শীতকাল দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য ভীষণ কষ্টের। খাবারের চেয়েও তাদের শীত নিবারণ অতীব প্রয়োজন হয়ে পড়ে। শৈত্যপ্রবাহের কষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার ন্যূনতম ব্যবস্থাপনাও তাদের থাকে না। ফলে, অসহায় ও হতদরিদ্রদের কষ্ট কেবল বেড়েই যায়। প্রসঙ্গত, জানা যাচ্ছে যে, ঘন কুয়াশার সঙ্গে বইছে কনকনে ঠান্ডা বাতাস। গত মঙ্গলবার রাজধানীসহ সারাদেশে বেড়েছে শীতের দাপট। বিশেষ করে উত্তরের জনপদে পৌষের হাড় কাঁপানো শীতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। ফলে, শীতের দুর্ভোগ এবং মানুষের বিপর্যস্ত পরিস্থিতি আমলে নেওয়া জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।
প্রসঙ্গত, পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় টানা দু'দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে হিমালয়ের কোলঘেঁষা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বাড়তে থাকে শীতের তীব্রতা। রাতভর ঝিরিঝিরি হিমেল বাতাসের সঙ্গে ঝরতে থাকে কুয়াশা। ভোরে বেড়ে যায় কুয়াশার দাপট। এছাড়া, এর আগে গত শনিবার পর্যন্ত টানা পাঁচ দিন উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে বয়ে যায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তথ্য মতে, মঙ্গলবার তেঁতুলিয়ায় দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় তেঁতুলিয়ায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ, ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ ৬-৭ কিলোমিটার।
আমরা বলতে চাই, শীতে অনিবার্যভাবেই প্রকৃতিতে ঘটে কিছু পরিবর্তন। অল্প শীত উৎসবের আমেজ নিয়ে এলেও তীব্র শীত জীবনযাত্রা বিপন্ন করে তোলে মানুষজনের। বিশেষ করে দরিদ্ররা শীতের কাপড়ের অভাবে কষ্ট পায়। এ সময় শীতজনিত নানা রোগব্যাধিও দেখা দেয়। এ কারণে শীত মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শীতের তীব্রতা ও জনদুর্ভোগের বিষয়টি জানা যাচ্ছে- যা আমলে নিতে হবে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এটাও জানা যায়, বিভিন্ন জায়গায় ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে চারপাশ। দূরপালস্নার বাসসহ অন্যান্য যান দিনের বেলাও লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। সঙ্গে শীতের তীব্রতা বাড়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে শ্রমজীবী মানুষের। বেড়েছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ।
এ প্রসঙ্গে আমরা বলতে চাই, সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় রাখা জরুরি- শীত মৌসুমে শিশুদের ঠান্ডাজনিত নানারকম রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। ডায়রিয়া, জ্বর, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয় শিশুরা। এছাড়া, নানা বয়সি মানুষ শীতজনিত রোগে ভোগে। সঙ্গত কারণেই শীতজনিত রোগব্যাধি থেকে মানুষজনকে রক্ষার করার জন্য সংশ্লিষ্টদের কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। তীব্র শীতে দরিদ্র ও অসহায় মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সেজন্য গরম কাপড় সরবরাহ করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু সরকার নয়, সমাজের বিত্তবানরাও এ জন্য এগিয়ে আসতে পারেন। আর এই লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। জনসচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে।
তথ্য মতে, কোথাও কোথাও হিমেল বাতাসে শীতকষ্টে পড়েছে শুধু মানুষই নয় ও পশুপাখিও। মঙ্গলবার কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জয়পুরহাটে কুয়াশার সঙ্গে দমকা বাতাস বাড়িয়ে দিয়েছে শীতের প্রকোপ। এছাড়া, এটা আমলে নেওয়া দরকার যে, নতুন বছরের প্রথম মাসেই কয়েক দফা শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ফলে, গত বছরের তুলনায় এবারের জানুয়ারিজুড়ে শীত বেশি পড়বে এটাও আলোচনায় এসেছে। যা কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। জানুয়ারিতে এক থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি এবং এক থেকে দুটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ থাকতে পারে। তাপমাত্রা কমে এলেও রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, সিলেট বিভাগে ঠান্ডার অনুভূতি বাড়বে বুধবার থেকে এবং ধীরে ধীরে মধ্যাঞ্চল হয়ে দেশের পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত এর বিস্তার হতে পারে এমনটিও আলোচনায় এসেছে। সঙ্গত কারণেই মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে এবং তীব্র শীত মোকাবিলায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।