রোববার, ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২
অতুলনীয় তারেক রহমান

৩১ দফায় রাষ্ট্র, সমাজ ও রাজনীতির নতুন সূর্যোদয়ের প্রতিক্ষা

ইমরান খান ইমন
  ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
৩১ দফায় রাষ্ট্র, সমাজ ও রাজনীতির নতুন সূর্যোদয়ের প্রতিক্ষা
৩১ দফায় রাষ্ট্র, সমাজ ও রাজনীতির নতুন সূর্যোদয়ের প্রতিক্ষা

তারেক রহমান বাংলাদেশ রাজনীতির অঙ্গনে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি তার চেতনার আলোয় জাতীয়তাবাদের সুবর্ণ দিগন্তকে উদ্ভাসিত করেছেন। যিনি তার কেবল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সন্তানই নন, বরং তিনি নিজেই হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক দুর্দমনীয় শক্তি- যার নেতৃত্বের দৃঢ়তা, দেশপ্রেম এবং দূরদর্শিতা তাকে আলাদা করে চিনিয়ে দেয়।

তারেক রহমানের জীবনের প্রতিটি ধাপে সংগ্রামের এক গভীর ছায়া বিরাজমান, কিন্তু এই ছায়ায়ও তিনি নিজের লক্ষ্য থেকে একটুও বিচু্যত হননি। ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনের কঠিন সময়ে, যখন তিনি গ্রেপ্তার হলেন এবং পরবর্তী সময়ে বিদেশে নির্বাসিত জীবন কাটালেন, তখনো দেশের মাটি থেকে তার মনের শিকড় এক মুহূর্তের জন্যও বিচ্ছিন্ন হয়নি। নির্বাসনের নীরবতা তার রাজনৈতিক অঙ্গনকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, সীমানার মধ্যে বা বাইরে থেকেও নেতৃত্ব দেওয়া যায়, দলের কর্মীদের একতাবদ্ধ করা যায় এবং দেশপ্রেমের অগ্নিশিখা প্রজ্বলিত রাখা যায়।

তারেক রহমানের রাজনৈতিক জীবন যেন এক শিকড়ের টানে বাঁধা মহিরুহের মতো- যা শত ঝড়-তুফানেও টিকে থাকে। তার চিন্তা ও কৌশলের গভীরতা, দেশের ভবিষ্যতের প্রতি তার দায়বদ্ধতা এবং একটি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্ন এসবই মিশে আছে তার প্রতিটি পদক্ষেপে। তিনি শুধু একজন রাজনীতিবিদ নন, তিনি একজন দার্শনিক নেতা, যিনি তার চিন্তা ও কর্মকান্ডের মাধ্যমে আগামী দিনের বাংলাদেশকে আলোকিত করার স্বপ্ন বুনছেন।

তারেক রহমান একজন বিরল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি দেশের মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন থেকেও তার দলের হাল শক্ত হাতে ধরে রেখেছেন, তিলে তিলে পুনর্গঠন করেছেন এবং এক অভূতপূর্ব গণ-অভু্যত্থানকে সফলতার শিখরে নিয়ে গেছেন। ১৫ বছরের দীর্ঘ একনায়কতন্ত্রের পতন ঘটিয়ে, তিনি বাঙালি জাতির আত্মবিশ্বাসে নতুন স্ফুরণ এনেছেন। ইতিহাসের পাতায় খুব কমই এমন নজির খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে একজন নেতা তার নিজ দেশে প্রবেশের অধিকার হারিয়ে, দূর প্রবাস থেকে দেশের রাজনীতিতে সর্বোচ্চ প্রভাব বিস্তার করেছেন। তারেক রহমান প্রমাণ করেছেন, নেতৃত্বের আসন শারীরিক উপস্থিতিতে নয়, বরং দূরদর্শী কৌশল, অদম্য সাহস এবং জনগণের ভালোবাসায় প্রতিষ্ঠিত হয়।

তারেক রহমানের অন্যতম প্রধান গুণ হলো তার সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও কর্মপরিকল্পনা। তিনি শুধু তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক সাফল্যের জন্য কাজ করেন না, বরং দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করার জন্য দূরদর্শী চিন্তা করেন। সুদূরপ্রসারী চিন্তা, কর্মপরিকল্পনা ও গবেষণা যা রাষ্ট্র, সমাজ এবং রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন আনতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর অর্থ হলো শুধু বর্তমান সমস্যার সমাধান নয়, বরং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলোকে মাথায় রেখে এমন পরিকল্পনা গ্রহণ করা- যা সমাজের বিভিন্ন স্তরে টেকসই উন্নয়নের পথ তৈরি করবে। রাষ্ট্র পরিচালনায় সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও গবেষণার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা সম্ভব- যা সমাজের কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়ক হয়।

উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের মতো দেশগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা ও পরিকল্পনার ভিত্তিতে প্রযুক্তি এবং শিক্ষা খাতের বিপস্নব ঘটানো হয়েছে। এর ফলে তারা তাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজেদের একটি প্রযুক্তি ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। এ ধরনের গবেষণার ভিত্তিতে তৈরি কর্মপরিকল্পনা সমাজের সব স্তরে ন্যায়, সমতা এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সহায়ক হয়, যেমনটি স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে দেখা যায়, যেখানে সামাজিক সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি একসঙ্গে চালু করা হয়েছে। রাজনীতির ক্ষেত্রেও সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও পরিকল্পনা গণতন্ত্রের সঠিক বিকাশ এবং সুশাসনের ভিত্তি তৈরিতে সহায়ক হয়। রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি শুধু তাৎক্ষণিক সমস্যার সমাধানে মনোনিবেশ করে, তবে সমাজের দীর্ঘমেয়াদি উন্নতি সম্ভব নয়। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের প্রস্তাবিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা পরিকল্পনা একটি সুদূরপ্রসারী চিন্তার প্রতিফলন, যেখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামাজিক উন্নয়ন ও বিচার বিভাগীয় সংস্কারের মতো বিষয়গুলোকে সামনে রেখে জাতির উন্নতির একটি পথনকশা তৈরি করা হয়েছে। চলুন এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। দেশ নায়ক তারেক রহমানের প্রস্তাবিত ৩১ দফা রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। যেখানে জায়গা পেয়েছে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো পুনর্নির্মাণের জন্য নেওয়া কিছু পরিকল্পনা। সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন এবং সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধনের মতো দফাগুলোতে তারেক রহমানের নেতৃত্বে সংবিধানকে আরও সমৃদ্ধ ও প্রাসঙ্গিক করার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষত, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের মাধ্যমে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার প্রস্তাবটি জাতীয় রাজনীতিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার একটি শক্তিশালী উপায়।

ক্ষমতার ভারসাম্য এবং প্রশাসনিক সংস্কারের উদ্দেশ্যে তারেক রহমানের কর্মপরিকল্পনায় প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে- যার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দফা হলো ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা। ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য উচ্চপদস্থদের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়নের প্রস্তাব, দুই মেয়াদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রিত্ব সীমাবদ্ধ রাখা এবং প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনের মাধ্যমে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাবগুলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তারেক রহমানের রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ। বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনঃপ্রবর্তন এবং বিচারপতি নিয়োগ আইনের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য তার প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলো দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে। একটি আত্মনির্ভরশীল জাতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব শক্তিশালীভাবে তারেক রহমানের বিচক্ষণতার প্রমাণ দেয়। কৃষি খাতের উন্নয়ন, শিল্পায়ন এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিত করার পরিকল্পনা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে তার দফাগুলোতে। কৃষি ও শিল্প উভয় খাতেই একটি স্বনির্ভর জাতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য, শ্রমিকদের ন্যায্যমজুরি এবং প্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে আনার প্রতিশ্রম্নতি দেওয়া হয়েছে। তারেক রহমানের কর্মসূচিতে যুবসমাজকে নেতৃত্বে আনার এবং জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে তিনি একটি শক্তিশালী ও দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি করতে চান, যারা ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবে। বেকার ভাতা প্রবর্তনের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের অভাবে থাকা যুবসমাজকে সহায়তা করার উদ্যোগ তাকে দেশের যুবসমাজের প্রতি আরও সমর্থনশীল করে তুলবে।

দুর্নীতি প্রতিরোধে তারেক রহমানের ৩১ দফা অন্তর্ভুক্ত করেছে ন্যায়পাল নিয়োগ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে তিনি দুর্নীতি বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন। রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সেবাসমূহের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্য তার নেতৃত্বে গৃহীত হবে। এছাড়া, তথ্যপ্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে একটি আধুনিক ও টেকসই জাতি গঠনের প্রস্তাব অত্যন্ত সময়োপযোগী। বিদু্যৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতের আধুনিকায়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং পরিবেশবান্ধব নগরায়ণ এই উদ্যোগগুলো জাতীয় অর্থনীতি ও পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্য আনয়নে সহায়ক হবে। প্রতিরক্ষা বাহিনীর আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার যে প্রস্তাব তারেক রহমান দিয়েছেন, তা দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক। একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা এবং স্বীকৃতি প্রদান জাতীয় ঐক্য ও জাতীয়তাবাদকে আরও সুদৃঢ় করবে।

তারেক রহমানের সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও পরিকল্পনা বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজ ও রাষ্ট্রের গুণগত পরিবর্তনের একটি স্পষ্ট রূপরেখা উপস্থাপন করে। তার নেতৃত্বে যে ৩১ দফা কর্মপরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে, তা দেশকে একটি সুশাসিত, আত্মনির্ভরশীল এবং টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রতিশ্রম্নতি বহন করে। তিনি যে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সুশাসন, আইনের শাসন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন, তা শুধু তাৎক্ষণিক সমস্যার সমাধান নয়, বরং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়ও এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। এই কর্মপরিকল্পনা একটি শক্তিশালী এবং গণমুখী রাষ্ট্রের ভিত্তি গড়ে তুলতে সহায়ক হতে পারে- যা দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য সমতা, সুবিচার এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।

তারেক রহমানের চিন্তাশীল নেতৃত্ব, জনকল্যাণমুখী পরিকল্পনা এবং দুর্নীতি মুক্ত প্রশাসনের প্রত্যয় একটি নতুন দিনের সূচনা করতে পারে, যেখানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে আরও এগিয়ে যাবে। তার লক্ষ্য কেবল বর্তমানের সমস্যাগুলোর সমাধান নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি সুষ্ঠু ও টেকসই পথ নির্দেশনা তৈরি করা। এর ফলে, বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী, সুসংহত এবং প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠতে সক্ষম হবে- যা তার জনগণের স্বপ্ন এবং আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে।

ইমরান খান ইমন : সাবেক সদস্য (আহ্বায়ক কমিটি) ও সাবেক টিম প্রধান মেট্রো টিম-৬, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে