রোববার, ১১ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২
পাঠক মত

মানবতার ডাকে শীতার্তদের পাশে

মালিহা মেহনাজ শিক্ষার্থী শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিউট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
  ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
মানবতার ডাকে শীতার্তদের পাশে

বাংলাদেশে শীতের আগমন প্রকৃতির বৈচিত্র্য ও ঋতুবৈচিত্র্যের একটি বিশেষ দিক। তবে, দেশের উত্তরের হিমেল হাওয়া, পাহাড়ি এলাকার ঠান্ডা এবং শহরের খোলা আকাশের নিচে বসবাসকারী মানুষদের কাছে শীত শুধুমাত্র একটি ঋতু নয়, এটি তাদের বেঁচে থাকার সংগ্রামের প্রতীক। শীতের তীব্রতায় একজন সামর্থ্যবান মানুষ উষ্ণতার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে পারলেও অগণিত শীতার্ত মানুষ আছে যারা একখন্ড কাপড় বা কম্বলের অভাবে দিন পার করে। মানবিক দায়িত্ববোধ থেকেই এই সময়ে শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে এগিয়ে আসা দরকার।

প্রতি বছর শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, ঠাকুরগাঁও এবং নীলফামারী জেলার দরিদ্র মানুষ শীতের প্রকোপে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায়। এ ছাড়া ঢাকা শহরের ফুটপাতে বসবাসকারী কিংবা ভাসমান মানুষের জন্য শীতের রাতগুলো দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। তারা প্রায়শই পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র পায় না, যা তাদের শারীরিক কষ্টের পাশাপাশি শীতজনিত নানা রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। শিশু এবং বয়স্করা এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হয়।

এই শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং সংগঠনগুলো প্রতিবছর নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। স্থানীয় প্রশাসনও এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শীতবস্ত্র বিতরণের পাশাপাশি খাবার সরবরাহ ও চিকিৎসা সেবারও আয়োজন করা হয়। তবে, এ ধরনের উদ্যোগগুলো শুধু শীতের কষ্ট কিছুটা লাঘব করে, এটি দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নয়। শীতার্ত মানুষের জন্য টেকসই সমাধান তৈরি করতে হলে তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, কর্মসংস্থান এবং বাসস্থান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। শীতকালে অনেক দরিদ্র পরিবার কাজ হারায় এবং এর ফলে তাদের আয় বন্ধ হয়ে যায়। এই সময়ে তাদের খাদ্যের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

মানুষের সাহায্য করার এই উদ্যোগগুলোতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একটি বড় ভূমিকা পালন করে। অনেক সংগঠন এবং ব্যক্তি ফেসবুক বা অন্যান্য মাধ্যম ব্যবহার করে তহবিল সংগ্রহ করে। এছাড়াও, কিছু মানুষ নিজেরা গ্রামে গিয়ে দরিদ্রদের হাতে সরাসরি সাহায্য পৌঁছে দেন। এমন উদ্যোগগুলো মানুষের মধ্যে সহমর্মিতা এবং মানবিকতার বোধ জাগ্রত করে।

শীতকালে শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো কেবল একটি দায়িত্ব নয়, এটি একটি মানবিক আহ্বান। ছোট একটি কম্বল বা একটি গরম কাপড় কারও জন্য জীবন বাঁচানোর কারণ হতে পারে। আমাদের এই উদ্যোগ শুধু তাদের জীবনে উষ্ণতা নিয়ে আসবে না, এটি সমাজে একাত্মতা এবং মানবিকতার বার্তা ছড়িয়ে দেবে। তাই, আসুন, মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই। কারণ, আপনার একটি ছোট উদ্যোগই পারে বড় পরিবর্তনের সূচনা।

মালিহা মেহনাজ

শিক্ষার্থী

শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিউট

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে