বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

হতাশায় ঢাকাই চলচ্চিত্রের বছর শুরু

মাতিয়ার রাফায়েল
  ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
এম রাহিম পরিচালিত শান সিনেমার পোস্টার দেখছেন পুজা চেরী

গত কয়েক বছরের মতো চলচ্চিত্রের এ বছরটাও মন্দাতেই যাবে। কিছুতেই ভালো যাচ্ছে না। কোনো না কোনো কারণে একটা হোঁচট খেতেই হচ্ছে চলচ্চিত্রকে। এবার শুরু থেকেই যে রকম প্রচার-প্রচারণার মধ্যদিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছে মেহেদী হাসান পরিচালিত 'শেষ বাজি'র; বাস্তবে সে রকম হয়নি মাত্র ২২টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। 'শেষ বাজি'র সঙ্গে একই দিনে মুক্তি পেয়েছিল চয়নিকা চৌধুরীর 'কাগজের বউ' সিনেমাটিও। এই সিনেমাটির অবস্থা তো আরও বেশি শোচনীয়। বলতে গেলে দর্শকই মেলেনি এই সিনেমায়। সিনেমা দু'টির পরিচালক হিসেবে তারা হয়ত বলবেন একই সময়ে মুক্তি পাওয়া 'হুব্বা' সিনেমাটিই তাদের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ানোতেই এমনই হাল হয়েছে তাদের সিনেমার। তবে অনেকেই বলছেন, ওই একই সময়ে 'হুব্বা' মুক্তি না পেলেও এই সিনেমা দু'টির অবস্থা উনিশ-বিশ ছাড়া এর বেশি কিছু হতো না। সেটা তারা বিগত কয়েক বছরের হিসাব মিলিয়েই বলছেন।

আসলেই ঢাকাই ফিল্ম প্রেক্ষাগৃহ সংকটের কারণে এমনিতেই একটা বৈরী পরিবেশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। যদিও গত দু'তিন বছরে ঢাকাই সিনেমা মানের দিক দিক থেকে অনেকখানি এগিয়েছে। কিন্তু আগে থেকেই খাদের কিনারায় পড়ে যাওয়া ঢাকাই সিনেমাকে সেই জায়গা থেকে উঠতে কিছুটা সময় নিতে হচ্ছে। যে কারণে সিনেমার ব্যবসা দু'-একজন তারকা অভিনেতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে আছে।

তার ওপর খাদের কিনারায় পড়ে যাওয়া সিনেমাকে যে তুলে আনার জন্য চেষ্টা করবেন হল মালিকরা সেটা তারা না করে বরং অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে একপর্যায় থেকে প্রেক্ষাগৃহের ব্যবসা গুটাতে থাকেন। ফলে একদিকে দিনকে দিন যেমন প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা কমে আসছিল পাশাপাশি আশঙ্কাজনক হারে সিনেমা নির্মাণও কমে আসছিল। ২০১৮ সালে আমদানিকৃত সিনেমা ছাড়া ৪৮টি সিনেমা মুক্তি পায়। ২০১৯ সালে মুক্তি পায় আমদানি সিনেমাসহ প্রায় ৫০টি সিনেমা। ২০২০ সালে পায় ২৫টি সিনেমার মুক্তি। ছবিগুলো হলো- 'জয় নগরের জমিদার', 'গন্ডি', 'বীর', 'হলুদবনি' ও 'শাহেনশাহ'। এর মধ্যে শাকিবের সিনেমা কিছুটা ব্যবসা করতে পেরেছে। এরপরেই শুরু হয় করোনা মহামারির প্রকোপ, থমকে যায় বিশ্ব। ওই বছরটি ছিল বাংলাদেশের সিনেমার জন্য একটি ভয়ংকরতম বছর। কারণ স্বাধীনতার পর এর চেয়ে কম সিনেমা আর কোনো বছরই মুক্তি পায়নি। প্রস্তুত থাকা সিনেমা থাকলেও লোকসানের ভয়ে মুক্তি দিতে চাননি লগ্নিকারকরা। এর পর করোনার প্রকোপ কমে এলে যে কয়টি সিনেমা মুক্তি দেওয়া হয়েছিল দর্শকের অভাবে প্রবল ধাক্কা খেতে হয় হল মালিকদের। একপর্যায়ে সিনেমার মুক্তি বন্ধ করে দিতে হয়। বন্ধ হয়ে যায় সিনেমা নির্মাণের যাবতীয় কাজ। বছর শেষে সিনেমা মুক্তির সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫টির। সবগুলোই সুপার-ডুপার ফ্লপ। এর পরের বছর ২০২১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার সংখ্যা অনেকটা বাড়লেও ব্যবসার মুখ দেখেনি কোনো সিনেমাই।

অন্যদিকে ২০২২ সালে ঢাকাই সিনেমা ৩০টির মতো মুক্তি পায়। এ বছরই একাধিক সিনেমা ব্যবসা করতে পারে। যে কারণে হল মালিকরা আবার আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেন। এই বছরটিতে জাজ মাল্টি মিডিয়ার 'হাওয়া', অভি কথাচিত্রের 'পরাণ' এবং টিওটি ও বায়স্কোপ ফিল্মসের 'গলুই' সিনেমাটি উলেস্নখযোগ্য ব্যবসা করতে সক্ষম হয়। এ ছাড়া 'দিন : দ্য ডে' মোটামুটি ব্যবসা করে। তবে বাকি সব সিনেমাই একেবারে মুখ থুবড়ে পড়ে।

আর ২০২৩ সালে ৬টি ভারতীয় সিনেমাসহ ৫০টিরও বেশি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। তুলনামূলকভাবে এ বছরই করোনা পরবর্তীকালে সংখ্যায় বেড়েছে। তবে ব্যবসায় বাড়েনি। এর মধ্যে ব্যবসা করেছে হাতেগোনা কয়েকটি। তার মধ্যে আছে 'মুজিব : একটি জাতির রূপকার', 'প্রিয়তমা', 'সুড়ঙ্গ' প্রভৃতি। এ ছাড়া 'অন্তর্জাল' যত গর্জেছিল ততো কিছুই করতে পারেনি। তবে মোটামুটি ভালো করেছে 'লোকাল' এর মধ্যে ব্যবসাসফল হয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি।

এর বাইরে মাল্টিপেস্নক্সে হলিউডের ছবির পাশাপাশি এ বছর আমদানি করা সিনেমা 'পাঠান', 'জওয়ান', 'টাইগার থ্রি', 'অ্যানিম্যাল', 'ডানকি' ও 'মানুষ' মুক্তি পায়। গত বছর চলচ্চিত্রের জন্য খুব একটা ভালো ছিল না। তবে ওই বছরে সিনেমা মুক্তির সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে ব্যবসাসফল ও আলোচিত সিনেমার সংখ্যাও।

ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া শাকিব খান অভিনীত ও হিমেল আশরাফ পরিচালিত 'প্রিয়তমা' ঘিরে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যায়। বাংলাদেশসহ দেশের বাইরেও সিনেমাটি ব্যবসার দিক থেকে একের পর এক রেকর্ড গড়েছে সিনেমাটি। ব্যবসার হিসাবে উত্তর আমেরিকায় গত বছরের সেরা বাংলাদেশি সিনেমা 'প্রিয়তমা'। সিনেমাটির আয় করে ১ লাখ ডলারের বেশি। ঈদে মুক্তি পাওয়া রায়হান রাফীর 'সুড়ঙ্গ'ও ব্যাপক আলোচনায় ছিল। তবে বছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় পরের ছয় মাসে ছবি মুক্তির সংখ্যা কমে আসে। বছরের শেষে রাজনৈতিক অস্থিরতা যার বড় কারণ।

ফলে প্রথম ছয় মাসে ৩৩টি সিনেমা মুক্তি পেলেও পরের ছয় মাসে পায় মাত্র ১৭টি। এই শেষ ভাগে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোর একটিও হল থেকে মুনাফা তুলে আনতে পারেনি। বলতে গেলে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে মুক্তি পাওয়া কোনো সিনেমাই দর্শক টানতে পারেনি। তবে হৃদি হকের '১৯৭১ সেইসব দিন' ছবিটি কিছুটা দর্শক টানতে সক্ষম হয়েছে। 'এমআর-৯' ও 'অন্তর্জাল' নিয়ে বড় প্রত্যাশা ছিল। প্রত্যাশার ধারেকাছেও দর্শক টানতে পারেনি ছবিগুলো।

চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে গত বছরটি ছিল ছোটপর্দার তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা আফরান নিশো। ভক্তদের চাওয়া ছিল, তাকে বড় পর্দায় দেখার। পরিচালক-প্রযোজকেরাও চেষ্টা করেছিলেন, তাকে নিয়ে ছবি বানানোর। শুরুতে রাজি না হলেও পরে অনেক ভেবেচিন্তে 'সুড়ঙ্গ'কেই নিজের অভিষেক সিনেমা হিসেবে বেছে নেন। সিনেমার আগে নিজেকে ঝালাই করে নিতে অবশ্য ওয়েব ফিল্ম আর বেশ কয়েকটি ওয়েব সিরিজেও হাজির হন তিনি। দুই দশকের বেশি অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত নিশো প্রথম চলচ্চিত্রে সবার প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হন। 'সুড়ঙ্গ' সুপারহিট ছবি হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে