আবারও বন্যার কবলে পড়েছে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৮ জেলা। তথ্য মতে, কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি নামতে না পারায় ষষ্ঠবারের মতো ডুবেছে সিলেটের বিস্তীর্ণ এলাকা। এছাড়া পানির তোড়ে পস্নাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী জেলার নিম্নাঞ্চল। আমরা মনে করি, সৃষ্ট পরিস্থিতির ভয়াবহতা আমলে নিতে হবে। একইসঙ্গে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নও নিশ্চিত করতে হবে। বন্যার কারণে মানুষের দুর্ভোগ কতটা তীব্র হয় সেটা যেমন এড়ানোর সুযোগ নেই, তেমনিভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক পদক্ষেপও জরুরি।
উলেস্নখ্য, ফেনীর মুহুরী ও কুহুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে পস্নাবিত হয়েছে অন্তত ১০টি গ্রাম। এছাড়া ফুলগাজীতে এক যুবক নিহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। সুনামগঞ্জের সুরমা নদী পার হতে গিয়ে নৌকাডুবিতে তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন। অন্যদিকে, বন্যার কারণে পরশুরাম ও ফুলগাজীর চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষা স্থগিত করেছে প্রশাসন। উত্তরাঞ্চলের তিস্তা নদীর পানিও সমতলে দ্রম্নত বাড়ছে। টানাবর্ষণে পার্বত্য জেলাগুলোয় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। ফলে এসব এলাকার লাখো মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এছাড়া টানা বর্ষণে রাজধানীর ঢাকার নিম্নাঞ্চলেও বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে। মঙ্গলবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বন্যাপ্রবণ প্রধান প্রধান নদনদীর পানি হু-হু করে বাড়ছে। ইতোমধ্যে পাঁচ নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে উঠে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
আমরা বলতে চাই, পানিবন্দি দশা কিংবা বন্যার মতো পরিস্থিতিতে, পানিবাহিত রোগবালাই এবং বিশুদ্ধ পানির সংকট তৈরি হয়- এটিও আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। ভুলে যাওয়া যাবে না, পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ কতটা চরমে ওঠে। বন্যা পরিস্থিতি কিংবা পান্দিবন্দি দশায় মানুষ কতটা দুর্ভোগে পড়ে সেটি বিভিন্ন সময়েই জানা গেছে। নানা ধরনের ফসল ডুবে যায়। শুকনো খাবার ও শিশু খাদ্যের তীব্র সংকটও তৈরি হয়। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে। যখন সিলেটসহ আট জেলায় বন্যার বিষয়টি জানা যাচ্ছে, তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে দ্রম্নত সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদের।
বলা দরকার, সিলেটে এর আগে ২৮ মে থেকে ভারী বৃষ্টির ফলে প্রথম দফায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে গত ১৬ জুন আবার বন্যা পরিস্থিতিতে দুর্ভোগে পড়েন সিলেটের বাসিন্দারা। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে আজ পর্যন্ত ষষ্ঠবারের মতো জলাবদ্ধ পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন সিলেট নগরের বাসিন্দারা। ফলে এটিও আমলে নেত হবে। বন্যার কারণে পস্নাবিত অঞ্চলের মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ কত তীব্র হয় সেটা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। জানা গেছে, উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে যা ইতিবাচক। আমরা মনে করি, পরিস্থিতি অনুযায়ী সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ত্রাণ সংকট কিংবা যে কোনো ধরনের অনিয়ম রোধে তৎপর থাকতে হবে। কেননা, বন্যা পরিস্থিতিতে মানুষ কতটা দুর্ভোগে পড়ে তা অজানা নয়। পানিবন্দি মানুষ কেউ পাশের নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয়, কেউ আবার রাস্তা বা বাঁধের উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়। কেউ ঘরে খাট চৌকি দিয়ে মাচাং বানিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে। এছাড়া ফসল ডুবে যায়। বন্যায় শুকনো খাবার ও শিশু খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দেয়। ফলে বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। প্রতি বছরই বন্যাসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়। তাই মনে রাখা দরকার, প্রাকৃতিক দুর্যোগকে রোধ করার কোনো উপায় নেই, কিন্তু প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমানো সম্ভব। ফলে সামগ্রিক বন্যা পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।