শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি

  ০৫ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি

শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ, শ্রমিক অসন্তোষ কিংবা শিল্প কারখানায় যে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি উৎপাদন ব্যবস্থাকে ব্যাহত করে। এতে রপ্তানি কমে যাওয়া, ক্রেতা হ্রাস পাওয়াসহ নানাবিধ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি হয়। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, সড়ক অবরোধে একদিকে জনগণের ভোগান্তি বাড়ে, অন্যদিকে বায়ারদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সর্বোপরি জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। প্রসঙ্গত, তৈরি পোশাক খাত দেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম উৎস। ফলে, এই খাতে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি শঙ্কাজনক।

সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, চাকরিচু্যতির প্রতিবাদ, ন্যায্য মজুরি ও রমজান মাসে কর্মঘণ্টা কমানোসহ বিভিন্ন দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ডায়নামিক সোয়েটার কারখানার শ্রমিকরা। গত সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা সাভারের উলাইল এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে কয়েক কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন ওই সড়কে চলাচলরত যাত্রী ও পথচারীরা। জানা যায়, আন্দোলনকারী শ্রমিকরা পার্শ্ববর্তী আনলিমা গার্মেন্টস, আল মুসলিম গার্মেন্টসের শ্রমিকদের রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান। কিন্তু অন্য কারখানার শ্রমিকরা তাতে সাড়া না দেওয়ায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আনলিমা গার্মেন্টস লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোঁড়েন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ভাষ্য, গত ডিসেম্বরে পিসরেটে মজুরি বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করলে মালিকপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিল- মজুরি বাড়াবে। কিন্তু মজুরি বাড়েনি। ওভারটাইমও বাড়ায়নি। এ নিয়ে রোববার শ্রমিকরা কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে যান। কিন্তু মালিকপক্ষ আলোচনা করতে অস্বীকার করে এবং উল্টো সোমবার কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টাঙিয়ে দেয়। এর প্রতিবাদে শ্রমিকরা সড়কে বিক্ষোভ করেন।

অন্যদিকে, ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে গাজীপুরে বিক্ষোভ করেছেন কেয়া গ্রম্নপের শ্রমিকরা। গত সোমবার সকালে মহানগরের জরুন এলাকায় কারখানার সামনে তারা বিক্ষোভ করেন। এছাড়া, গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া বাইপাস এলাকায় পোশাক কারখানার এক নারী শ্রমিকের মৃতু্যর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মহাসড়কে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় শ্রমিকরা কারখানায় ভাঙচুর ও কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেন। বিক্ষোভের কারণে সোমবার সকাল ৮টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার ভেতর থেকে চারটি মোটর সাইকেল এনে আগুন ধরিয়ে দেন। একই সঙ্গে কারখানার কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার পুড়িয়ে ফেলেন। কারখানার ভেতর দফায় দফায় ভাঙচুর চালানো হয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

আমরা বলতে চাই, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। শ্রমিক অসন্তোষ, জ্বালাও পোড়াও ভাংচুরের মতো ঘটনা কোনোভাবেই সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। এটাও বলা দরকার, যে কোনো যৌক্তিক দাবির বিষয়টি যেমন সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে, তেমনিভাবে কেউ যদি বাইরের ইন্ধনে পরিকল্পিতভাবে শিল্প কারখানায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চেষ্টা করে কিংবা জ্বালাও-পোড়াও করে তবে এটাও গ্রহণযোগ্য নয়।

সর্বোপরি শ্রমিক অবরোধ, অসন্তোষকে কেন্দ্র করে পোশাক খাতের ক্ষতি হতে থাকলে সেটি উৎকণ্ঠার। সঙ্গত কারণেই সাম্প্র্রতিক ঘটনাগুলো আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে বলা দরকার, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য নয়। দেশকে এগিয়ে নিতে, অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে শিল্প খাতের স্বাভাবিকতা জরুরি। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। শিল্প খাতে স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে- এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে