রোববার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে গুরুত্ব ডিসেম্বরে

এনইসি সভায় উপস্থাপন
ম হাসান আরিফ
  ২০ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে গুরুত্ব ডিসেম্বরে
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে গুরুত্ব ডিসেম্বরে

সপ্তম পঞ্চবার্ষিক বা পাঁচশালা পরিকল্পনার মেয়াদ শেষ হয়েছে গত জুন মাসে। এর কয়েক মাস আগেই ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস মহামারি। ওই সময় করোনা সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে বন্ধ করে দেওয়া হয় অফিস-আদালত। ফলে নতুন পাঁচশালা পরিকল্পনার দলিল সময়মতো চূড়ান্ত করতে পারেনি সরকার। বিলম্বিত হয়ে পড়ে অষ্টম পাঁচশালা পরিকল্পনা।

আগামী পাঁচ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনার এ দলিলের খসড়া এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় উপস্থাপন করে তা চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। নতুন পাঁচশালা পরিকল্পনায় সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রবর্তন, মহামারির অভিঘাত থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে রপ্তানি শিল্প ও অনানুষ্ঠানিক খাতে কৌশল নিয়ে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য বিমোচনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

1

এই বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম যায়যায়দিনকে বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই উপস্থাপন করা হবে। তবে মাসের কোন বৈঠকে তা উপস্থাপন করা হবে বলা সম্ভব নয়। কারণ প্রধানমন্ত্রী যে বৈঠকে সম্মতি দেবেন সে বৈঠকেই উপস্থাপন করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই দলিল বাস্তবায়নের মাধ্যমে একই সঙ্গে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) ও ২০৪১ সাল পর্যন্ত প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ায় একধাপ এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ তৈরি করা হবে। এছাড়া মহামারি-পরবর্তী ব্যাপক হ

কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উলেস্নখ করা হয়েছে খসড়া দলিলে।

মহামারি থেকে নাটকীয় উত্তরণের জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সার্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা প্রবর্তনের কথাও বলা হয়েছে। দেশে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব থাকায় মানসম্পন্ন তাদের গড়ে তোলার পরামর্শ দেওয়ার কথাও থাকবে এই দলিলে।

দারিদ্র্য দূরীকরণ ও বৈষম্য কমিয়ে আনতে মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা, শিশুদের জন্য পুষ্টির জোগান নিশ্চিত করা, দরিদ্র মানুষের হাতে সরকারের পক্ষ থেকে নগদ টাকা পৌঁছানো, গ্রামাঞ্চলের যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিদু্যতায়ন এবং আধুনিক কর ব্যবস্থা প্রবর্তনের নির্দেশনা রয়েছে নতুন পরিকল্পনায়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশে সাধারণ মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি তুলে ধরে খসড়া দলিলে উৎপাদন ও নির্মাণ খাতের মাধ্যমে ব্যাপকহারে কর্মসংস্থান সৃষ্টির কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।

নতুন পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৫১ শতাংশে উন্নীত করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জীবনযাপন সহজ করতে গড় মূল্যস্ফীতি ৪ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।

এই পথ পরিক্রমায় করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ৫ দশমিক ২০ শতাংশে নেমে যাওয়া জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে পাঁচ বছরে যথাক্রমে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ, ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ, ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ ও ৮ দশমিক ৫১ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। এছাড়া ২০২৫ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ১০৬ ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়।

খসড়া দলিলে বলা হয়, ২০২০ সালে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৯ দশমিক ০৮ শতাংশ হারে। এরপর ২০২১ সাল থেকে যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ, ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ, ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং দলিল বাস্তবায়নের শেষ বছর ২০২৫ সালে ৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ হারে মাথাপিছু আয় বাড়ানো সম্ভব হলে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব হবে।

এই পরিকল্পনায় দারিদ্র্য দূরীকরণ ত্বরান্বিত করতে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধিকে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির জন্য শ্রমঘন রপ্তানি শিল্প এবং কৃষি পণ্যের বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ক্ষুদ্র ও ছোট উদ্যোক্তাদের গতিশীল করা, আধুনিক সেবা খাতকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা এবং বিদেশেও ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

খসড়া দলিলে বলা হয়েছে, আশানুরূপ কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য দেশের মোট বিনিয়োগ জিডিপির ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। এর মধ্যে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ২৮ দশমিক ২ শতাংশ, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ৩ শতাংশে ও সরকারি বিনিয়োগ ৭ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।

বর্তমানে দেশে মোট বিনিয়োগ জিডিপির ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ। এর মধ্যে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ মাত্র শূন্য দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং সরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ৮ শতাংশ।

জাতীয় সঞ্চয় জিডিপির ২৯ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৩৪ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি জিডিপির ৭৫ শতাংশ ভোগ ব্যয় ৭০ দশমিক ৩ শতাংশে নামানোর লক্ষ্যও রয়েছে।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের দারিদ্র্যের হার ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যের হার ৭ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশের দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশ; আর চরম দারিদ্র্যের হার ১০ দশমিক ৫ শতাংশ।

২০৪১ সালের মধ্যে দেশের দারিদ্র্যের হার শূন্যে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়ে সরকার ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত একটি প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে