সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ধানের বাম্পার ফলন ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে

  ১১ মে ২০২৪, ০০:০০
ধানের বাম্পার ফলন ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে

এবার সারাদেশে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। মাঠে-ঘাটে-উঠানে সোনারঙা ধান হাসছে। কিন্তু সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, শ্রমে-ঘামে ফলানো ধান নিয়ে বাজারে গিয়ে কৃষকের হাসি মলিন হচ্ছে। সঙ্গত কারণেই এটা এড়ানোর সুযোগ নেই। ধানের বাম্পার ফলন হবে কিন্তু কৃষকের মুখে হাসি নেই- এটা হতাশাজনক। বলা দরকার, ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া কৃষকের জীবনে অতিপরিচিত ঘটনা। জানা যাচ্ছে, এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। মৌসুমের দ্বিতীয় সপ্তাহে পড়তি দামের তেতো অভিজ্ঞতায় কৃষক। লোকসানের গঁ্যাড়াকলে পড়েছেন প্রায় দেড় কোটি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক।

আমরা বলতে চাই, কৃষক শস্য উৎপাদন করে যদি ন্যায্যমূল্য না পায়, তবে তা কতটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে তা আমলে নেওয়া জরুরি। তথ্য মতে, সারাদেশে চলছে ধান কাটার উৎসব। ধান মাড়াই, বাছাই আর বিক্রি নিয়ে ব্যস্ত কৃষক-কৃষানি। ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ, টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর, বগুড়া, বরেন্দ্র অঞ্চল, মাগুড়া, দিনাজপুর ও নওগাঁ এলাকায় আগাম জাতের ধান কাটা হয়ে গেছে। জানা যাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় মানভেদে কোথাও ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা মণে ধান বিক্রি হচ্ছে। অনেক এলাকায় উৎপাদন খরচই ওঠছে না কৃষকের। আবার কোথাও কোথাও উৎপাদন খরচ উঠলেও কৃষকের শ্রম আর ঘামের কোনো মূল্য থাকছে না। এদিকে নতুন বোরো ধান কম দামে বিক্রি হচ্ছে। সেই চাল বাজারে আসতে শুরু করেছে। অনেক এলাকার কৃষকরা জানিয়েছেন, চলতি বোরো মৌসুমে ধানের দাম না পাওয়ায় হতাশ তারা। এর মধ্যে গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়েছে ঝড় ও শীলাবৃষ্টি। এতে ধানের ক্ষতি হয়েছে। বাধ্য হয়েই কৃষকরা লোকসানে ধান বিক্রি করছেন বলেও জানা যাচ্ছে।

1

আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং যত দ্রম্নত সম্ভব এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া কৃষকের জীবনে অতিপরিচিত ঘটনা। কেননা এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে যে, কষ্ট করে ফসল ফলানোর পরেও কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আর এবারো তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না বলেই জানা যাচ্ছে। ফলে এই বিষয়টি অত্যন্ত শঙ্কার। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সৃষ্ট পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যেন কৃষক ন্যায্যমূল পায়।

প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য যে, বোরো ধানের দরপতন ঠেকাতে বুধবার থেকে ১২৮০ টাকা মণে ধান কিনছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এতে কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে ধানের দাম। কিন্তু টোকেন বাণিজ্যর কারণে এখনো প্রকৃত কৃষকরা সরকারি গুদামে দাম বিক্রি করতে পারেননি। অনেকে নেতা ধরেও ধান বিক্রি করতে পারছেন না। সরকারি ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা কৃষক সেজে ধান বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন এমনটিও খবরে উঠে এসেছে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। এটাও জানা যাচ্ছে যে, রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুর মাগুড়া, যশোর, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রান্তিক ও বর্গাচাষিরা ঋণ পরিশোধ ও দৈনন্দিন খরচের মেটাতে মৌসুমের শুরুতেই বাজারে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা মণে ধান বিক্রি করছেন। ডিজেল, সার, কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ বাড়ায় এবার তাদের মুনাফা হয়নি।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, কৃষকরা ন্যায্যমূল্য না পেলে তা কতটা আশঙ্কাজনক সেটি আমলে নিতে হবে। কৃষকের মুখে হাসি না ফুটলে, তারা ধান বিক্রিতে লাভবান না হলে, সেটা ইতিবাচক নয়। অন্যদিকে বাম্পার ফলন হবে অথচ কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে না, এই পরিস্থিতি অত্যন্ত ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। কেননা অনেক কৃষক ঋণ করে ফসল ফলায়। এখন যদি তারা দাম না পায় তবে তার ভয়াবহতাও অনুধাবন করতে হবে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চিত হোক- এমনটিই কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে