সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্র

মো. ইমরান হোসেন, সহকারী শিক্ষক, ইস্টার্ন ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দনিয়া, ঢাকা
  ১৬ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্র
ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্র

মিনু

২. উদ্দীপকটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

বন্যা সারা সকাল মিসেস সালমার বাসায় কাজ করে, তাকে খালাম্মা বলে ডাকে। সে মিসেস সালমার সব কাজে সাহায্য করার চেষ্টা করে। দিবা শাখার একটি স্কুলেও সে পড়ে। লেখাপড়ায় সে পিছিয়ে নেই। বন্যা তার কাজ দিয়ে মিসেস সালমাকে এমন আপন করে নিয়েছে, মিসেস সালমাও বন্যাকে পরিবারের অন্য সদস্যের মতোই মনে করে।

ক. মিনু কার বাড়িতে থাকত?

উত্তর : মিনু তার এক দূর সম্পর্কের পিসিমার বাড়িতে থাকত।

খ. 'ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর : 'ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়' বলতে চোখ, কান, নাক, জিভ ও ত্বকের বাইরে বিশেষ কিছুকে বোঝানো হয়েছে।

বনফুল রচিত 'মিনু' গল্পের মিনু বোবা আর সামান্য কালা অর্থাৎ বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী। অনেক চেঁচিয়ে কথা বললে তবে শুনতে পায়। সব কথা শোনার দরকারও হয় না তার। ঠোঁট নাড়া আর মুখের ভাব দেখেই সব বুঝতে পারে সে। এছাড়া তার আরেকটা ইন্দ্রিয় আছে, যার সাহায্যে সে এমন সব জিনিস বুঝতে পারে, এমন সব জিনিস মনে মনে সৃষ্টি করে, সাধারণ বুদ্ধিতে যার মানে হয় না। ওই ইন্দ্রিয়ের নামই 'ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়'। অর্থাৎ মিনুর এ বিশেষ অনুভূতিপ্রবণ মনকেই 'ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়' বলা হয়েছে।

গ. অবস্থানগত দিক থেকে উদ্দীপকের বন্যা ও মিনুর মধ্যে যে বৈসাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়, তা ব্যাখ্যা করো।

উত্তর : অবস্থানগত দিক থেকে উদ্দীপকের বন্যা ও মিনুর মধ্যে কিছু সাদৃশ্য থাকলেও মানবিক আচরণ ও আদর-যত্ন পাওয়ার দিক থেকে উভয়ের মধ্যে বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।

উদ্দীপকের বন্যা মিসেস সালমার বাড়িতে কাজ করলেও দিবা শাখার স্কুলে পড়ালেখার সুযোগের সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিবারের একজন সদস্যের মর্যাদা পায়।

অন্যদিকে বনফুলের 'মিনু' গল্পের মা-বাবাহারা শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী মেয়ে মিনুর আত্মীয়া পিসিমার বাড়িতে থেকেও আত্মীয়ের মর্যাদা পায় না। তার বয়স মাত্র ১০ হলেও সংসারের সবরকম কাজই তাকে করতে হয়। তার পিসেমশাই যোগেন বসাক পেট ভাতায় ২৪ ঘণ্টার চাকরানি পেয়ে খুব খুশি। বোবা হওয়ায় সে নীরবে সব কাজ করে। ভোর ৪টার সময় উঠে সে কয়লা ভেঙে উনুন ধরায়। দুপুরে পিসিমা ঘুমালেও সে বোলতা বা ভিমরুল মারে। মোট কথা উদ্দীপকের বন্যা কাজ শেষ করে স্কুলপড়ার সুযোগ পেলেও মিনুর তা নেই।

অবস্থানগত দিক থেকে উদ্দীপকের সঙ্গে 'মিনু' গল্পের মিনুর উপর্যুক্ত বৈসাদৃশ্যই লক্ষ্য করা যায়।

ঘ. মিনু ও বন্যার স্বভাবগত বৈসাদৃশ্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তর : উদ্দীপকের বন্যা সুস্থ-স্বাভাবিক ও মিশুক প্রকৃতির একটি মেয়ে। সে গৃহকর্মী হলেও তার কথা ও কাজ দিয়ে মিসেস সালমাকে আপন করে নিয়ে স্কুলে লেখাপড়া করার সুযোগ পেয়েছে।

অন্যদিকে, 'মিনু' গল্পের মিনু পুরোপুরি সুস্থ নয়। সে শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী। মুখে কথা বলতে না পারলেও অন্যের ঠোঁট নাড়া আর মুখের ভাব দেখে সে সবই বুঝতে পারে। এ ছাড়া সে তার অনুভূতি দিয়ে এমন জিনিস বুঝতে পারে, এমন সব জিনিস মনে মনে সৃষ্টি করতে পারে, সাধারণ বুদ্ধিতে যার কোনো মানে হয় না। একে বলা যেতে পারে তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়। উদ্দীপকের বন্যা যেমন কথা দিয়ে মিসেস সালমাকে আপন করে নিয়েছে, গল্পের মিনু তেমনি নীরবে তার কাজগুলোকে আপন করে নিয়েছে। দৃষ্টির ভেতর দিয়ে সে সৃষ্টিকে শুধু গ্রহণ করেনি, নতুনরূপে নতুন রং আরোপ করেছে তাতে। প্রকৃতির সঙ্গে সে এক নিবিড় সখ্যের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। তাই আকাশের শুকতারা তার সই, কয়লা তার শত্রম্ন। হাতুড়ি, পাথর ঘরের জিনিসপত্র সব কিছুরই সে নতুন নামকরণ করেছে। এগুলোর সঙ্গেও মনে মনে কথা বলে।

উপর্যুক্ত বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, উদ্দীপকের বন্যা সুস্থ-স্বাভাবিক বলে তার কথা ও কাজ দিয়ে মিসেস সালমার মন জয় করতে পেরেছে। আর গল্পের কঠোর পরিশ্রমী মিনু তার আত্মীয় পিসিমার মন জয় করতে পারেনি শুধু বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী বলে। এটাই উভয়ের স্বভাবগত বৈসাদৃশ্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে