বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২
পাঠক মত

চিকিৎসা বাণিজ্য

হাসিবুল হাসান হিমেল শিক্ষার্থী ঢাকা কলেজ
  ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
চিকিৎসা বাণিজ্য

মানুষের বাঁচার জন্য পাঁচটি মৌলিক চাহিদা হলো- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা। এই পাঁচটি মৌলিক চাহিদা যা না থাকলেই নয়। এর মধ্যে চিকিৎসা অন্যতম। চিকিৎসা মানুষের একটি অন্যতম মৌলিক অধিকার। অসুস্থ ব্যক্তির সুস্থতার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এক কথায় জীবনকে বিপণ্ন হওয়া থেকে বাঁচাতে এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে মানুষকে পূর্বের ন্যায় সচ্ছলতা ফিরিয়ে দেওয়াই হলো চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য। বর্তমানে নামি ডাক্তার এবং দামি হাসপাতাল না হলে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পরে। এ ছাড়া সাধারণ ঠান্ডা-কাশি হলেও আমরা অর্থ খরচ করে ডাক্তারের পেছনে দৌঁড়াতে পছন্দ করি। তবে চিকিৎসা প্রদান বর্তমানে সেবা থেকে সরে গিয়ে ব্যবসায় রূপ নিয়েছে। চিকিৎসক মানেই কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার উৎস। নির্দিষ্ট ক্লিনিকে সেবা প্রদান ও কোম্পানির ওষুধ লিখলে ঘরে বসেই ক্লিনিক ও ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে পাওয়া যায় বিভিন্ন সুবিধা। ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে টয়লেট টিসু্য থেকে শুরু করে পাওয়া যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্য। চিকিৎসা প্রদানের নামে ব্যবসা হিসেবে গড়ে উঠেছে ক্লিনিক। সরকারি হাসপাতালে নামমাত্র চিকিৎসা প্রদান ও নিজের ক্লিনিকের প্রচারণা চালায় কিছু সংখ্যক চিকিৎসক। জনগণের টাকাতেই কিন্তু তারা মেডিকেল কলেজ থেকে পড়ে এখন ডাক্তার হয়েছে। কিন্তু ভিজিট ছাড়া তারা রোগী দেখে না। ভিজিট নেওয়াটা যদিও তাদের অধিকার, তবে সঠিক চিকিৎসা প্রদানও তাদের দায়িত্ব। সরকারি হাসপাতালে নামমাত্র খরচে চিকিৎসা করানো যায়, কিন্তু ক্লিনিকগুলোতে চলে টাকার খেলা। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে বাধ্য হয়ে আসতে হয় ক্লিনিকে। সেখানে চলে চিকিৎসা বাণিজ্য। উপজেলা পর্যায় ও সদর হাসপাতালগুলোতে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক। মূলত সরকারি হাসপাতালের সামনে দিয়ে চালু করা হয় ক্লিনিকগুলো। বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়েছে শত শত প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার। সরকারি হাসপাতালের এই চিকিৎসকরাই রোগী দেখেন এসব ক্লিনিকে। এসব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের বেশিরভাগেরই নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। স্থানীয় নেতাকর্মীদের ক্ষমতার জোড়ে তারা ব্যবসা করে। বর্তমানে রোগী মারার কারখানা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে অনেক ক্লিনিক সেন্টার ও প্রাইভেট হাসপাতালগুলো। নানা সমালোচনার মধ্যেও সরকারি হাসপাতালের একশ্রেণির চিকিৎসকের সহায়তায় ক্লিনিক সেন্টার মালিকদের যথেষ্ট টেস্টবাণিজ্য চলছে বছরের পর বছর। অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ চিকিৎসক দিয়ে সেবা প্রদানের ফলে অনেক সময় রোগীর মৃতু্য ঘটে। রোগী মারা যাওয়ার পর লাশ আটকে রেখে টাকা আদায়ের ঘটনাও ঘটে থাকে।

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সৃষ্টিকর্তার পরই মানুষ চিকিৎসকের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সেই চিকিৎসকরাই যখন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পরে তখন স্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব নেবে কারা? তাই এসব অবৈধ ক্লিনিক, চিকিৎসা ব্যবসা ও ডায়াগনোস্টিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করতে ও চিকিৎসাসেবার মান নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ ও জনসাধারণকে সোচ্চার হতে হবে।

নাফিজ-উর-রহমান

শিক্ষার্থী

ঢাকা কলেজ, ঢাকা

তীব্র শীতে পথশিশুদের যত্ন নিতে হবে

শীত ঋতু প্রকৃতির এক অনন্য সৌন্দর্য বয়ে আনে, তবে সমাজের একটি বড় অংশের জন্য এটি নিদারুণ কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে আমাদের পথশিশুরা। সমাজের এই অবহেলিত শ্রেণি দিনের পর দিন খোলা আকাশের নিচে শীতের প্রকোপ সহ্য করে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যায়। তাদের জীবনের এই দুর্দশা আমাদের মানবতার জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ।

পথশিশুরা সাধারণত রাস্তাঘাট, ফুটপাথ বা বিভিন্ন পার্কে রাত কাটায়। শীতকালে যখন তাপমাত্রা হ্রাস পায়, তাদের জন্য এটি বেঁচে থাকার এক ভয়ানক লড়াইয়ে পরিণত হয়। শরীরে সঠিক পরিমাণে গরম পোশাক না থাকায় শীতজনিত অসুখ-বিসুখ যেমন ঠান্ডা, জ্বর, নিউমোনিয়া প্রভৃতি রোগে তারা আক্রান্ত হয়। পর্যাপ্ত খাবার এবং গরম আশ্রয়ের অভাবে তাদের জীবন আরও বেশি হুমকির মুখে পড়ে।

বাংলাদেশের মোট পথশিশুর মধ্যে অর্ধেকের অবস্থা ঢাকায়? বিভিন্ন বাস স্টেশন, ট্রেন স্টেশন ও পস্নাটফর্মসহ বিভিন্ন মাঠে ও রাস্তার ধারে কাতর জীবন কাটায় শিশুরা। ভিক্ষাবৃত্তি কিংবা ছোটখাটো কাজ করে আহার জোটায় পথশিশুরা। শীতকালীন এই সময়ে বাহিরে রাত কাটানো তাদের জন্য অতিরিক্ত কষ্ট বয়ে আনে। পথশিশু শব্দটা শুনলেই আমাদের বাবা-মা বা পরিবার বিচ্ছিন্ন শিশুদের কথা মনে পড়ে। ফুটপাত বা স্টেশনে অবস্থানরত এই শিশুদের খাদ্য, বস্ত্র কোনোটিই নেই। এছাড়া পথশিশুদের শিক্ষার কথা ভাবাও বহু দূর? তবে আসন্ন শীতের এই মৌসুমে তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব। ঢাকাসহ দেশের সকল পথশিশুদের এই দুঃখ দূর করার জন্য সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন। পথশিশুদের শীত থেকে রক্ষা করার জন্য তাদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর পদক্ষেপ। পুরনো কম্বল, সোয়েটার, জ্যাকেট, টুপি, মোজা সংগ্রহ করে তাদের হাতে তুলে দেওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একত্রে এ কাজটি করতে পারে। তীব্র শীতে পথশিশুদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। স্থানীয় স্কুল, মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টার বা খালি জায়গাগুলোকে অস্থায়ী শীতকালীন শেল্টার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এখানে তাদের জন্য গরম কাপড় ও খাবারের ব্যবস্থাও করা যেতে পারে।

শীতকালে পথশিশুদের পুষ্টির অভাব পূরণে গরম খাবার ও পানীয় সরবরাহ করা জরুরি। বিভিন্ন সংগঠন বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে এমন ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। শীতকালীন রোগ প্রতিরোধের জন্য ফ্রি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। স্থানীয় চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবীরা এ কাজে অংশ নিতে পারেন। সমাজের প্রতিটি শ্রেণির মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, গণমাধ্যম এবং বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ বিষয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে।

পথশিশুরা আমাদের সমাজেরই অংশ। তাদের প্রতি অবহেলা করা মানে আমাদের নিজেদের প্রতি দায়িত্বকে অবজ্ঞা করা। একসঙ্গে কাজ করলে শীতের তীব্রতায় তাদের কষ্ট অনেকটাই লাঘব করা সম্ভব। আসুন, আমরা সবাই মিলে তাদের জন্য সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিই। আমাদের ছোট্ট একটি পদক্ষেপই হতে পারে কোনো পথশিশুর জীবনের জন্য বড় পরিবর্তন। মানবতা শুধু কথায় নয়, কাজেই ফুটে ওঠে। এবার শীতকালটি তাদের জন্য একটু উষ্ণ করার দায়িত্ব আমরা নেব কি?

রাকিব হাসান

সমাজবিজ্ঞান বিভাগ

ঢাকা কলেজ

কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার দূর করবে বেকারত্ব

বর্তমানে বেকারত্ব আমাদের দেশের প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া অধিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও। এর প্রধান কারণ বেশিরভাগ ছাত্রসমাজ ঝুঁকছে চাকরির দিকে। কিন্তু দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে চাকরি না থাকায় তাদের ভুগতে হচ্ছে বেকারত্বে। তবে এভাবে চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হয়েও দূর করা যায় বেকারত্ব। আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান দেশ হলেও কৃষিকেই দেখা হয় নিম্নমানের পেশা হিসেবে। বেকারত্ব দূরীকরণে প্রথমেই আমাদের এমন মনোভাবকে হটাতে হবে। কোনো পেশাই যে ছোট নয়, এমন মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। এ ছাড়া সুপরিকল্পিতভাবে কৃষিকার্য পরিচালনা করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। বর্তমানে প্রযুক্তির যুগে কৃষিক্ষেত্রেও বিভিন্ন ধরনের উন্নত প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটেছে। সেসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম সময় কম খরচে স্বল্প খাটুনিতে অধিক ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। আমাদের দেশে কৃষি পেশায় যারা নিয়োজিত আছেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগটাই হলো নিরক্ষর। আর তাদের পক্ষে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুপরিকল্পিতভাবে কৃষিকার্য পরিচালনা করা ততোটা সহজসাধ্য নয়, যতোটা সহজসাধ্য আমাদের শিক্ষিত বেকারদের পক্ষে। আমারা চাইলেই উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষিকার্য পরিচালনা করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারি। এর ফলে একদিকে যেমন বেকারত্ব দূর হবে, অন্যদিকে দেশের খাদ্যের জোগান বৃদ্ধি পাবে। এমনকি আমরা আমাদের উৎপাদিত ফসল বাইরের দেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখতে পারব। তাই আমাদের ছাত্রসমাজের উচিত, শুদু চাকরির দিকে না ঝুঁকে উদ্যোক্তা হয়ে কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের স্বাবলম্বী করে তোলার দিকে অধিক গুরুত্বারোপ করা। তাহলে যেমন বেকারত্বের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে, তেমনি আমাদের দেশ, জাতি এবং সমাজও আর্থিকভাবে উন্নত হবে।

হাসিবুল হাসান হিমেল

শিক্ষার্থী

ঢাকা কলেজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে