সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডাকাত নির্মূলে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি

শেখ আব্দুলস্নাহ, শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ, ঢাকা
  ১১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

আধুনিক জীবনব্যবস্থা ও আইনের কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকার সত্ত্বেও যদি এই যুগে এসে মানুষের ডাকাতের ভয় নিয়ে রাতে ঘুমাতে হয়, তাহলে বিষয়টি অনেকটা ভিন্ন মাত্রায় দাঁড়ায়। রাতের আঁধারে কখনো ডিবি পুলিশ সেজে, কখনো অ্যাম্বুলেন্সে রোগী বা রোগীর পরিবার-পরিজন সেজে গ্রামে ঢুকে যখন অভিনব পদ্ধতিতে ডাকাতি শুরু হয়, তখন বিষয়টি আসলেই অনেক ভীতিকর অবস্থা হয়ে দাঁড়ায়। আর এমনই ঘটনা ঘটছে দেশের বেশকিছু গ্রামাঞ্চলে। ঘটনা এমন হচ্ছে, ডাকাত দলের সদস্যরা দিনের বেলায় স্থানীয় বাজার বা মহলস্নায় ঘোরাফেরা করছে। স্থানীয় সচেতন মানুষ অপরিচিত হিসেবে তাদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে পুলিশ সদস্য হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। তারা দাগী আসামি ধরতে এবং তদন্ত করতে এসেছে বলে পরিচয় দিচ্ছে। এমনিতেই অনেকে পুলিশ-ই ঝামেলায় জড়াতে চায় না, তাই গ্রামের মানুষ তাদের পরিচয় খুঁটিয়ে না দেখে ঝামেলায় জড়ানোর ভয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে। এরই সুযোগ নিয়ে এসব অপরিচিত ভুয়া ডিবি পুলিশ পরিচয় দেওয়া ডাকাতরা রাতের আঁধারে নির্দিষ্ট বাড়ি টার্গেট করে বাড়িতে থাকা অর্থ-সম্পদ লুট করে নিচ্ছে।

এ ছাড়াও আরেকটি অভিনব পদ্ধতিতে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে, সেটি হলো অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে ডাকাতি। ডাকাত দল অ্যাম্বুলেন্স করে একদম পলস্নী অঞ্চলে রোগী ও রোগীর আত্মীয় বা পরিবার-পরিজন সেজে ঢুকে যাচ্ছে। আর তাদের টার্গেট মতো গ্রামের কোনো একবাড়িতে ঢুকে সবকিছু লুট করে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে মিনিটে হুইসেল বাজাতে বাজাতে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। গ্রামের মানুষ কোনো কিছু বুঝে উঠতে না উঠতে ডাকাতি করে উধাও হয়ে যাচ্ছে। গত ১৮ ফেব্রম্নয়ারি গোপালগঞ্জ সদরের তিন নম্বর সুকতাইল ইউনিয়নের উত্তর সুকতাইল মোলস্না পাড়ায় এমন এক ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী বেশকিছু বছর প্রবাসজীবন কাটিয়ে দেশে ফিরেছেন। ডাকাত দল খবর জানতে পেরে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে গ্রামে ঢুকে টার্গেট অনুযায়ী প্রবাস খেটে আসা লোকটির বাড়িতে ডাকাতি করে। জানা গেছে, ভুক্তভোগীর বাড়ি থেকে ডাকাত দল বেশকিছু স্বর্ণের গহনা ও পৌনে এক লাখ টাকার মতো লুট করে নিয়েছে। সেদিন থেকে সুকতাইলের এলাকার মানুষ তাদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। শুধু সুকতাইল নয়, সম্প্রতি দেশের বেশকিছু জায়গায় এমন ডাকাতির ঘটনা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠে আসছে।

এমতাবস্থায় নিজেদের জীবন ও মালের নিরাপত্তার জন্য ডাকাতকে ভয় না পেয়ে, ডাকাত নির্মূলের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। আর এ জন্য সরকারি, বেসরকারি ও স্থানীয়ভাবে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। গ্রামকে কেন্দ্র করে ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটছে। তাই গ্রামে ডাকাতি নির্মূল করতে গ্রামবাসীকে সচেতন হতে হবে। অপরিচিত ব্যক্তি গ্রামে কারও বাড়িতে বেড়াতে আসবে বা গ্রামে কোনো কাজে আসবে, এটিই স্বাভাবিক। যদি একান্ত লোকটি কারও পরিচিত না হয়, তাহলে ভদ্রতার সঙ্গে তার আসল পরিচয় জেনে নিতে হবে। যদি তার আসল পরিচয় ও আচার-আচরণ সন্দেহজনক মনে হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনই ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি গভীর রাতে পাড়া-মহলস্নায় অ্যাম্বুলেন্স ঢুকে পড়ে, তাহলে সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে সতর্ক হয়ে থাকতে হবে। গভীর রাতে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকা যে পুরোটাই ভয়ের কিছু, এমনটি নয়। দেখা যায়, শহরে হাসপাতালে একজন ব্যক্তি মৃতু্যবরণ করার কারণে মৃত ব্যক্তির লাশ নিয়ে গ্রামে ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। ফলে গ্রামে রাতে অ্যাম্বুলেন্স আসাটা স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে দাঁড়ায়। কিন্তু এরই সুযোগ নিয়ে যেহেতু ডাকাত দল ডাকাতি করছে, তাই আমাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। যদি কারও পাড়া-মহলস্নার কাছে এসে অ্যাম্বুলেন্স হঠাৎ থেমে যায়, তাহলে নিজের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রেখে অ্যাম্বুলেন্স আসার বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে হবে। যদি ডাকাতির আবাস পাওয়া যায়, তাহলে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ এবং থানায় ইনফর্ম করতে হবে। পুলিশ আসার আগে যেন ডাকাত দল কারও জীবন মালের ক্ষতি না করতে, পারে এর জন্য গ্রামের মানুষ এক হয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা করতে হবে। ডাকাত ধরা পড়লে নিজেরা আইন তুলে না নিয়ে, পুলিশের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। এ ছাড়াও গ্রামে নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে গ্রাম পুলিশ। গ্রাম পুলিশদের দায়িত্ব অনুযায়ী রাতে গ্রাম পাহারায় আরও জোর দিতে হবে। ডাকাতি কোনো ঝামেলা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে থানায় জানাতে হবে। যদি এভাবে আমরা সবাই যার যার জায়গা থেকে সতর্ক হই, তাহলে ডাকাত নির্মূল সহজ হয়ে দাঁড়াবে। ডাকাত থেকে আমাদের জীবন ও মাল রক্ষা পাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে