সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
বিজ্ঞান

পঞ্চম শ্রেণির পড়াশোনা

রোমানা হাবিব চৌধুরী, সহকারী শিক্ষক, ব্রাইট ফোর টিউটোরিয়াল হোম, চট্টগ্রাম
  ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
পঞ্চম শ্রেণির পড়াশোনা

প্রশ্ন : বায়ুর উপাদানগুলো আমাদের বেঁচে থাকতে কীভাবে সাহায্য করে ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বায়ু। বায়ুতে প্রধানত নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড ও জলীয় বাষ্প থাকে। শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে আমরা বায়ু থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করি। অক্সিজেন আমাদের গ্রহণ করা খাদ্য ভেঙে শক্তি উৎপাদন করে। অক্সিজেনের সাহায্যে আগুন জ্বালাই। জ্বালানি পুড়িয়ে কলকারখানা চালাই, গাড়ি চালাই, বিদু্যৎ উৎপাদন করি। শ্বাসকষ্টের রোগী, পর্বতারোহী ও ডুবুরিরা সিলিন্ডার থেকে অক্সিজেন নিয়ে শ্বাসকার্য চালায়। নাইট্রোজেন ইউরিয়া সার প্রস্তুতে ব্যবহার করা হয়। আবার টিন বা প্যাকেটে নানা ধরনের খাবার যেমন : মাছ, মাংস, ফল, চিপস সংরক্ষণে নাইট্রোজেন এবং বিভিন্ন ধরনের পানীয় তৈরিতে কার্বন ডাইঅক্সাইড ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া আগুন নেভাতে কার্বন ডাইঅক্সাইড ব্যবহৃত হয়। সবুজ উদ্ভিদ কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাধ্যমে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করে বেঁচে থাকে।

প্রশ্ন : বায়ুদূষণের পাঁচটি ক্ষতিকর দিক উলেস্নখ কর।

উত্তর : বায়ুদূষণের পাঁচটি ক্ষতিকর দিক নিচে উলেস্নখ করা হলো :

১. বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের ঘনত্ব বেড়ে গেলে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যায় যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে।

২. দূষিত বায়ু সেবনে ব্রঙ্কাইটিস, ক্যানসার, হাঁপানি ইত্যাদি রোগ হয়ে থাকে।

৩. কলকারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়ায় নির্গত গ্যাস বায়ুমন্ডলে এসিড বৃষ্টি ঘটায় যা দালানকোঠা, উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণীর ক্ষতি করে।

৪. মোটরগাড়ি ও কলকারখানা থেকে নির্গত কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস শরীরে রক্তের সঙ্গে মিশে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

৫. সিসাযুক্ত দূষিত বায়ু সেবনে ক্ষুধা কমে যায় ও রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। এ বায়ু শিশু এবং গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

প্রশ্ন : কার্বন ডাইঅক্সাইডের ৫টি ব্যবহার লেখ।

উত্তর : কার্বন ডাইঅক্সাইডের ব্যবহার উলেস্নখ করা হলো :

১. কার্বন ডাইঅক্সাইড আগুন নেভাতে ব্যবহৃত হয়।

২. কার্বন ডাইঅক্সাইড কোমল পানীয় তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

৩. উদ্ভিদের খাদ্য তৈরিতে কার্বন ডাইঅক্সাইড ব্যবহৃত হয়।

৪. কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস পরীক্ষাগারে বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়।

প্রশ্ন : নাইট্রোজেনের ৫টি ব্যবহার লেখ।

উত্তর : নাইট্রোজেনের পাঁচটি ব্যবহার নিচে উলেস্নখ করা হলো :

১. ইউরিয়া সার প্রস্তুত করতে নাইট্রোজেন ব্যবহার করা হয়।

২. মাছ, মাংস, ফল ইত্যাদি পচনশীল খাদ্য যাতে না পচে সেজন্য টিনের কৌটায় নাইট্রোজেন ব্যবহার করা হয়।

৩. উদ্ভিদের জন্য নাইট্রোজেন একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। নাইট্রোজেন উদ্ভিদকে দ্রম্নত বাড়তে সাহায্য করে।

৪. চিপসের প্যাকেটে নাইট্রোজেন ব্যবহার করা হয়।

৫. বৈদু্যতিক বাল্বে নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করা হয়।

পদার্থ ও শক্তি

প্রশ্ন : যখন টিভি চালানো হয় তখন শক্তির কী কী পরিবর্তন হয়?

উত্তর : টিভি চালাতে বিদু্যৎ শক্তির প্রয়োজন হয়। টিভি চালানোর সময় বিদু্যৎ শক্তি বিভিন্ন রূপে পরিবর্তিত হয়। টিভি চালালে এর পর্দা আলোকিত হয়। এতে বিদু্যৎ শক্তি আলোক শক্তি রূপান্তরিত হয়। টিভি চলাকালীন আমরা শব্দও শুনতে পাই। এতে বিদু্যৎ শক্তি শব্দ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এ সময় টিভি কিছুটা উত্তপ্ত হয়। এতে বিদু্যৎ শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তর হয়। অতএব যখন টিভি চালানো হয় তখন বিদু্যৎ শক্তি আলোক, তাপ ও শব্দ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।

প্রশ্ন :যখন পাতিলে ভাত রান্না করা হয় তখন তাপ কীভাবে সঞ্চালিত হয়?

উত্তর : তরল ও বায়বীয় পদার্থের মধ্যদিয়ে তাপ পরিচলন পদ্ধতিতে সঞ্চালিত হয়। যখন পাতিলে ভাত রান্না করা হয় তখন এর নিচের অংশের পানি প্রথমে গরম হয়ে উপরে উঠে আসে। আর পাত্রের উপরের অংশের পানি তাপমাত্রা কম থাকায় তার নিচে নেমে আসে যা আবার গরম হয়ে উপরের দিকে উঠে আসে। এভাবে তাপ পাত্রের পানির সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং এ প্রক্রিয়ার নাম পরিচলন। তাই যখন পাতিলে ভাত রান্না করা হয় তখন তাপ পরিচলন পদ্ধতিতে সঞ্চালিত হয়।

প্রশ্ন :বাড়ির আশপাশে বৃক্ষরোপণ করে কীভাবে শক্তি সংরক্ষণ করা যায়?

উত্তর : বাড়ির আশপাশে বৃক্ষ থাকলে সূর্যের তাপ সরাসরি বাড়িতে প্রবেশ করতে পারে না। বৃক্ষ বাড়িকে ছায়ায় ঘিরে রাখে। বাড়িতে সবসময় ঠান্ডা আবহাওয়া বিরাজ করে। ফলে বাড়িতে বৈুদ্যতিক পাখা বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র চালানোর প্রয়োজন হয় না। এতে বিদু্যৎ শক্তি সংরক্ষিত হয়। তাছাড়া বৃক্ষের ডালপালা ও পাতা রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তাতে অনবায়নযোগ্য জ্বালানি যেমন- গ্যাস সংরক্ষিত হয়। পরবর্তীতে তা শক্তি উৎপাদনে ব্যবহার করা যায়। এভাবেই বাড়ির আশপাশে বৃক্ষরোপণ করে শক্তি সংরক্ষণ করা যায়।

প্রশ্ন : পদার্থ কাকে বলে? পদার্থের কঠিন দশার তিনটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তর :যার ওজন আছে এবং জায়গা দখল করে তাকে পদার্থ বলে।

পদার্থের কঠিন দশার তিনটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ :

র. পদার্থের পরমাণুগুলো নির্দিষ্ট অবস্থায় সাজানো থাকে যাদের মধ্যে দৃঢ় বন্ধন বিদ্যমান।

রর. এদের আকার সহজে বদলানো যায় না।

ররর. পদার্থের আয়তন নির্দিষ্ট থাকে।

\হপ্রশ্ন :শক্তির অপচয় ঘটে এমন পাঁচটি উদাহরণ খাতায় লেখো।

উত্তর :শক্তির অপচয় ঘটে এমন পাঁচটি উদাহরণ খাতায় লেখা হলো

১. রান্নাবান্না শেষ করে গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখলে গ্যাসের অপচয় ঘটে।

২. বিনা প্রয়োজনে রেডিও, টিভি, বাতি, পাখা ইত্যাদি বৈদু্যতিক সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি চালু রাখলে বৈদু্যতিক শক্তির অপচয় হয়।

৩. যে কোনো ত্রম্নটিপূর্ণ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে যান্ত্রিক শক্তির অপচয় ঘটে।

৪. গাড়ি, বাস, ট্রাক, মোটর সাইকেল ইত্যাদি থামিয়ে রাখা হয়েছে কিন্তু ইঞ্জিন বন্ধ করা হয়নি। এতে জ্বালানি শক্তির অপচয় ঘটবে।

৫. ত্রম্নটিপূর্ণ যানবাহন ব্যবহার করলে শক্তির অপচয় ঘটে।

প্রশ্ন : শক্তি কী? দৈনন্দিন জীবনে শক্তির চারটি ব্যবহার লেখো।

উত্তর : কোনো বস্তুর কাজ করার সামর্থ্যকে শক্তি বলে। দৈনন্দিন জীবনে শক্তিকে নানাভাবে ব্যবহার করা হয়। নিচে শক্তির চারটি ব্যবহার উলেস্নখ করা হলো :

১. তাপ শক্তি ব্যবহার করে খাবার রান্না করা হয়।

২. বৈদু্যতিক শক্তি ব্যবহার করে রেডিও, টেলিভিশন, বাতি ও বৈদু্যতিক পাখা চালানো হয়।

৩. আলোক শক্তির সাহায্যে আশপাশের বিভিন্ন জিনিস দেখা যায়।

৪. যান্ত্রিক শক্তি ব্যবহার করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় অল্প সময়ের মধ্যে যাওয়া-আসা করা হয়।

প্রশ্ন : শক্তি বিভিন্ন রূপে বিরাজ করছে এরূপ শক্তির সংক্ষেপে পরিচয় দাও।

উত্তর : শক্তি তাপ, বিদু্যৎ, শব্দ, আলোক, চুম্বক ইত্যাদি রূপে প্রকৃতিতে বিরাজ করে। এরূপ শক্তির পরিচয় নিম্নরূপ :

তাপ শক্তি : তাপ এক প্রকার শক্তি যা ঠান্ডা ও গরমের অনুভূতি জাগায়। পদার্থের ক্ষুদ্র কণিকাগুলোর গতির ফলে তাপ শক্তির সৃষ্টি হয়। সূর্য, পেট্রোলিয়াম, কাঠ প্রভৃতি তাপ শক্তির উৎস।

আলোক শক্তি : আলো এক প্রকার শক্তি। আলোর সাহায্যে ছবি তোলা যায়। সূর্যের আলোতে উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য প্রস্তুত করে।

বিদু্যৎ শক্তি : রাসায়নিক প্রক্রিয়া দ্বারা এ শক্তি উৎপাদিত হয়।

প্রশ্ন : বিদু্যৎ শক্তি যে আলোক শক্তি, শব্দ শক্তি, তাপ শক্তি ও গতি শক্তিতে রূপান্তরিত হয় এর উদাহরণ দাও।

উত্তর : বিদু্যৎ এক প্রকার শক্তি। এ শক্তিকে অন্য শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়। বিদু্যৎ শক্তিকে বিভিন্ন শক্তিতে রূপান্তরের উদাহরণ :

১. আলোক শক্তিতে রূপান্তর : টর্চলাইট, বৈদু্যতিক বাল্ব, টিউবলাইট।

২. শব্দ শক্তিতে রূপান্তর : রেডিও, টেলিভিশন, টেলিফোন।

৩. তাপ শক্তিতে রূপান্তর : বৈদু্যতিক চুলা, ইস্ত্রি।

৪. গতিশক্তিতে রূপান্তর : বৈদু্যতিক পাখা, মোটর ইঞ্জিন।

হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে