আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর) আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাপ করছেন বিএনপির দুই নেতা।
তারা হলেন-শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সভাপতি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শফিকুর রহমান কিরন এবং জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও বাংলাদেশ কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা কর্নেল (অব.) এসএম ফয়সাল আহমেদ।
তারা দলীয় সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থিতার কথা জানান দিচ্ছেন। পাশাপাশি দলের শীর্ষ পর্যায়েও লবিং-তদবির অব্যাহত রেখেছেন।
এদিকে আমিনুল ইসলাম বুলু দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ ধরে বিকাশ/রিচার্জ ব্যবসায়ী কমিশন বৃদ্ধি ও সাধারণ জনগনের মিনিট ও এমবির মেয়াদ আনলিমিটের করার জন্য বছরের পর বছর জনমত তৈরি করে চলেছেন।
বিগত সরকারের আমলে আমিনুল ইসলাম বুলু বিটিআরসির এক সেমিনারে বক্তব্যে বলেছিলেন আমার টাকায় কিনা জিবি মিনিটের মেয়াদ থাকবে কেন? যা রিতি মতো দেশ বিদেশে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে ।এছাড়া তিনি এফবিসিসিআইয়ের জেনারেল বডির মেম্বার ।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সম্পর্কে বুলু বলেন, শরিয়তপুর ২ আসনে তেমন কোন উন্নত হয়নি। স্বাধীনতার পর থেকেই প্রতিটি সরকারের অবহেলায় ছিল এই এলাকা।
বিশেষ করে শরীয়তপুরের প্রতিটি রাস্তাঘাট ও অলিগলির দুরবস্থা।ভাঙাচোরা ও খানাখন্দময় সড়কগুলো যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
বুলু বলেন, মানুষ পরিবর্তন চায়। নতুন নেতৃত্ব চায়। সেই জায়গায় বিকল্পধারা বাংলাদেশ নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। কিংবদন্তি নেতা ও খ্যাতিমান চিকিৎসক ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী দলে থেকে আমি গণমুখী এই দলের অগ্রযাত্রার সঙ্গী হতে চাই।
জানা গেছে, জেলার উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এ আসনটি নড়িয়া উপজেলা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানা নিয়ে গঠিত। এ আসনে নড়িয়ার ১৪টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা ও সখিপুরের ৯টি ইউনিয়ন রয়েছে। ১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নুরুল হক হাওলাদার এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন।
কিছুদিন পর তিনি নিজ বাড়িতে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। এরপর উপনির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের ডা. আবুল কাশেম নির্বাচিত হন।
’৭৯ সালে আওয়ামী লীগের কর্নেল (অব.) শওকত আলী, ’৮৬ সালে জাতীয় পার্টির টিএম গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, ’৮৮ সালেও টিএম গিয়াস, ’৯১ সালে আওয়ামী লীগের শওকত আলী, ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির ডাক্তার কেএ জলিল, একই বছরের ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শওকত আলী, ২০০১ সালেও শওকত আলী, ২০০৮ সালে ফের শওকত আলী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
দলীয় সূত্র জানায়, এখানে বিএনপির দুটি ধারা রয়েছে। একটি ধারার নেতৃত্ব দিচ্ছেন শফিকুর রহমান কিরন। অপরটির কর্নেল (অব.) এসএম ফয়সাল আহমেদ।
কিরণ ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে শরীয়তপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হন। একই বছরের পরের নির্বাচন এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে একই আসন থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দীয় নেতা আব্দুর রাজ্জাকের কাছে পরাজিত হন।
২০০৮ সালে তিনি শরীয়তপুর-২ থেকে সর্বশেষ বিএনপি প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৮০ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলেন।
শফিকুর রহমান কিরন বলেন, আমাদের দলে আসলে কোনো গ্রুপিং নেই। এটা নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা। এটা থাকবেই। আমি দলের জন্য যে কাজ করেছি তার মূল্যায়ন করলে আমি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-২ আসন থেকে মনোনয়ন পাব।
অন্যদিকে কর্নেল (অব.) এসএম ফয়সাল বলেন, বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে আমার ভূমিকা রয়েছে। সব সময় মাঠে ছিলাম। এ কারণে আমি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। গ্রুপিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি অনেক বড় দল। এখানে সহনীয় পর্যায়ে গ্রুপিং থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এটা সিরিয়াস কিছু নয়।
ফয়সালের সমর্থক জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোমিন দিদার বলেন, আমার নেতার আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কোনো ছবি নেই। আমরা একশ ভাগ দলীয় মনোনয়ন পাব।
জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসাইন বলেন, দল আমাকে মনোনীত করেছে। আমাদের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য কোনো লবিং-তদবির থাকে না। এখন আমরা নির্বাচনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
এদিকে এ আসনে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী ম ম ওয়াসিম খোকন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সম্ভাব্য দুই প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। তারা হলেন-অ্যাডভোকেট মানিক মিয়া সরদার ও মাওলানা শওকত আলী।