শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

বরেণ্য রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সাদি মহম্মদ আর নেই

বিনোদন রিপোর্ট
  ১৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
বরেণ্য রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সাদি মহম্মদ আর নেই

জনপ্রিয় রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী সাদি মহম্মদ আর নেই। তবে তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় মৃতু্যবরণ করেছেন নাকি স্বেচ্ছামৃতু্যর পথ বেছে নিয়েছেন এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব চলছে। বুধবার রাত ৯টার দিকে তার মৃতু্যর সংবাদ পাওয়া যায়। সংবাদটি নিশ্চিত করেছেন শিল্পীর পারিবারিক বন্ধু নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা। মৃতু্যকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।

সাদি মহম্মদের ভাই নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ সাংবাদিকদের জানান, বুধবার সন্ধ্যার পর হঠাৎ দেখা যায় তার ঘরের দরজা বন্ধ। কিছুক্ষণ পর দরজা ভেঙে তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

শামীম আরা নীপা বলেন, উনার (সাদি মহম্মদ) মা মারা যাওয়ার পর থেকেই তিনি ট্রমার মধ্যে চলে যান। স্বাভাবিক ছিলেন না মানসিকভাবে। মা হারানোর বেদনা সম্ভবত তিনি নিতে পারেননি। এভাবেই চলছিল। বুধবার রোজা রাখেন, ইফতারও করেন। এরপরই তিনি নীরবে না ফেরার দেশে পাড়ি জমানোর জন্য স্বেচ্ছামৃতু্যর পথ বেছে নিয়েছেন বলে আমরা মনে করছি।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের চিকিৎসক সাগতিক লোহানি জানিয়েছেন, দেশবরেণ্য এই শিল্পী আত্মহত্যা করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'তার গলায় দাগ পাওয়া গেছে। সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে নিজ কক্ষ থেকে তাকে উদ্ধার করেন পরিবারের সদস্যরা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাসপাতালে আনা হলে আমরা তাকে মৃত পাই। প্রাথমিক সিদ্ধান্তে আমরা এটাকে আত্মহত্যা হিসেবে মনে করছি।'

পরিবারের সদস্যরা তাকে নিজ কক্ষে ঝুলন্ত অবস্থায় পেয়েছেন বলেও জানান এই চিকিৎসক।

ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীতে পড়াশোনা করা সাদি মহম্মদের বাবা শহীদ সলিমউলস্নাহ। ১৯৭১ সালে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের সি-১২/১০ বাড়িটি ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা সলিম উলস্নাহর বাড়িতে নিয়মিত বৈঠকে আসতেন দলের শীর্ষ নেতারা, আসতেন বঙ্গবন্ধুপুত্র শহীদ শেখ কামালও।

একাত্তরের ২৩ মার্চ তাজমহল রোডের সেই বাড়িতে সেজ ছেলে সাদি মহম্মদ তকিউলস্নাহর আঁকা বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান বাবা সলিমউলস্নাহ, সেই পতাকা সেলাই করে দিয়েছিলেন সাদী-শিবলীর মা জেবুন্নেছা সলিমউলস্নাহ। সেই পতাকা ওড়ানোর সূত্র ধরে একাত্তরের ২৬ মার্চ অবাঙালি বিহারি ও পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে সলিমউলস্নাহর বাড়ি। পুড়িয়ে দেওয়া হয় পুরো বাড়ি, গুলি করে মারা হয় সলিম উলস্নাহকে। তার বাবার নামে ঢাকার মোহাম্মদপুরের সলিমউলস্নাহ রোডের নামকরণ করা হয়েছে।

সাদি মহম্মদের রবীন্দ্রসঙ্গীতে তার মূল পরিচিতি গড়ে উঠলেও আধুনিক গানেও তিনি সমান দেশব্যাপী পরিচিত ছিলেন। অসংখ্য রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে তার কণ্ঠে। সঙ্গে আধুনিক গানও। এছাড়াও তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

২০২৩ সালের ৮ জুলাই বার্ধক্যজনিত রোগে মৃতু্য হয় সাদি মহম্মদের মা জেবুন্নেছা লিমউলস্নাহর (৯৬)। এর আগে ১৫ বছর হুইল চেয়ারে বসেই স্বাভাবিক জীবন পার করছিলেন তিনি।

২০০৭ সালে 'আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে' অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০৯ সালে তার 'শ্রাবণ আকাশে' ও ২০১২ সালে তার 'সার্থক জনম আমার' অ্যালবাম প্রকাশিত হয়।

তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক ছিলেন। ২০১২ সালে তাকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করে চ্যানেল আই। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি তাকে রবীন্দ্র পুরস্কার প্রদান করে।

সাদির ভাই শিবলী মোহাম্মদ বাংলাদেশের একজন নৃত্যশিল্পী। সম্প্রতি যিনি একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বাদ জোহর রাজধানীর মোহাম্মদপুর জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় সাদি মহম্মদের নামাজে জানাজা। এরপর তাকে মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এর আগে সাদি মহম্মদের মৃতু্যর খবর পেয়ে হাপাতালে ছুটে যান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চুসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের শুভাকাঙ্ক্ষীরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে