রোববার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

নাটোর ১ : প্রচারণায় বিএনপির পুতুল, জামায়াতের কালাম

মো. আশরাফুল ইসলাম, নাটোর
  ০৬ জুলাই ২০২৫, ১৮:২৫
আপডেট  : ০৬ জুলাই ২০২৫, ১৮:৩৮
নাটোর ১ : প্রচারণায় বিএনপির পুতুল, জামায়াতের কালাম
ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপসীল কবে হবে তা ঠিক না হলেও ঘর গোছাতে তৎপরাত দেখানো শুরু হয়েগেছে। হয়তো নির্বাচনে অনেক দলই অংশ নিবেন।

তবে এখন মাঠ চষে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে শুধু বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীদের।

তিন লাখ ৪৯ হাজার ৩৬৯ জন ভোটারের এই আসনে প্রায় প্রতিদিন তারা নির্বাচনী এলাকার ১৫ টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার কোন না কোন ইউনিয়ন-ওয়ার্ডে বিভিন্ন সংগঠনের নামে আয়োজিত সভা সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন।

অংশ নিচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীদের পারিবারিক নানা অনুষ্ঠানেও। গত বছরের ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর থেকে সারাদেশের মতো নাটোরের আওয়ামী লীগ ও সকল অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা এলাকা ছাড়া। জাতীয় পাটিরও তেমন কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। তবে তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিবেন।

জেলার লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত নাটোর-০১ আসনে বরাবরই আওয়ামী লীগের চাইতে বিএনপি ও জামায়াত শক্তিশালী।

এই আসন থেকে বার বার নির্বাচিত জেলার প্রথম প্রতিমন্ত্রী বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান পটল মারা যাওয়ায় ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পান পটলের সহধর্মীনি ঢাকার মীরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইন্সটিটিউটের সাবেক অধ্যক্ষ কামরুন নাহার শিরিন।

তবে বয়স বিবেচনায় অধ্যক্ষ কামরুন নাহার শিরিন আর নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান না।

তাই এবার পরিবারের সদস্যরা বসে সিন্ধান্ত নিয়েছেন, বিএনপির মনোনয়ন পটল পরিবারে রাখতে পটল দম্পতির মেয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের পররাষ্ট্র বিষয়ক পরামর্শ কমিটির বিশেষ সহকারী ও বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য, নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুলের জন্য দলীয় মনোনয়ন চাওয়া হবে।

এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল বলেন, মায়ের বয়স বিবেচনা করে পারিবারিক বৈঠক করে সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মায়ের পরিবর্তে আমার জন্য মনোনয়ন চাওয়া হবে।

তবে দল এ বিষয়ে চুড়ান্ত সিন্ধান্ত নিবে। আর দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে সকলে মিলে মিশে বিএনপির জন্য কাজ করবেন বলেও জানান তিনি।

লালপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ পাপ্পু বলেন, ফজলুর রহমান পটল মারা যাওয়ার পর তার সহধর্মীনি অধ্যক্ষ কামরুন নাহার শিরিকে ২০১৮ সালে মনোনয়ন দিয়েছিল।

এবার বয়সের কারণে তিনি ভোট করতে চান না। তিনি নিজেই নির্বাচনী এলাকার সকল ইউনিয়ন ও দুটি পৌর কমিটির সভাপতি-সম্পাদককে জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় বিএনপিতে তার মেয়ে ভালো অবস্থান রয়েছে। বিএনপির ৩১দফা নিয়ে সারাদেশে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে ঘুরে ঘুরে জেলার নেতাদের প্রশিক্ষন দিচ্ছেন পুতুল।

আর কেন্দ্রীয় সংগঠনের সাথে তার ভালো সর্ম্পক থাকায় এবার তার জন্যই দলীয় মনোনয়ন চাওয়া হবে।

এ বিষয়ে নিজের অবস্থান জানিয়ে লালপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক সিদ্দিকুর রহমান মিষ্টু ও গোপালপুর পৌর বিএনপির আহবায়ক সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম মোলাম বলেন, ফারজানা শারমিন পুতুল তরুন, পরিশ্রমী ও চৌকস নেতা। তাকে মনোনয়ন দিলে শত প্রতিকুলতায়ও দলের বিজয় নিশ্চিত হবে। তাই তারা পুতুলকেই প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান।

এই আসনের বাগাতিপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক বাগাতিপাড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র মোশাররফ হোসেন দলীয় সমাবেশে আগামী নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় প্রার্থী ফারজানা শারমিন পুতুল হবেন বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন।

তবে লালপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক প্রয়াত ফজলুর রহমান পটলের ছেলে ডা: ইয়াসির আরাফাত রাজন দীর্ঘদিন চুপচাপ থাকলেও সম্প্রতি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি প্রচারনা দলের পক্ষে প্রচারনা চালাচ্ছেন।

তবে তিনি বলেন, মনোনয়ন চাইবো না মনোনয় দল দিবে। সেটা দলের সিদ্ধান্ত। আমি আমরা দলের হয়ে কাজ করবো।

বাগাতিপাড়া পৌরসভার মেয়র (বর্তমান সরকারের বাতিল করা) বিএনপি নেতা অধ্যক্ষ একেএম শরিফুল ইসলাম লেলিন বলেন, তারা আশা করেন এবার দলের ত্যাগী নেতা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও দীর্ঘদিন থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী তাইফুল ইসলাম টিপুকে দল এবার মূল্যায়ণ করবে।

তিনি দলের দায়িত্বপালন করতে গিয়ে অনেক জেল জুলুমের শিকার হয়েছেন। এবার দল তাকে মনোনয়ন দিলে এই আসনে বিএনপির বিজয় শতভাগ নিশ্চিত।

একই ভাবে লালপুরের গোপালপুর পৌর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সাইফুল ইসলাম রানা ও লালপুর থানা যুবদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ সরকার বলেছেন, দলের মধ্যে তাইফুল ইসলাম টিপু অনেক ত্যাগী নেতা। তাকেই দলের মনোনয়ন দেয়া উচিত।

জামায়াতে ইসলামী থেকে এখানে আগে থেকেই মনোনয়ন দেয়া হয়েছে দলের উপজেলা আমির ও লালপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদকে।

তিনি নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি পাড়া মহল্লায় সভা সমাবেশ করে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

তিনি বিজয়ী হলে তার এলাকার কোন মানুষ আর বঞ্চিত বা বৈষ্যমের শিকার হবেন না বলে সভা গুলোতে প্রচার করছেন।

ইতোমধ্যে তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল রফিকুল ইসলাম খানকে তাঁর এলাকায় এনে একাধিক সভা সমাবেশ করে নেতাকর্মীদের মাঠে সক্রিয় করেছেন।

বিএনপি-জামায়াতের বাহিরে এই আসনে এখনো কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীকে প্রকাশ্যে মাঠে ময়দানে সক্রিয় ভাবে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।

মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পাটির নেতা শিল্পপতি আবু তালহা এখানে একবার বিজয়ী হলেও এখন আর কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

গত নির্র্বাচনে এখানে তাকে বাদ দিয়ে জাতীয় পাটির প্রার্থী করা হয় ব্যারিস্টার আশিকুর রহমানকে।

এবি পাটি থেকে এখানে প্রার্থী হিসেবে প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছেন দলের জেলা সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যাংকিং ও বেসরকারি খাত বিষয়ক সহ সম্পাদক এ এস এম মোকাররেবুর রহমান নাসিম।

অপরদিকে এখান থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাবেক দুই এমপি আবুল কালাম আজাদ ও শহিদুল ইসলাম বকুল তাদের নেতাকর্মীসহ এখনো আত্মগোপনে রয়েছেন। ফলে আগামী নির্বাচনে এই আসনে প্রায় সকল দল থেকেই তরুন প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন এমনটা মোটামুটি নিশ্চিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে