শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

শিক্ষা জগৎ ডেস্ক
  ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ

হার্ড ডিস্ক, হার্ড ড্রাইভ বা ফিক্সড ড্রাইভ হলো ডাটা সংরক্ষণের যন্ত্র- যা তথ্য জমা এবং পরবর্তী সময়ে পড়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। হার্ড ডিস্কে সমকেন্দ্রিক একাধিক চাকতি থাকে, একে পেস্নটারস বলে। এগুলো চৌম্বকীয় ধাতু দিয়ে আচ্ছাদিত থাকে। পেস্নটারসগুলো চৌম্বকীয় হেডস বা মাথার সঙ্গে জোড়া দেয়া থাকে। এগুলোর সঙ্গে আর একটি সক্রিয় একচুয়েটর আর্ম বা হাত থাকে। এই একচুয়েটর হাত পেস্নটারগুলোর উপরিভাগ থেকে তথ্য পড়তে এবং তথ্য জমা করতে ব্যবহৃত হয়। ডাটাগুলো ড্রাইভে স্থানান্তরিত হয়র্ যানডম-একসেস প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে। এর মানে হলো ডাটা যখন ড্রাইভে রাখা হয় এগুলো পর পর সাজানো হয় না বরং যে কোনো খালি জায়গায় ডাটা জমা করা হয়। হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ কম্পিউটার বন্ধ করার পরও ডাটা সংরক্ষণ করে রাখে। আইবিএম সর্ব প্রথম ১৯৫৬ সালে হার্ড ডিস্ক উদ্ভাবন করে এবং ১৯৬০ দশকে সাধারণ কম্পিউটারের দ্বিতীয় সংরক্ষণ মাধ্যম হিসেবে কম্পিউটারগুলোতে ব্যবহৃত হতে থাকে। প্রতিনিয়ত এটির উন্নয়নের ফলে আজকের দিনের সার্ভার থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত কম্পিউটারে এর ব্যবহার লক্ষণীয়। বর্তমানে অধিকাংশ কম্পিউটারে তথ্য সংরক্ষণের স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে হার্ড ডিস্ক ব্যবহৃত হয়। হার্ড ডিস্ক ছাড়াও বর্তমানে ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার, মিউজিক পেস্নয়ার প্রভৃতি যন্ত্রে হার্ড ডিস্ক ব্যবহার করা হয়। ২০০টি কোম্পানিরও বেশি কোম্পানি এই ড্রাইভ বিভিন্ন সময় প্রস্তুত করেছে। বর্তমানে এটি প্রস্তুত করছে বেশকিছু খ্যাতিমান কোম্পানি যাদের মধ্যে সিগেট, তোশিবা এবং ওয়েস্টার্ন ডিজিটাল উলেস্নখ্যযোগ্য। ২০১৩ সালে বিশ্বব্যাপী ডিস্ক স্টোরেজের আয় ছিল ৩২ বিলিয়ন, এটি ২০১২ সাল থেকে ৩% কম ছিল। একটি হার্ড ড্রাইভের প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য হলো এর ধারণক্ষমতা ও কার্যকারিতা। ধারণক্ষমতাকে উলেস্নখ্য করা হয় ১০০০ ইউনিটের উপসর্গ দিয়ে যেমন ১ টেরাবাইট ড্রাইভের ধারণক্ষমতা হলো ১০০০ গিগাবাইট। এই ধারণক্ষমতার সবটাই ব্যবহারকারীর জন্য পুরোপুরি থাকে না কারণ ফাইল সিস্টেম এবং কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম ও অভ্যন্তরীণ বাড়তি জায়গা ব্যবহার করা হয় ভুল সংশোধন ও পুনরুদ্ধার কাজের জন্য। কার্যকারিতাকে বোঝানো হয় হার্ড ড্রাইভের একসেস টাইম ও ল্যাটেন্সি বৈশিষ্ট্যের ওপর। একসেস টাইম হলো কতটুকু সময়ে একটি হেড কোনো নির্দিষ্ট ট্র্যাক বা সিলিন্ডাওে যায় এবং ল্যাটেন্সি হলো একটি সেক্টর কত দ্রম্নত হেডের নিচে আসে সেই সময়ের সমষ্টি। ল্যাটেন্সির ব্যাপারটি হার্ড ড্রাইভের রোটেশনাল স্পিড যা রিভোলুশন পার মিনিট দিয়ে মাপা হয়। এছাড়াও হার্ড ড্রাইভে কত গতিতে ডাটা স্থানান্তর হয় সেটিও অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য বলে বিবেচিত হয়। আধুনিক হার্ড ড্রাইভের দুটি গঠন প্রায়শই দেখা যায়। ৩.৫ ইঞ্চি এবং ২.৫ ইঞ্চি। ৩.৫ ইঞ্চি মাপের ড্রাইভ ডেস্কটপের জন্য এবং ২.৫ ইঞ্চি সাধারণত ল্যাপটপে দেখা যায়। হার্ড ড্রাইভগুলো স্ট্যান্ডার্ড ইন্টারফেস ক্যাবল যেমন পাটা, সাটা, ইউএসবি বা সিরিয়াল এটাচড এসসিএসআই ক্যাবল দ্বারা সংযুক্ত থাকে। শুরুর দিকের হার্ড ডিস্কগুলো ছিল অপসারণযোগ্য মাধ্যম, কিন্তু বর্তমানের হার্ড ডিস্কগুলো সাধারণত ধাতব বাক্সে আবদ্ধ থাকে। ২০১৫ সালের তথ্যমতে, হার্ড ড্রাইভের প্রধান প্রতিযোগী প্রযুক্তি হলো সলিড স্টেট ড্রাইভ (এসএসডি) প্রযুক্তিতে আসা ফ্ল্যাশ মেমোরি। এগুলোর রয়েছে উচ্চ গতির ডাটা স্থানান্তর ক্ষমতা এবং উচ্চ নির্ভরযোগ্যতা। আর এগুলোর ল্যাটেন্সি টাইম ও একসেস টাইম কম। কিন্তু তা সত্ত্বেও হার্ড ড্রাইভগুলো এখনো কম দাম এবং ডিভাইস প্রতি সংরক্ষণ ক্ষমতার দিক প্রভাবশালী হয়ে আছে গৌণ তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা হিসেবে। আবার এসএসডিগুলো যেখানে দ্রম্নতগতি, বিদু্যৎ ব্যবহার এবং স্থায়িত্ব গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রয়োজন সেখানে প্রথমেই বিবেচনা করা হয়। হার্ড ড্রাইভ বা হার্ড ডিস্কের কাজ: কম্পিউটার হার্ড ড্রাইভে প্রকৃতপক্ষে কোনো লোহার টুকরা থাকে না, সেখানে একটি চকচকে বৃত্তাকার ম্যাগনেটিক ধাতুর পেস্নট থাকে- যাকে "পেস্নটার" বলা হয়- আর এর মধ্যে বিলিয়ন বিলিয়ন ক্ষুদ্রক্ষুদ্র এরিয়া থাকে। এর প্রত্যেকটি এরিয়া স্বাধীনভাবে চুম্বকত্ব সংরক্ষণ করে। আবার অচম্বুকও সংরক্ষণ করে থাকে। কম্পিউটার ফ্ল্যাশ মেমোরির সমস্যা হলো, এতে বিদু্যৎ প্রবাহ বন্ধ করা হলে এটি সব তথ্য ভুলে যায় (যেমন-র্ যাম), তাই তথ্য সংরক্ষিত করার জন্য হার্ড ড্রাইভে চম্বুক শক্তি ব্যবহার করা হয়, যাতে কম্পিউটার বন্ধ থাকলেও এটি তথ্যগুলোকে ধারণ করে রাখতে পারে। পেস্নটার হলো হার্ড ড্রাইভের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। এর নাম অনুসারে, এটি একটি ডিস্ক যা কঠিন পদার্থ গস্নাস বা অ্যালুমিনিয়ামের সমন্বয়ে গঠিত হয়ে থাকে, যেখানে এমন এক ধাতুর পাতলা আস্তরণ দিয়ে লেপে দেওয়া থাকে- যা যে কোনো সময় চম্বুক বা অচম্বুক হতে পারে। ছোট হার্ড ড্রাইভগুলোতে শুধু একটি পেস্নটার থাকে, যার উভয় পৃষ্ঠেই ম্যাগনেটিক মেটাল দ্বারা লেপে দেওয়া থাকে। বড় আকারের হার্ড ড্রাইভে পেস্নটারের একটি সিরিজ থাকে, এই পেস্নটারটি প্রতি মিনিটে ১০,০০০ বার পর্যন্ত আবর্তিত হতে পারে, একে আরপিএম বলে। যাতে ডাটা রিড-রাইট হেড যে কোনো মুহূর্তে যে কোনো অংশ অ্যাক্সেস করতে পারে। প্রত্যেকটি পেস্নটারে দুইটি রিড-রাইট হেড থাকে, একটি উপরিতলকে রিড করে এবং আরেকটি নিচেরতলকে রিড করে। অর্থাৎ যে হার্ড ড্রাইভে পাঁচটি পেস্নটার রয়েছে সেখানে দশটি হেড থাকা প্রয়োজনীয়। হেডারটি যে কোনো সময় পেস্নটারটির যে কোনো অবস্থানে চলে যেতে পারে, তবে হেডার এবং পেস্নটার একসঙ্গে লেগে থাকে না, এদের মাঝে তরল বা বাতাস থাকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে