বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। যদি প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানি বাড়াতে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকে- তবে সৃষ্ট পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। জানা যায়, দেশের কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এছাড়া, কৃষিপণ্যের মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে রপ্তানি আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রেও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। রপ্তানি বাড়াতে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। স্বাভাবিকভাবেই এই চিত্র সুখকর নয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
তথ্য পর্যালোচনায় জানা যায়, বাংলাদেশে উৎপন্ন কৃষিপণ্যের ০১ শতাংশেরও কম প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। যা বিভিন্ন দেশের তুলনায় অনেক কম। এই খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য খাত জিডিপিতে ২ শতাংশেরও কম অবদান রাখছে- যা পাশের দেশের তুলনায় অনেক কম। যেমন- থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কায় জিডিপিতে এই খাতের অবদান ৭ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ফিলিপিন্সে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। অথচ কৃষিপণ্যে মূল্য সংযোগে একদিকে যেমন অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে, তেমনি রয়েছে উৎপাদিত পণ্যের অপচয় রোধ ও ন্যায্যমূল্য পাওয়ার সুযোগ। তাই এই দিকগুলোকে বিবেচনায় রেখে যত দ্রম্নত সম্ভব প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।
প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য খাতের বাজার সম্প্রসারণে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা আছে। এছাড়া, পর্যাপ্ত ও অ্যাক্রেডিটেড ল্যাবের অভাব, গ্রহণযোগ্য সনদ প্রদানে দীর্ঘসূত্রতা, কোল্ড চেইন সিস্টেমের অনুপস্থিতি, উপকরণ আমদানিতে উচ্চ শুল্ক, এলসি সমস্যা, জ্বালানি সমস্যা খাতটির বিকাশের অন্যতম অন্তরায় হিসেবে দেখছেন উদ্যোক্তারা। তাই জরুরি ভিত্তিতে এই প্রতিবন্ধকতাগুলোকে বিবেচনায় রেখে সংকট সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে, সম্প্রতি বর্ধিত ট্যাক্স-ভ্যাট নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা- এটা এড়ানো যাবে না।
তথ্য মতে, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব, জার্মানি, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্যসহ ১৩৭টি দেশে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হয়। কৃষিজাত পণ্যের মধ্যে রয়েছে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, তাজা ও হিমায়িত সবজি, ফলমূল ইত্যাদি। আর প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের মধ্যে রয়েছে মসলা, চানাচুর, ঝালমুড়ি, বিস্কুট, সস, জেলি, আলুপুরি, পাপড়, নুডুলস, চকোলেট, বিভিন্ন ধরনের আচার, জুস, ফ্রুট ড্রিংক, চিপসসহ বিভিন্ন পণ্য। কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য খাতের সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী- ২০২২ সালে কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক বাজারের আকার ছিল ১৩ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন বা ১৩ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। গত বছর বাংলাদেশের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের বাজার (দেশীয় চাহিদা ও রপ্তানি) ছিল ৪৮০ কোটি ডলারের। আর কৃষিপণ্যের বাজার ছিল চার হাজার ৭৫৪ কোটি ডলারের। এছাড়া, দেশে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের প্রায় এক হাজার কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্রতম। বাকি ১০ শতাংশ মাঝারি ও বড়। এর মধ্যে রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ২৫০টি কারখানা। এই তথ্যগুলো আমলে নেওয়া এবং সার্বিক চিত্র খতিয়ে দেখে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।
সর্বোপরি, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না, এটি দুঃখজনক। যত দ্রম্নত সম্ভব বাধা দূর করতে হবে। এছাড়া রপ্তানি বাজারে যেতে পণ্যের মানসনদ লাগে; কিন্তু তার জন্য বিশ্বমানের ল্যাব সুবিধা দরকার। এটিও আমলে নিতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এই খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।