শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সঞ্চয় কমে ঋণ বাড়ছে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ জরুরি

নতুনধারা
  ২৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

সঞ্চয় কমে আসাটা উদ্বেগের। আর যদি এমনটি জানা যায় যে, শুধু সঞ্চয়ই কমছে না বরং বাড়ছে ঋণ- তবে পরিস্থিতি কতটা আশঙ্কাজনক তা আমলে নেওয়া জরুরি। প্রসঙ্গত, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ছয় শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল সরকার। সেখানে জানুয়ারিতে গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ ছুঁইছুঁই। জানা যাচ্ছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি তথা মূল্যস্ফীতির কারণে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। আর এ কারণে মানুষ সঞ্চয় করার ফুসরত পাচ্ছে না। অন্যদিকে, উল্টো ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়ছে। শহর-গ্রাম সবখানেই একই চিত্র- এমনটি সম্প্রতি প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে।

আমরা মনে করি, সামগ্রিক চিত্র পর্যবেক্ষণ করতে হবে। একইসঙ্গে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মাথাপিছু সঞ্চয় বেড়েছে ৩.২৯ শতাংশ। আর ঋণ বেড়েছে ৫.৬৮ শতাংশ। অর্থাৎ মানুষের মধ্যে সঞ্চয় থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেশি। তথ্য মতে, ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত মাথাপিছু আমানত বেড়েছে মাত্র এক হাজার টাকা। আর মাথাপিছু ঋণ বেড়েছে চার হাজার টাকা। ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া লক্ষণীয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে সার্বিক আমানতের পরিমাণ ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। মাথাপিছু আমানতের পরিমাণ এক লাখ ৬ হাজার টাকা। আর ৩০ জুন ২০২৩ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে আমানত ছিল ১৬ লাখ ৮৭ হাজার ২৪ কোটি টাকা, মাথাপিছু ১ লাখ ২ হাজার। অন্যদিকে, ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত মাথাপিছু ঋণ ১৫ লাখ ৩৮ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। মাথাপিছু ঋণ ৯৩ হাজার টাকা। আর জুন ২০২৩ পর্যন্ত ১৪ লাখ ৪৬ হাজার ৭২ কোটি টাকা ঋণ ছিল। অর্থাৎ মাথাপিছু ঋণ ৮৮ হাজার টাকা।

আমরা বলতে চাই, যখন এমনটি জানা যাচ্ছে যে- আয় না বেড়ে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায় সঞ্চয়ের ওপর এ প্রভাব পড়েছে। সবকিছুর দাম বেড়েছে। মানুষের জীবিকা নির্বাহে অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় আয় বাড়ছে না- তখন পরিস্থিতি কতটা উৎকণ্ঠাজনক হতে পারে সেটি এড়ানোর সুযোগ নেই। এছাড়া এটাও বিবেচ্য, নির্দিষ্ট আয়ে যাদের সংসার চলে তাদের অনেকে এখনো সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন। ফলে তৈরি হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি। একদিকে সঞ্চয় কমছে ঋণ বাড়ছে; অন্যদিকে এর প্রভাবে যদি খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি হয় তবে সার্বিক পরিস্থিতি সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য, সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগও উলেস্নখযোগ্য হারে কমেছে বলে জানা যাচ্ছে। কেননা, সঞ্চয়পত্র মেয়াদপূর্তির পর যে হারে ভাঙানো হচ্ছে সেই হারে নতুন বিনিয়োগ বাড়ছে না। গত ছয় মাসে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ না বেড়ে কমেছে অর্থাৎ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার, একটা সময় কোনো স্কিমের মেয়াদ শেষ হলে বেশিরভাগ গ্রাহক আবার সেখানেই বিনিয়োগ করতেন। কিন্তু এখন যাদের সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হচ্ছে তারা আর নতুন করে এখানে বিনিয়োগ করছেন না। ফলে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এখন বিক্রির চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদাসল পরিশোধ বেশি করা হচ্ছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া জরুরি।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে এমন আলোচনা বারবার সামনে এসেছে। আর এখন যখন এটা জানা যাচ্ছে যে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে এমন পরিস্থিতিও সৃষ্টি হচ্ছে যেখানে- মানুষ সঞ্চয় করার ফুসরত পাচ্ছে না। অন্যদিকে উল্টো ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়ছে; তখন জীবনযাপনের ওপর এর প্রভাব সংক্রান্ত পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। এছাড়া নির্দিষ্ট আয়ে যাদের সংসার চলে তাদের অনেকে এখনো সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন- আর এতে করে যে খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে সেটিও আশঙ্কাজনক। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ ও যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে