রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
সা ক্ষা ৎ কা র

আবৃত্তিতেও সুতাবিহীন একটা গাঁথুনি থাকে

নাসিমা খান বকুল- শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনে মূলত বাচিকশিল্পী হিসেবেই পরিচিত। পড়াশোনা করেছেন ইংরেজি সাহিত্যে। স্নাতকোত্তর এ বাচিকশিল্পী বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে আবৃত্তির লাইভ শোসহ মঞ্চে আবৃত্তি করে থাকেন। মুক্তধারা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত এ বাচিকশিল্পীর সঙ্গে দেশের আবৃত্তি শিল্প নিয়ে কথা বলেছেন মাতিয়ার রাফায়েল
নতুনধারা
  ১৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
আবৃত্তিতেও সুতাবিহীন একটা গাঁথুনি থাকে

কীভাবে আবৃত্তির অঙ্গনে পা রাখলেন?

আমি আমার স্কুল লাইফ থেকেই বাংলা সাহিত্যের ওপর বিভিন্ন লেখকের গল্প-কবিতা-উপন্যাস পড়াশোনা করতাম। পাঠাগারের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। টুকিটাকি লেখালেখিও করতাম। একদিন পাঠাগারের এক অগ্রজ লেখক আমার ভয়েস শুনে বললেন, 'তোমার কণ্ঠ কিন্তু আবৃত্তির জন্য বেশ মানানসই হবে- তুমি এ বিষয়ে চর্চা করতে পারো।' তার সেই পরামর্শেই একপর্যায়ে আবৃত্তির ওপর একটি সংগঠন 'মুক্তধারা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্রে'র সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ি।

আবৃত্তির জন্য কোন ধরনের কবিতাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন?

আমরা মূলত সেই সব কবিতাকেই বেশি গুরুত্ব দিই যে কবিতা বহুল পঠিত নয়। যে কবি ও কবিতা কম পরিচিত। প্রথমে বিভিন্ন পত্রিকার সাময়িকীতে প্রকাশ পাওয়া কবিতাগুলো থেকে বাছাই করে সেগুলো আলাদা করে রাখি। পরে কবিতাগুলো ভালো করে বুঝে ও পড়াশোনা করে টিক চিহ্ন দিয়ে রাখি যাতে পরবর্তীতে সুবিধামতো সময়ে আবৃত্তি করা যায়।

লিখিত গান অপাঠ্য হলেও সেটা সুরকারের সুরে হৃদয় ছুঁয়ে যায়। আবৃত্তির জন্য কবিতাগুলোও কি তেমন?

আমরাও ঠিক তেমনি। তবে একটি সাধারণ গানকেও একজন সুরকার যেমন তার নিজস্ব সুরে বেঁধে সেই সাধারণ একটি গানকে অসাধারণ করে তোলেন কবিতার ক্ষেত্রে সেরকম সুতোয় গাঁথা সুরের কাজ না থাকলেও তার মধ্যেও সুতোবিহীন গাঁথার কাজ থাকে। আমরাও আবৃত্তির জন্য সহজবোধ্য কবিতাকেই আবৃত্তির জন্য বাছাই করি। যেটা শ্রোতা বা দর্শকের জন্য সহজবোধ্য হবে সেরকম কবিতাই আবৃত্তি করি।

নেই অডিও বাজার, বইমেলায়ও নেই সেই সরগরম- বাচিকশিল্পীরা কীভাবে কী করছে?

ইউটিউবে। ইউটিউব এখন আবৃত্তিশিল্পীদের প্রধান জায়গা। আর সবাইর মতো এখন আবৃত্তি শিল্পীরাও তাদের নিজস্ব চ্যানেল খুলে বসেছেন ইউটিউবে। আমার নিজেরও একটা চ্যানেল আছে। আমি অবশ্য একেবারের শুরুতেই নিজের এই চ্যানেল ওপেন করেছি। এখন তো অনেকেই ইউটিউবে তাদের আবৃত্তি ভিজু্যয়াল ভিডিও ছেড়ে আবৃতি প্রচার করছেন।

শিল্প-সংস্কৃতিতে শিল্পকলা একাডেমি অনেক কিছুই করছে- আবৃত্তি শিল্পীদের জন্য তারা কী করছে?

কিছুই করছে না। সেখানে নাটক, নৃত্যসহ অন্য শিল্পীদের জন্য পৃথক হলের ব্যবস্থা করলেও আবৃত্তি শিল্পীদের জন্য আলাদাভাবে সেরকম কিছু করেনি। তবে যখন কোনো মিশ্র অনুষ্ঠান থাকে, বিশেষ করে বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে, যেমন- বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, ২১ ফেব্রম্নয়ারি- প্রভৃতি দিবসভিত্তিক অনুষ্ঠানেই শুধু আমাদের ডাক পড়ে। এ ছাড়া সেখানে আমাদের আলাদাভাবে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করার সুযোগ নেই।

টিভির নাটকেও তো নেপথ্য আবৃত্তি কণ্ঠ দেওয়া হয়- সেখানে তেমন কিছু করেন?

না- নাটকে এখনো পর্যন্ত নেপথ্য কণ্ঠে কোনো আবৃত্তি করা হয়নি। তবে বিভিন্ন ডকুমেন্টারিতে এরকম ভয়েস দেওয়া হয়েছে। যেমন, 'কুলি', 'পথশিশু', 'পানাম নগরীর পথে পথে'- প্রভৃতিতে এরকম ভয়েস দিয়েছি।

বর্তমানে এই বাচিকশিল্পের অবস্থা কেমন?

খুবই ভালো। নতুন অনেকেই আসছেন। অবৃত্তিতে অনেকেই নতুনত্ব নিয়ে আসছেন। তবে একসময় আবৃত্তির ক্ষেত্রে আমাদের যে ভালোবাসা ছিল সেটা এখন কমে গেছে। এখন যেন সবাই ক্যারিয়ারমুখী হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া দেশে ইসলামি মৌলবাদের কারণেও আবৃত্তি শিল্প কমবেশি বাধাগ্রস্ত। বাংলাদেশে বর্তমানে এমন তিনটি শ্রেণি বিদ্যমান- যার মধ্যে একটা শ্রেণি আছে যারা মধ্যপ্রাচ্যমুখী আরেকটি শ্রেণি পাশ্চাত্যমুখী আবার আরেকটি শ্রেণি আছে প্রো-ইন্ডিয়ান বা ভারতঘেঁষা। ফলে আমাদের যে একটা নিজস্বতা থাকা উচিত ছিল- এটা বলতে গেলে নেই-ই। এসবের কারণেও আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি আমাদের নিজস্ব ধারায় চলতে পারছে না।

আবৃত্তির বাইরে আর কী করা হয়?

আবৃত্তির বাইরে আমি একটি চাকরি করি। একটি রপ্তানিমূলক প্রতিষ্ঠানে মহাব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্বরত আমি। এ ছাড়া আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি 'হোপস গ্রিভার ট্রাস্ট' নামের একটি সংস্থা আছে, আমি এটার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, এতে আমার বোন, ভগ্নিপতিসহ আরও অনেকে যুক্ত আছেন। এটার অধীনে আমাদের 'স্বাবলম্বী' নামে একটি স্কুল আছে। এর পরিচালনার সঙ্গেও যুক্ত আমি। এ ছাড়া কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নিবন্ধও প্রভৃতি লেখালেখিও করে থাকি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে