সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

নতুনধারা
  ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
নির্বাচনী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

নির্বাচনের বাকি একদিন। সারাদেশে নির্বাচনী নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দলের নির্বাচন বর্জনের মধ্যেও জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণা। লড়াইটা হচ্ছে মূলত আওয়ামী লীগ ও নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে। প্রচার-প্রচারণা কেন্দ্র করে এরই মধ্যে বেশ কিছু সংঘাতের খবর মিলেছে। বিরোধীদের ভোট বর্জনসহ অসহযোগের হুমকি তো আছেই। তাই সহিংসতার বিষয়ে সজাগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে মাঠে থাকবের্ যাব, পুলিশ, আনসার, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, এপিবিএনের সাড়ে সাত লাখ ফোর্স। ভোটের আগে ও পরে থাকবে সেনাবাহিনী। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র, প্রার্থী, ভোটার, প্রিসাইডিং অফিসার ও রিটার্নিং অফিসারসহ প্রত্যেককে নিরাপত্তা দিতে এরই মধ্যে নির্বাচনী ছক তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে মাঠে মোতায়েন করা রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।

উলেস্নখ্য, যা গত একাদশ সংসদ নির্বাচনের চেয়ে এক লাখ ৩০ হাজার বেশি। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে বিজিবি-কোস্ট গার্ড ১১ দিন,র্ যাব-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ৮ দিন, সশস্ত্রবাহিনী ১০ দিন নিয়োজিত ছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। নির্বাচনে সেনাবাহিনী,র্ যাব, বিজিবি, আনসার ও কোস্ট গার্ডের সদস্যরা মাঠে থাকলেও নিরাপত্তার মূল দায়িত্বে থাকবে পুলিশ। নির্বাচনে পুলিশের প্রায় ৮০ শতাংশ সদস্য ভোটের মাঠে মোতায়েন থাকছে। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য অধিকাংশ জায়গায় বিরতিহীনভাবে ডিউটি থাকবে পুলিশ সদস্যদের। আবার কিছু জায়গায় থাকবে শিফটিং ও মোবাইল টহল। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিতে পুলিশ সদস্যরা নিজেদের ও অন্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন। এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারেও কাজ করছে পুলিশ। এবার বৈধ অস্ত্র জমা না নেওয়ায় অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার যাতে কোনোভাবে না বাড়ে সে দিকটিও খেয়াল রাখতে হচ্ছে পুলিশকে। সারাদেশে পুলিশ বাহিনীতে সদস্য আছে দুই লাখ ১২ হাজার। নির্বাচন কেন্দ্র করে সারাদেশে প্রায় দুই লাখ পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকছেন। তারা নির্বাচনের সময় টহল দেওয়া থেকে শুরু করে স্ট্রাইকিং টিম, ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গেও ডিউটিতে থাকবেন। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে পুলিশের বাড়তি ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। কোনো কোনো দুর্গম এলাকার কেন্দ্রও ঝুঁকিপূর্ণ। সেগুলোর জন্য থাকছে বাড়তি ফোর্স। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সারাদেশে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছের্ যাব, বিজিবি, ব্যাটালিয়ন আনসার, এপিবিএন এবং কোস্ট গার্ড। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ সংস্থাগুলো নিরাপত্তা রক্ষায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা দেবের্ যাব।

বলা প্রয়োজন,র্ যাব গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হবে এবং নিজস্ব সুইপিং ও বোম্ব ডিসপোজাল টিম প্রস্তুত থাকবে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ও ডগ স্কোয়াড নিয়োগ করা হবে। ভোটকেন্দ্র ও ভোট গণনার ক্ষেত্রে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে দায়িত্ব পালন করবে। গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুই লাখ ১৫ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে মোতায়েন থাকবে চার লাখ ৭২ হাজার সদস্য। এবারের নির্বাচনে মোট ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাবেন। এবার ২৯৯ নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১৫ থেকে ১৭ জন নিরাপত্তা সদস্যের একটি দল মোতায়েন করা হবে। প্রার্থীর মৃতু্য হওয়ায় একটি আসনে নির্বাচন হবে না। নির্বাচনকে ঘিরে পুলিশ, আনসার, র?্যাব, বিজিবি'র মতো বাহিনীগুলোর সঙ্গেই দায়িত্ব পালন করবে সেনাবাহিনী। বাংলাদেশে আগের সব জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় সক্রিয় থাকবে সেনাবাহিনী। ৩ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ২৯৯ নির্বাচনী আসনের সবকটিতেই সেনাবাহিনীর উপস্থিতি থাকবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অতীতেও নির্বাচনের সময় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে সেনাবাহিনী 'স্ট্রাইকিং ফোর্স' হিসেবে কাজ করেছে। ভোটকেন্দ্র ও ভোট গণনার ক্ষেত্রে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে দায়িত্ব পালন করবে।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বেসামরিক বাহিনীগুলো সক্রিয় থাকার পরও কেন সেনাবাহিনীকে নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করার জন্য আহ্বান করা হয়? তাদের দায়িত্বের আওতাই বা কতটুকু? নির্বাচন কমিশন বলছে, 'স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে' সহায়তা করার জন্য 'ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার'-এর আওতায় সশস্ত্র বাহিনীকে নির্বাচনী দায়িত্বে মোতায়েন করা হবে। সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় ৩৮৮টি উপজেলায় ৩৫ হাজারেরও বেশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল।

নির্বাচনী নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এই উদ্যোগ যথেষ্ট। আমরা আশা করছি, জনগণ ভয়মুক্ত হয়ে ভোট দেবে এবং এবার সহিংসতামুক্ত নির্বাচন হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে