ঢাকাই চলচ্চিত্রের 'প্রিয়দর্শিনী' খ্যাত চিত্রনায়িকা মৌসুমী। দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে তিন বার তার হাতে উঠেছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ছয় বার বাচসাস। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র পরিচালনা ও প্রযোজনাও করেছেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। স্টেজ শোর পাশাপাশি সেখানেই নতুন সিনেমার শুটিংয়ে অংশ নিয়েছেন। 'অর্ধাঙ্গিনী' শিরোনামের এই সিনেমায় তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন অভিনেতা তরিকুল ইসলাম মিঠু।
সম্প্রতি এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে আক্ষেপ প্রকাশ করে চিত্রনায়িকা মৌসুমী জানান, হলিউড-বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সন্তানদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে দেখা যায়। তবে বাংলাদেশে এই চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন। শাবানা, ববিতা, কবরী, চম্পা থেকে শুরু করে রহমান, আজিম, আনোয়ার হোসেন, প্রবীর মিত্র, জসিম, ফারুক, আলমগীরদের মতো তারকাদের তুমুল জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও এ পথে পা বাড়াননি তাদের সন্তানেরা। আবার এটাও অনেকে বলে থাকেন, এই সব নায়ক-নায়িকাদের কিংবা শিল্পীদের ছেলেমেয়েদের যেরকম শারীরিক গঠন সেটা বেশির ভাগই সিনেমার নায়ক-নায়িকা হওয়ার মতো আকর্ষণীয় নয়। আর অন্য চরিত্রে অভিনয় করতে আসবেই না। ফলে এ কারণেও এই নায়ক-নায়িকাদের ছেলেমেয়েরা নিজেদের থেকেই সিনেমার ইন্ডাস্ট্রিতে ঝুঁকেননি। আবার তাদের বাবা-মা হিসেবে এই নায়ক-নায়িকারাও আগ্রহ পাননি। তবে দু-একজন নায়ক-নায়িকা আছেন যাদের মেয়েরা অনেক আকর্ষণীয়া। যেমন, নায়ক আলমগীরের মেয়ে আঁখি আলমগীর।
তবে তার আগে অভিনেত্রী আনোয়ার বেগমের মেয়ে রুমানা ইসলাম মুক্তি সিনেমায় এলেও এখন নিয়মিত নন। ১৯৯৩ সালে 'পদ্মা নদীর মাঝি' দিয়ে যাত্রা করেছিলেন। এরপর নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের 'শ্রাবণ মেঘের দিন' সিনেমায় অভিনয় করে খ্যাতি পান।
আবার নায়করাজ রাজ্জাক তার তিন ছেলের মধ্যে দু'ছেলে বাপ্পারাজ ও সম্রাটকে সিনেমায় এনেছেন। মেঝ ছেলে রওশন হোসাইন বাপ্পিও আসতেন যদি সেরকম আকর্ষণীয় হতেন। কিন্তু তার নাসরিন পাশা শম্পা (প্রয়াত) ও আফরিন আলম ময়না নামে যে দু'জন মেয়ে ছিল তাদের কিন্তু সিনেমায় আনার বিষয়ে একদমই চুপ ছিলেন। বাইরের মানুষও তার সে মেয়ের সম্পর্কে জানে খুব কম। ময়না নামে মেয়েদের একজন ইংল্যান্ড থাকেন। এক মেয়ে অবশ্য সকলের অজান্তে মারাও গেছেন। এটা ছিল নায়করাজের জন্য এক ট্র্যাজেডি। অন্যদিকে নায়ক সোহেল রানাও তার এক ছেলে মাশরুর পারভেজকে সিনেমা বিষয়ে পড়াশুনা করিয়েছেন। দুটি সিনেমা বানিয়েছেনও। তাতে প্রধান চরিত্র হিসেবে নিজে অভিনয়ও করেছেন। এই ছেলে অবশ্য প্রচলিত ধারার সিনেমায় আগ্রহী নন। আন্তর্জাতিক মানের সিনেমার প্রতি আগ্রহী।
তবে এ বিষয়ে মৌসুমী বলেন, ছেলে সন্তানদের ক্ষেত্রে বাধা না থাকলেও কন্যাসন্তানদের নায়িকা হতে দিতে চাইছেন না শিল্পীরা। সব নায়ক-নায়িকাকে দেখি তাদের ছেলেরা যদি সিনেমা করতে চায়, তাদেরকে না করেন না। কিন্তু মেয়ে কখনো যদি নায়িকা হতে চায়, সেটা নিয়ে সবাই একটু অমত পোষণ করেন।
'ভাত দে' সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করে নজর কেড়েছিলেন চিত্রনায়ক আলমগীরের মেয়ে সঙ্গীতশিল্পী আঁখি আলমগীর। যদিও বর্তমানে গানে নিয়মিত তিনি। এ প্রসঙ্গে মৌসুমী বলেন, আঁখি আলমগীর খুব সম্ভাবনাময় ছিল। তাকে কিন্তু ভাইয়া (আলমগীর) কাজ করতে দেননি। ও খুবই সুন্দর মিষ্টি দেখতে ছিল। সে সময় একঝাঁক নতুন মুখ আসছিল। কিন্তু আঁখিকে দেওয়া হয়নি। তাকে পেলে আমরা খুব ভালো একজন নায়িকা পেতাম। চম্পা আপার মেয়েও কিন্তু অনেক কিউট। চম্পা আপা তাকে কখনো নায়িকা হতে উৎসাহ দেননি। দেখা যায় যে, আমাদের অনেকেরই মেয়ে আছে, যাদের আগ্রহ থাকার পরও সিনেমায় আসতে দেওয়া হয়নি। অন্যভাবে বড় করা হয়েছে। কেন যেন আর্টিস্ট হওয়ার ব্যাপারে সবার বাধা। চিত্রনায়িকা দীঘি প্রসঙ্গে মৌসুমী বলেন, এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিলেন দোয়েল আপা, তিনি অনেক সময় দিতেন দীঘিকে (প্রার্থনা ফারদিন দীঘি)। আপা আমাকে বলেছিলেন, আমার খুব ইচ্ছা দীঘিকে নায়িকা হিসেবে তৈরি করার। আমি নিজে যা মেইনটেইন করতে পারিনি। আমি বড় জায়গায় যেতে পারতাম। এত সাপোর্ট পেয়েও আমি আমার জায়গাটা ধরে রাখতে পারিনি। এটা আমি দীঘির মধ্যে দেখতে চাই।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মৌসুমী বলেন, সে সময় আপাকে আমি প্রশ্ন করলাম, দীঘির পড়াশোনার ক্ষতি হবে না? তখন তিনি বললেন, উঠতি বয়সে তাকে একটা ব্রেক দেব, গ্যাপ দেব। তারপর আবার যখন ফিরবে তখন নায়িকা হয়ে ফিরবে। তাকে একদম তৈরি করে ফেরাব। আমার খুব ভালো লেগেছিল এটা শুনে। একটা মেয়ে বাচ্চাকে নিয়ে যখন এমন পস্ন্যান করা হয়, তাকে একদম ছেড়ে না দিয়ে, তার সঙ্গে সাপোর্টিভ হয়ে যদি একটা কিছু করা যায়, অবশ্যই ভালো রেজাল্ট আসে। তবে সব রেজাল্টের আসল রেজাল্ট যা বলছে, তাতে নায়ক-নায়িকাদের কোনো সন্তানই বড় কোনো জায়গা দখল করতে পারেনি চলচ্চিত্রে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৫ সালের ২ আগস্ট বিয়ে করেন ওমর সানী ও মৌসুমী। তাদেরকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের আদর্শ তারকা দম্পতি বলা হয়। তাদের সংসারে রয়েছে দুই সন্তান ফারদিন ও ফাইজাহ। বিবাহিত জীবনে মোসুমী-ওমর সানীর সুখের সংসার। বড় পর্দায় একসঙ্গে প্রথম তারা হাজির হন 'দোলা' সিনেমায়। এরপর তাদের দু'জনকে 'আত্ম-অহংকার', 'প্রথম প্রেম', 'মুক্তির সংগ্রাম', 'হারানো প্রেম', 'গরীবের রানী', 'প্রিয় তুমি', 'সুখের স্বর্গ', 'মিথ্যা অহংকার', 'ঘাত প্রতিঘাত'সহ অসংখ্য সিনেমায় জুটি বেঁধে অভিনয় করতে দেখা যায়।