শিশুর ন্যায় নিজেকে প্রকাশ করতে সমর্থ হবে। অটিজম বিষয়ে বাবা-মায়ের পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকলে বিশেষ করে মায়েদের পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকলে শিশুর বেড়ে ওঠার সময় কোনো অস্বাভাবিকতা লক্ষণীয় হলে তৎক্ষণাৎ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরামর্শ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে জটিলতা বহুলাংশেই উৎরানো সম্ভব।

অটিজম বিষয়ে সচেতনা তৈরিতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সামাজিকভাবে অংশীজনদের ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে শিশুদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে, এ বিষয়ে বাবা-মাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে অটিজম কমিয়ে আনা সম্ভব, বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার এবং ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা এ গবেষণার তিন বছরের শিশুদের অটিজম শনাক্ত হওয়ার হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন।

একজন অটিস্টিক শিশুর নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের অনেক কষ্ট। তাদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। তাদের প্রতি সদয় হতে হবে সুস্থ দেহ সুস্থ মন দরকার। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর জন্য বিদ্যালয়গুলোতে তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা নেই। যেমন বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক, নার্স, মনো চিকিৎসক, স্কুলে ওঠার উপযুক্ত সিঁড়ি। যারা কানে শোনে না, চোখে দেখে না, হাঁটতে পারেন। তাদের জন্য প্রতিবন্ধী বান্ধব উপকরণ যেমন হুইল চেয়ার ব্রেল পদ্ধতি, পরিবহণ ব্যবস্থা ইত্যাদি। এগুলোর যথাযথ ব্যবস্থা করা খুব জরুরি। এছাড়াও প্রতিবন্ধী বান্ধব টয়লেট নির্মাণ, নিচতলায় ক্লাস রুমের ব্যবস্থা, শ্রেণিকক্ষে উপযোগী আসনব্যবস্থা পুনর্বিন্যাস, সামনের আসনগুলোতে বসার ব্যবস্থা আলোচনাগুলো রেকর্ড করার উপকরণ বিদু্যৎ সরবরাহ, ক্রীড়া, বিনোদনমূলক অনুশীলন, শ্রেণিকক্ষের স্বাভাবিক সুস্থ শিশুরা যাতে তাদের সঙ্গে সহযোগিতামূলক আন্তরিক ব্যবহার সব শিক্ষকের একীভূত বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান এবং শিক্ষা প্রশিক্ষণগুলোতে বিএসএড (ব্যাচেলর অব সোশাল এডুকেশন) গ্রহণ বাধ্যমূলক করা। শিক্ষকদের ব্রেইল, ইশারা ভাষার ওপর বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত করে তোলাটা খুব দরকার।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য জাতীয় বাজেটে বিশেষভাবে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে। সরকারের প্রতি নির্ধারণী পর্যায়ে এদের উপযোগী অর্থাৎ প্রতিবন্ধীবান্ধব নীতিগ্রহণ বাস্তবায়ন করতে হবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে।

২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুযোগ আইন তৈরি করা হয়েছে- এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন সময়ের দাবি, প্রত্যেকটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিবন্ধীদের জন্য স্কুল-কলেজ, ইউনির্ভাসিটি, হাসপাতাল তৈরি করতে হবে।

মানুষ মানুষের জন্য। মানুষতো মানুষের জন্য। প্রতিবন্ধীদের এগিয়ে নিতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে মূলধারায় আনতে অর্থাৎ প্রতিবন্ধী শিশুদের স্বাভাবিক শিশুর ন্যায় সুপ্রতিষ্ঠিত করতে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে স্ব-স্ব অবস্থান থেকে। প্রতিবন্ধী শিশুর সমাজে গ্রহণযোগ্যতা, অবস্থান, মানসিক অবস্থা, সামাজিক মর্যাদা, প্রতিভা মূল্যায়ন করে তাদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব।

মোশারফ হোসেন : শিক্ষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে