শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পোশাক শিল্পে কমেছে নারী শ্রমিক

সঠিক উদ্যোগ নিন
  ০১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
পোশাক শিল্পে কমেছে নারী শ্রমিক

যতই দিন যাচ্ছে তৈরি পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমছে। অটোমেশন ও অন্যান্য খাতের তুলনায় মজুরি ও সুযোগ-সুবিধা কম থাকায় এই খাতে তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ কমে গেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাপড ইন বাংলাদেশের (এমআইবি) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মতে, পোশাক খাতে নিযুক্ত মোট শ্রমিকের মধ্যে নারীর সংখ্যা কমে ৫৭ শতাংশে নেমে এসেছে। অথচ এক সময় পোশাক খাতের মোট শ্রমিকের ৮০ শতাংশের বেশি ছিলেন নারী। বিশেষ করে যারা গ্রামাঞ্চল থেকে রাজধানীতে এসে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করতেন তারা এই খাতে কাজ নিতেন। দেশের তৈরি পোশাক খাতের জন্য এমন পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।

এ কথা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে অন্যান্য খাতে চাকরির সুযোগ খুব সীমিত থাকায় আশির দশকে মূলত অদক্ষ নারী শ্রমিকরা পোশাক খাতের হাল ধরেন। ধীরে ধীরে তারা যুগান্তকারী বিপস্নব ঘটান। তাদের কারণে দেশে অর্থনৈতিক অবস্থা পাল্টে যেতে থাকে। দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে।

1

তখন বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় অনেক কম হওয়ায় নারী শ্রমিকরা কম বেতন হলেও চাকরি নিতে আগ্রহী ছিলেন। এরপর বহু বছর ধরে পোশাক খাতে পুরুষ শ্রমিকের বিপরীতে গড়ে অন্তত দুজন নারী শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হতো। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে এই অনুপাত কমেছে। কারণ নারীরা এখন পোশাক কারখানায় শ্রম দেওয়ার চেয়ে করপোরেট চাকরিতে বেশি আগ্রহী। বলার অপেক্ষা রাখে না, বছরের পর বছর ধরে নারী শ্রমিকদের অবদানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প। বিশ্ব বাজারে তৈরি পোশাকের ৭ দশমিক ৯ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীদের অংশগ্রহণ উলেস্নখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান সরকারের নারীবান্ধব নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়ন এবং সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়নের ফলে এটা সম্ভব হয়েছে। গেস্নাবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স রিপোর্ট-২০২০ অনুযায়ী, দক্ষিণ এশীয় সাতটি দেশের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশ শীর্ষ ১০০টি দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে। বিশ্বের ১৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৫০তম। ২০২০ সালে বাংলাদেশে কর্মজীবী ??নারীর সংখ্যা ১৬.২ মিলিয়ন থেকে ১৮.৬ মিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ সারাবিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত স্বরূপ। তবে, তৈরি পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকের প্রভাব এখন কমেছে। অটোমেশন ও স্পিনিং, উইভিং, ডাইং এবং ফিনিশিং সেক্টরের কারণে এটা হয়েছে। এ ছাড়া গত পাঁচ দশকে গ্রামাঞ্চলে নারী শ্রমিকদের জন্য প্রচুর কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ফলে, তারা এখন জেলা পর্যায়ে বা নিজ শহরে কাজ করতে পারেন। তাই তারা পোশাক কারখানায় কাজ করতে শহরে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। সঙ্গত কারণেই অনেক পোশাক কারখানা শ্রমিক সংকটে ভুগছে। এজন্য কেবল নারী নয়, পুরুষরাও এখন পোশাক খাতে কাজ করতে চান না। কম মজুরি, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, কঠিন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ও ভারী যন্ত্রপাতি চালানোর দক্ষতার অভাবে পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমছে। তৈরি পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়াতে হলে সঠিক পরিকল্পনা জরুরি। পাশাপাশি নারী শ্রমিকের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে