আজ তোমাদের জন্য প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করা হলো
প্রশ্ন: প্রায়ই শোনা যায় পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। ৫টি বাক্যে এর কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: পৃথিবীর চারদিক ঘিরে থাকা বায়ুমন্ডলে আছে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, জলীয়বাষ্পসহ অন্যান্য গ্যাস- যাকে গ্রিনহাউস গ্যাস বলে। এরা সূর্যের তাপ পৃথিবীতে আসতে কোনো বাধা দেয় না কিন্তু উত্তপ্ত পৃথিবী থেকে তাপকে চলে যেতে বাধা দেয়, ফলে পৃথিবী রাতের বেলায়ও গরম থাকতে পারে। এ গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর মধ্য বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড বেশি থাকায় এরা বেশি বেশি তাপ ধরে রাখতে পারছে। তাই পৃথিবীর তাপমাত্রা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: গ্রিনহাউস গ্যাস কী? আমরা দেখি যে, বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে আমাদের ওপর কী প্রভাব পড়ছে বলে তুমি মনে কর? ৩টি বাক্যে লেখ।
উত্তর: বায়ুমন্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন ও জলীয়বাষ্প গ্রিনহাউসের কাচের মতো কাজ করে। এরা সূর্যের তাপ পৃথিবীতে আসতে বাধা দেয় না। কিন্তু এ গ্যাসগুলো উত্তপ্ত পৃথিবীতে থেকে তাপকে চলে যেতে বাধা দেয়। ফলে পৃথিবী রাতের বেলায়ও গরম থাকে। এসব গ্যাসকে গ্রিনহাউস গ্যাস বলে।
পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির কারণে আমাদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে আমি মনে করি। যেমন এ উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে এবং মেরু অঞ্চল ও পর্বতের চূড়ার বরফ গলে যাচ্ছে এবং সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় দেশগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শুধু তাই নয়, এর ফলে সাগর থেকে নদীতে লোনা পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রশ্ন: জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে কীভাবে রক্ষা করা সম্ভব বলে তুমি মনে কর? ৫টি বাক্যে লেখ।
উত্তর: জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা উচিত-
১. বন উজাড় না করে অধিক পরিমাণে গাছ লাগানো।
২. কার্বন ডাইঅক্সাইড কম উৎপন্ন হয় এমন জ্বালানি ব্যবহার।
৩. কলকারখানা স্থাপনের আগে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ।
৪. অধিক পরিমাণে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার।
৫. গ্রিনহাউস গ্যাসের ব্যবহার কমানো।
প্রশ্ন: তোমাকে এমন একটি এলাকায় বাস করতে বলা হলো যেখানে প্রতি বছর কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। ওই পরিবেশে তুমি কীভাবে খাপ খাইয়ে চলবে? ৫টি বাক্যে লেখ।
উত্তর: ওই এলাকায় খাপ খাইয়ে চলার জন্য আমি নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করব-
১. দুর্যোগ শুরুর আগেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
২. শুকনো খাবার সংরক্ষণ করে রাখব।
৩. শিশু, বৃদ্ধ ও গৃহপালিত পশু-পাখিকে আগেই আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাব।
৪. বন্যার কারণে কোনো জায়গা পানিতে ডুবে থাকলে তাতে ভাসমান ধাপ তৈরি করে তার ওপর মাটি দেব এবং ওই ধাপের ওপর লাউ, শিম, বেগুন, ঢেঁড়স, টমেটো, ঝিঙা প্রভৃতি চাষ করব।
৫. লবণাক্ত মাটিতে জন্মাতে পারে এ রকম ফসলের জাত উদ্ভাবন করে চাষ করার চেষ্টা করব।
প্রশ্ন: গ্রিনহাউস কেন গরম থাকে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: কাঁচ তাপ কুপরিবাহী। কাঁচের ভেতর দিয়ে তাপ সহজে চলাচল করতে পারে না। কিন্তু আলো খুব সহজেই কাঁচের ভেতর দিয়ে চলাচল করতে পারে। গ্রিনহাউসের দেয়াল এবং ছাদ কাঁচের তৈরি। এ কারণে সূর্যের আলো খুব সহজেই কাঁচের ভেতর দিয়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে। অন্যদিকে বাইরের ঠান্ডা ঘরের ভেতরে আসতে পারে না। আবার ঘরের ভেতরের গরমও বাইরে যেতে পারে না। এতে গ্রিনহাউসের ভেতরটা বেশ গরম থাকে।
প্রশ্ন: পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস বেড়ে যাওয়ার কারণগুলো ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: পৃথিবীতে অধিক হারে লোকসংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে আসবাবপত্রসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের চাহিদা। সে চাহিদা পূরণে কলকারখানা ও যানবাহনে কয়লা, কেরোসিন, পেট্রল পোড়ানো হচ্ছে। এসব জ্বালানি পোড়ানোর ফলে পরিবেশে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে, নতুন নতুন ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্র তৈরির জন্য গাছপালা কেটে বন উজাড় করা হচ্ছে। এ কারণে গাছ বায়ুমন্ডল থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করছে কম। ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড বেড়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কী কী হতে পারে? আলোচনা কর।
উত্তর: বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চল ও পর্বতের চূড়ার বরফ গলে যাচ্ছে। ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এভাবে তাপমাত্রা ও সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়তে থাকলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। সাগর থেকে নদীতে নোনা জল ঢুকে পড়তে পারে। এ ছাড়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ঘন ঘন ঘটতে পারে।