সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দ্বাদশ শ্রেণির সমাজকর্ম (দ্বিতীয় পত্র)

মনিরুল হক রনি, প্রভাষক, সমাজকর্ম বিভাগ, সাভার সরকারি কলেজ, সাভার, ঢাকা
  ১২ মে ২০২৪, ০০:০০
দ্বাদশ শ্রেণির সমাজকর্ম (দ্বিতীয় পত্র)
দ্বাদশ শ্রেণির সমাজকর্ম (দ্বিতীয় পত্র)

দ্বিতীয় অধ্যায় : সমাজকর্মের শাখা

ঘ. উদ্দীপকের উলিস্নখিত শাখা অর্থাৎ ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম বাংলাদেশের সমাজে বিদ্যমান বহুমুখী সমস্যা সমাধানে অত্যন্ত কার্যকর ও ফলপ্রসূ হতে পারে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিশ্লেষণ করলে বহু ধরনের সমস্যা দেখা যায়। এসব সমস্যা সৃষ্টির জন্য দায়ী মূলত দারিদ্র্য, অশিক্ষা আর নানা ধরনের সামাজিক কুপ্রথা। বাংলাদেশের বাস্তবতায় এ সব সমস্যা সমাধানে সমাজকর্ম অনুশীলনের বিকল্প নেই। বিশেষ করে ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মের যথার্থ প্রয়োগ ঘটাতে পারলে অনেক সামাজিক সমস্যার কার্যকর সমাধান সম্ভব।

1

ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং দলীয়ভাবে সেবা দিয়ে থাকে। সমাজকর্মের এ শাখার পরিধি ব্যাপক। প্রিয়জনের মৃতু্য, ব্যক্তিগত অসামর্থ্য, ব্যর্থতা, বিবাহবিচ্ছেদ চাকরি হারানো ইত্যাদি ঘটনায় জীবনযাত্রায় যে পরিবর্তন হয় তা অনেক সময় ব্যক্তিকে বিভিন্নমাত্রায় বিপর্যস্ত করে। এ রকম পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম কাজ করে। তাছাড়া ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম উদ্বাস্তু, বেকার, দুর্বল ও অসহায় প্রবীণ জনগোষ্ঠী এবং গৃহহীনদের নিয়ে কাজ করে থাকে। দাম্পত্য কলহ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, সামাজিক যোগাযোগহীনতা, মাদকাসক্তি, অপরাধপ্রবণতা, কিশোর অপরাধ ইত্যাদি সমস্যাও ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মের পরিধিভুক্ত। আর বর্তমান বাংলাদেশে এসব সমস্যা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। সমাজকর্মের কর্মপদ্ধতির আলোকে ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম এসব সমস্যা সমাধানে উপযুক্ত।

পরিশেষে বলা যায়, ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মের অনুশীলন বাংলাদেশে বিদ্যমান নানারকম পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে।

৫. ফারজানা হক পরিবারের একমাত্র সন্তান। মা-বাবা কাজের প্রয়োজনে বাইরে গেলে সে বাসায় একা থাকে। খেলার সাথী পায় না। এই একাকিত্ব তাকে অসুস্থ করে তোলে। তার মধ্যে এক ধরনের ভ্রান্তি বা ব্যক্তিত্বের অস্বাভাবিকতা তৈরি হয়। সে বড় হলেও সবার সাথে মিলেমিশে চলতে পারে না। তাই তার মা-বাবা তার জন্য বড়ই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।

ক. বাংলাদেশে কোন মেডিকেল কলেজে প্রথম চিকিৎসা সমাজকর্ম কার্যক্রম শুরু হয়?

খ. বিদ্যালয় সমাজকর্ম বলতে কী বোঝ?

গ. উদ্দীপকে ফারজানা হকের চিকিৎসার জন্য সমাজকর্মের কোন শাখা উপযোগী? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উক্ত শাখা সমাজকর্মের পেশাগত বিকাশে কতটা কার্যকরী বলে তুমি মনে করো।

উত্তর :

ক. বাংলাদেশে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম চিকিৎসা সমাজকর্ম কার্যক্রম শুরু হয়।

খ. বিদ্যালয় সমাজকর্ম বলতে সমাজকর্মের এমন শাখাকে বোঝায়, যা স্কুলগামী ছেলেমেয়েদের শিক্ষাগ্রহণ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করে। পেশাদার সমাজকর্মের একটি প্রায়োগিক শাখা হলো বিদ্যালয় সমাজকর্ম। এটি স্কুলের প্রধান কার্যাবলির সাথে সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রাখে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঠিক পথে পরিচালনা করা, ভবিষ্যতে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা, নেতিবাচক আচরণ, বিশেষ দৈহিক আবেগীয় বা আর্থিক সমস্যা প্রভৃতি সমাধানে সমাজকর্ম কাজ করে।

গ. উদ্দীপকে ফারজানার সমস্যা মানসিক হওয়ায় তার

চিকিৎসার জন্য সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্ম কার্যকর ভূমিকা

রাখতে পারে।

সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্ম হলো সমাজকর্মের এমন একটি

শাখা যার, মাধ্যমে মানসিকভাবে সমস্যাগ্রস্ত মানুষের

সমস্যা সমাধানে কাজ করা। শাখার মাধ্যমে বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের তত্ত্বাবধান, তাদের রোগের কারণ অনুসন্ধান, পর্যাপ্ত সেবা ও ওষুধ প্রদান, কাউন্সেলিং ইত্যাদি মানসিক সেবা প্রদান করা হয়। আর এ ধরনের সহায়তাই উদ্দীপকের ফারজানার ক্ষেত্রে প্রয়োজন।

ফারজানা পরিবারের একমাত্র সন্তান। চাকরির কারণে বাবা-মা বেশিরভাগ সময় বাসায় না থাকায় এবং অন্য কোনো খেলার সাথী না থাকায় সে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক আচরণ করতে পারছে না এবং সবার সাথে মিলেমিশে চলতে পারছে না। এ অবস্থায় একজন সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মী ফারজানাকে সুস্থ করে তুলতে সহায়তা করতে পারেন। ফারজানার জন্য কী ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন তা তিনি ঠিক করে দিতে পারেন। তাছাড়া ফারজানার সাথে নিয়মিত কাউন্সেলিং, তার বাবা-মাকে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান প্রভৃতি ক্ষেত্রেও সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মীরা সহায়তা করেন।

সুতরাং বলা যায়, ফারজানাকে দ্রম্নত সুস্থ করে তুলতে তার বাবা-মায়ের উচিত একজন সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মীর সহায়তা নেওয়া।

ঘ. আমি মনে করি, সমাজকর্মের পেশাগত বিকাশে উক্ত

শাখা অর্থাৎ সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্ম কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

সমাজকর্ম একটি প্রায়োগিক জ্ঞান। কেবল তাত্ত্বিক আলোচনার মধ্যেই এটি সীমাবদ্ধ নয়। বরং বহুমুখী মনো-সামাজিক সমস্যা সমাধানে এই জ্ঞানের প্রয়োগ ঘটানো যায়। এক্ষেত্রে সমাজকর্মের ভূমিকাকে কার্যকর করতে সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মের মতো শতভাগ প্রায়োগিক শাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার কাজ করে থাকেন। তিনি শুধু রোগী নিয়েই গবেষণা ও আলোচনা করে থাকেন। কিন্তু একজন সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মী সাহায্যাথীকে চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি তার পরিবার, বাবা-মা ও ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে পারিবারিক এবং দলীয় থেরাপি দিয়ে থাকেন। তিনি সাহায্যাথীর মানসিক ও সামাজিক দিক বিবেচনা করে তার সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখেন। এ ধরনের পেশাগত দিক বিবেচনায় সমাজকর্মের এ শাখার প্রয়োগযোগ্য তা অসামান্য।

তাছাড়া বর্তমান সমাজব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের আর্থ-মনো-সামাজিক জটিলতা বাড়তে থাকায় সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মের আবেদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এর পেশাগত ক্ষেত্রও প্রসারিত হচ্ছে। বর্তমানে সারাবিশ্বেই সমাজকর্মের এ শাখার প্রসার ঘটছে। ওপরের আলোচনার আলোকে বলা যায়, সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্ম মানসিক রোগীদের চিকিৎসায় অত্যন্ত ফলপ্রসূ। আর এ কারণেই সমাজকর্মের পেশাগত বিকাশে এর ভূমিকা অত্যন্ত কার্যকর।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে