আজ তোমাদের জন্য সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করা হলো

১৮। জাহিদ ধীরে ধীরে বড় হয় এবং শহরের আধুনিক সব সুবিধা ভোগ করে। সে দেশি-বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে ই-মেইল, ফেসবুক, স্কাইপি, টুইটার, ইউটিউব, মোবাইল ইত্যাদির মাধ্যমে যোগাযোগ করে ও তথ্য আদান-প্রদান করে রাত জেগে আড্ডা দেয়।

ক) টুইটার কী?

খ) সামাজিকীকরণ বলতে কী বোঝায়?

গ) উদ্দীপকে সামাজিকীকরণের যে মাধ্যমটি সম্পর্কে ইঙ্গিত করা হয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।

ঘ) 'উক্ত মাধ্যমের অপব্যবহার সামাজীকরণে নেতিবাচক ভূমিকা রাখে'- বিশ্লেষণ করো।

ক) উত্তর : টুইটার হলো ইন্টারভিত্তিক একটি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

খ) উত্তর : সামাজিকীকরণ একটি চলমান প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে একজন শিশু ক্রমেই সামাজিক মানুষে পরিণত হয়। সামাজিকীকরণ একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। মূলত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যক্তি একপর্যায় থেকে অন্যপর্যায়ে প্রবেশ করে। ফলে নতুন নিয়মকানুন, রীতি-নীতি ও নতুন পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে তাকে খাপ খাইয়ে চলতে হয়, যা সামাজিকীকরণের মাধ্যমেই সম্ভব হয়। নতুন পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে তাকে খাপ খাইয়ে চলতে চেষ্টার প্রক্রিয়াই হলো সামাজিকীকরণ

গ) উত্তর : উদ্দীপকে সামাজিকীকরণের যে মাধ্যমটি সম্পর্কে ইঙ্গিত করা হয়েছে তা হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি তথা ইন্টারনেট, ফেসবুক, স্কাইপি, টুইটার ইত্যাদি। যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবহার করা যায় তাই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। যেমন- ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন ইত্যাদি। বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশ বা দেশের বাইরে পারস্পরিক যোগাযোগকে সহজ করে দিয়েছে। আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ভাব-বিনিময়, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার বৃদ্ধি, চুক্তি ইত্যাদি এখন ঘরে বসেই করা যায়। এভাবে ব্যক্তির সামাজিকীকরণে ইন্টারনেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আবার মেধা ও চিন্তার বিকাশে ই-মেইল, ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে পণ্য লেনদেন করার জন্য ই-কর্মাস খুবই জনপ্রিয়। ফেসবুক, স্কাইপি, টুইটারের সাহায্যে খুব সহজে দেশ বা বিদেশে যে কোনো মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ও বন্ধুত্ব করা যায়। সেই সঙ্গে মতামত ও ছবি বিনিময় করা যায়। এভাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি তথা ইন্টারনেট সামাজিকীকরণে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে।

ঘ) উত্তর : উক্ত মাধ্যম অর্থাৎ ইন্টারনেটের অপব্যবহার সামাজিকীকরণে অত্যন্ত নেতিবাচক ভূমিকা রাখে বক্তব্যটি যথার্থ। বিজ্ঞানের অন্য অনেক আবিষ্কারের মতো ইন্টারনেট, ফেসবুক, স্কাইপি, টুইটারেরও কিছু নেতিবাচক ও মন্দ দিক আছে। এগুলোর অপব্যবহার ব্যক্তি ও সমাজ দুইয়ের জন্যই মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। আজকাল তরুণ সমাজের ওপর ইন্টারনেট, ফেসবুক, স্কাইপির নেতিবাচক প্রভাবের কথা শোনা যায়। ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে সারা পৃথিবীর ভালো-মন্দ দিক সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা যায়। তবে এর অতিরিক্ত ব্যবহারের সময় যেমন নষ্ট হয়, অর্থের অপচয় হয়, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে, তেমনি নেতিবাচক বিষয় চর্চার মধ্যদিয়ে মন্দের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। তাতে অপরাধমূলক কর্মকান্ড বেড়ে যায়, অশ্লীলতা ও অপসংস্কৃতি বেড়ে যায়। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, স্কাইপি, ম্যাসেঞ্জার, টুইটার ইত্যাদিতে কুরুচিপূর্ণ ছবি পাঠিয়ে কিংবা মন্তব্য করে মানহানি, হানাহানি, জ্বালও-পোড়াওর মতো ঘটনাও আজকাল প্রায়ই ঘটছে। মোবাইলে বিভিন্ন ধরনের কুরুচিপূর্ণ মেসেজের মাধ্যমে নারীদের যৌন নিপীড়ন করা হয় আবার অপরাধীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার ফলে ব্যক্তির সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে। পরিশেষে বলা যায়, ইন্টারনেট, ফেসবুক, স্কাইপি, টুইটার ইত্যাদির অপব্যবহার সামাজিকীকরণে অত্যন্ত নেতিবাচক ভূমিকা রাখে।

১৯.

ক) অনুকরণ কী?

খ) সামাজিকীকরণে ভাষার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো?

গ) শিশুর সামাজিকীকরণে 'মাধ্যম-১'-এর ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।

ঘ) 'মাধ্যম-১' অপেক্ষা 'মাধ্যম-২' শিশুর সামাজিকীকরণে অনেক সময় বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে- বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: ক) যখন একজন অপরজনের কাজ বা আচরণ হুবহু নকল করে তখন তাকে অনুকরণ বলে।

খ) সামাজিকীকরণে ভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলো ভাষা। ভাষার মাধ্যমে ব্যক্তি তার মনের ভাব প্রকাশ করে। তাছাড়া একে অন্যকে জানা কিংবা নিজের দেশ ও সমাজ এবং বহির্জগৎ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন, শিক্ষা গ্রহণ সবই চলে ভাষার মাধ্যমে।

গ) উদ্দীপকের 'মাধ্যম-১' হলো টেলিভিশন।

আজকের দিনে সারা পৃথিবীতেই টেলিভিশন সবচেয়ে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় মাধ্যম। মানুষের চিন্তা-ভাবনা ও জীবন-যাপনকে এটি নানাভাবে প্রভাবিত করে। টেলিভিশন বিনোদন এবং তথ্য ও শিক্ষামূলক নানা ধরনের অনুষ্ঠান প্রচার করে নাগরিকদের আনন্দ ও শিক্ষা দেয়। সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের ওপর টেলিভিশনের প্রভাব খুবই বেশি। টেলিভিশনে প্রচারিত আকর্ষণীয়, শিক্ষা ও তথ্যমূলক অনুষ্ঠান তাদের জীবনকে আলোকিত করে তুলতে পারে। উদ্দীপকের 'মাধ্যম-১' হলো সবচেয়ে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় গণমাধ্যম টেলিভিশন। নিজ দেশ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে নবীন প্রজন্মের মানুষকে পরিচিত করে তোলার মাধ্যমে টেলিভিশন শিশুদের মধ্যে দেশপ্রেম ও আদর্শবোধ জাগিয়ে তোলে। এর ফলে সামাজিকীকরণের কাজটি সহজ হয়।

ঘ) উদ্দীপকের 'মাধ্যম-১' হলো টেলিভিশন এবং 'মাধ্যম-২' হলো ইন্টারনেট। নেতিবাচক প্রভাবের কথা ভাবলে ইন্টারনেট টেলিভিশনের চেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। টেলিভিশন সামাজিকীকরণের অত্যন্ত জনপ্রিয় মাধ্যম হলেও টেলিভিশনের কিছু খারাপ দিক রয়েছে যা সামাজিকীকরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেমন- সস্তা বিনোদনমূলক রুচিহীন অনুষ্ঠান সমাজের বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের মনের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। আর অসুস্থ এবং বিকৃত মানসিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠে। আবার অতিরিক্ত বা রাত জেগে টেলিভিশনে অনুষ্ঠান দেখলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি হয়। অন্যদিকে, উদ্দীপকের 'মাধ্যম-২' হলো ইন্টারনেট যা সমাজিকীকরণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও এর নেতিবাচক দিক টেলিভিশনের চেয়ে অনেক বেশি। ইন্টারনেট, ফেসবুক, টুইটার, স্কাইপি, ইউটিউবের অপব্যবহার ব্যক্তি ও সমাজ দুইয়ের জন্যই মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। আজকাল প্রায়ই তরুণ সমাজের ওপর ইন্টারনেট ও ফেসবুকের নেতিবাচক প্রভাবের কথা শোনা যায়। এর মধ্যে রয়েছে ইন্টারনেটে অশোভন ছবি দেখা, তথ্য চুরি, অন্যের ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক করা ইত্যাদি। এগুলো সামাজিক অবক্ষয়ের মূল কারণ। সার্বিক আলোচনা থেকে বলা যায়, সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে টেলিভিশন অপেক্ষা ইন্টারনেট বেশি নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম।

২০. গ্রামের স্কুলের সুমন একজন মেধাবী ছাত্র। সে শ্রেণিতে খুবই মনোযোগী। সহপাঠীদের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। পিতামাতা তাকে ধৈর্য ধরা ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। শিক্ষকরা অন্য শিক্ষার্থীদের সুমনের আচরণ অনুসরণ করতে বলেন। সুমনের বাল্যবন্ধু টিটু ঢাকার একটি স্কুলের ছাত্র। মাঝেমধ্যে তাদের মধ্যে মোবাইলে কথা হয়।

ক) ই-কর্মাস কী?

খ) পৃথিবীব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী সামাজিক মাধ্যমটি ব্যাখ্যা করো।

গ) সুমনকে সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।

ঘ) সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সুমন ও টিটু ভিন্ন পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত- যুক্তি দাও।

উত্তর: ক) ইলেকট্রনিক কর্মাসকে সংক্ষেপে ই-কর্মাস বলে।