সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

ভোলার প্রকৃতিক সৌন্দর্য

নতুনধারা
  ১৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি দ্বীপ জেলা হলো ভোলা। যাকে 'কুইন আইল্যান্ড অব বাংলাদেশ' বলা হয়। মেঘনা নদীর তীরে গড়ে ওঠা এই জেলা পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে দিন দিন। কী নেই এই জেলায়? মেঘনা নদীর রূপালী ইলিশ, সোনালী ধান, সবুজ বনে দুরন্ত শিয়াল, মহিষের বাথান। ভোলাবাসীর কাছে স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে ধরার জন্য এখানে আছে স্বাধীনতা জাদুঘর। স্বাধীনতা জাদুঘরটি খুবই নান্দনিকভাবে সুসজ্জিত। জাদুঘরটিতে আছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, বঙ্গভঙ্গ, দেশভাগ, ভাষা আন্দোলন, গণঅভু্যত্থানের দুর্লভ ছবিসহ সব তথ্য। এর পাশে আছে ফাতেমা খানম মসজিদ। আধুনিক স্থাপত্যরীতি ও ইসলামিক সংস্কৃতিতে পরিপূর্ণ এই মসজিদ। মসজিদটিতে প্রধান একটি গম্বুজসহ মোট চারটি গম্বুজ রয়েছে, যা মসজিদটিকে করে তুলেছে দৃষ্টিনন্দন। ভোলা জেলার আরেকটি দর্শনীয় স্থান হলো তুলাতলি টুরিস্ট স্পট। যা ভোলা সদর উপজেলায় ধনিয়া এলাকার তুলাতলি বাজারকে কেন্দ্র করে মেঘনা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে। বিশাল নদী আর তার জলরাশি আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য এক জগতে। এখানে আরও আছে, সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল পার্ক। যেখানে অবস্থিত আছে মন মতানো সব সৌন্দর্য। দক্ষিণ পাশে মনোরম পরিবেশে একটি প্রজেক্টর আছে। বাংলাদেশে এমন মাত্র দুটি প্রজেক্টর আছে। একটি ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত অন্যটি সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল পার্কে অবস্থিত। এখানে আছে শিশুদের বিনোদনকেন্দ্র। আরও আছে দর্শনার্থীদের জন্য থ্রিডি মুভি দেখার ব্যবস্থা। এখানে আছে একটি মুক্তিযুদ্ধ কমপেস্নক্স ও একটি বিশাল খেলার মাঠ। যেখানে প্রতিবছর বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। দ্বীপ জেলা ভোলা একমাত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল পার্কেই মন কাড়ার মতো পার্ক যেখানে ঘুরতে আসে দেশি-বিদেশি পর্যটক। ভোলা জেলার অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু জ্যাকব টাওয়ার। যা ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলাতে অবস্থিত পর্যটকদের জন্য নির্মিত একটি ওয়াচ টাওয়ার। এই টাওয়ার থেকে চারপাশে ১০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এটি বাংলাদেশ ও উপমহাদেশের সবচেয়ে উঁচু টাওয়ারগুলোর মধ্যে একটি। চরফ্যাশন সদর উপজেলা থেকে ১৮ কি.মি দূরে অবস্থিত 'খামার বাড়ি' যা পর্যটকদের কাছে লোভনীয় একটি জয়গা। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসুরা ঘুরতে আসেন। বাহারি প্রজাতির গাছ আর ফুলের সমাহারে মনমুগ্ধকর পরিবেশ দর্শনার্থীদের মন কাড়ে। ভোলার সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে চর কুকরি-মুকরিসহ অনেকগুলো বিস্তৃত চরে ম্যানগ্রোভ বন আর সাগরের সৈকতে মিলে অপরূপ সৌন্দর্যের আঁধার হিসেবে প্রকৃতিপ্রেমীদের নজর কাড়ছে। এক পাশে সৈকত, আরেক পাশে বন; সঙ্গে শোঁ শোঁ শব্দ। সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মায়াবী দৃশ্য যে কারও মনে অদ্ভুত দোলা দেবে। এখানে না এলে প্রকৃতির অবারিত সাজের পসরা বর্ণনায় বোঝানো কঠিন। চর কুকরি-মুকরি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। ট্রলার বা স্পিডবোটে মাঝারি খালের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় দুই পাশের ম্যানগ্রোভ বন দেখে সুন্দরবনের অবয়ব ভেসে ওঠে। পায়ে হেঁটে বনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হবে, যেন সুন্দরবনের কোনো অংশ। সুন্দরী, গেওয়া, গরান ও শ্বাসমূলীয় গাছের বন এটি। এ ছাড়া গোলপাতার সমাহারও চোখে পড়ার মতো। বনে রয়েছে হরিণসহ নানা প্রাণীর বিচরণ। কুকরির পূর্বাংশে নারিকেলবাগান। নামে নারিকেলবাগান হলেও নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজির আচ্ছাদনে ঢাকা পড়ে সূর্য। বনের ভেতর যাওয়ার জন্য গামবুট অথবা কেডস উপযুক্ত। অন্যথায় শ্বাসমূলে পা রক্তাক্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। নদীর পার আরও মুগ্ধতার। এর পার যেন শুভ্রতায় মোড়ানো। কারণ, সাদা বকের সমারোহ থাকে সেখানে। শীতের সময় পরিযায়ী পাখি এই এলাকাকে দেয় ভিন্নমাত্রা। সম্ভাবনায় সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের হাতছানি ভোলায় দ্বীপজেলা ভোলা যেন দিন দিন পর্যটনের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হচ্ছে। প্রকৃতি তার অপার সৌন্দর্য মেলে ধরছে ক্রমশ। পাহাড় আর ঝরনা ছাড়া পর্যটনের আর কোনো উপাদান যেন এখানে বাকি নেই। প্রাকৃতিকভাবে সমুদ্র সৈকত, জীববৈচিত্র্য, সাগরের জলরাশি পর্যটকের প্রতি মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। সুবিস্তৃত তারুয়া সমুদ্র সৈকত, খেজুর গাছিয়া সমুদ্র সৈকত, চর কুকরি-মুকরিতে হরিণসহ নানা জীবপ্রাণী, আর সাগর নদীর উপকূলীয় মোহনীয়তা। বাংলাদেশে ভোলা জেলার পর্যটনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। বাংলাদেশের 'কুইন আইল্যান্ড অব বাংলাদেশ' খেত প্রবেশদ্বারকে আরও শক্তিশালী করলে ভোলা জেলার পর্যটন শিল্প অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখবে।

মো. হাসনাইন রিজেন

শিক্ষার্থী

শম্ভুপুর শাহে আলম মডেল কলেজ

তজুমদ্দিন, ভোলা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে