শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন আজ

আলতাব হোসেন ও এম এ জাফর লিটন
  ০৮ মে ২০২২, ০০:০০
আপডেট  : ০৮ মে ২০২২, ০৯:৪১
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন আজ
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন আজ

আজ পঁচিশে বৈশাখ। বিশ্বসাহিত্যের উজ্জ্বলতম এক নক্ষত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের এ দিনে কলকাতায় জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। রবীন্দ্রসাহিত্য ও সংগীত বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর তার রচিত গান (আমার সোনার বাংলা) বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছে। ভারতের জাতীয় সংগীতটিও কবির লেখা। এছাড়াও তার অনেক গান মুক্তিযুদ্ধের সময় অনুপ্রাণিত করেছিল বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের। কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, নির্দেশক কিংবা চিত্রকর উপাধিতে ভূষিত করা হয় রবি ঠাকুরকে। বিশ্বে তিনিই একমাত্র কবি যার রচিত গান দুটি দেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়। গীতাঞ্জলি কাব্যের জন্য ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আবার জালিওয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া নাইট উপাধি বর্জনও করেন এই কবি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বসাহিত্যের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ প্রতিভাদের একজন। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে তার অবদান অসামান্য। বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়ের শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেননি। গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় তার 'অভিলাষ' কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তার প্রথম প্রকাশিত রচনা। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তার প্রথম কবিতার বই 'বনফুল' প্রকাশিত হয়। দীর্ঘ সাহিত্য জীবনে তিনি অসংখ্য কবিতা, গান, উপন্যাস ও প্রবন্ধ রচনা করেন। তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ হলো মানসী, সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালী। তার বিখ্যাত নাটক ডাকঘর, বিসর্জন, রক্তকরবী, অচলায়তন। তার বিখ্যাত উপন্যাস গোরা, নৌকাডুবি, শেষের কবিতা, চোখের বালি। তার রচিত গানের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। ১৮৭৮ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার ইংল্যান্ডে যান। প্রায় দেড় বছর কাটিয়ে ১৮৮০ সালে কোনো ডিগ্রি না নিয়েই দেশে ফিরে আসেন। ১৮৮৩ সালে ভবতারিণীর সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহিত জীবনে ভবতারিণীর নামকরণ হয়েছিল মৃণালিনী দেবী। সংসার জীবনের পাশাপাশি চলতে থাকে তার সাহিত্যচর্চা। ১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে নদিয়া, পাবনা, রাজশাহী ও উড়িষ্যার জমিদারির তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ। কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে তিনি দীর্ঘ সময় পার করেন। ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে শিলাইদহ ছেড়ে চলে যান বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের উপকণ্ঠে শান্তিনিকেতনে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পৌঁছে দিয়েছেন বিকাশের চূড়ান্ত সোপানে। বাংলা ভাষার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি উপাধিতে ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় ও মৃতু্যর পর প্রকাশিত হয়েছে। এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। মহামারি করোনার কারণে দীর্ঘ দুই বছর পর এবার কুষ্টিয়ার শিলাইদহে জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হবে। প্রত্নতত্ত্ব্ব অধিদপ্তর, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা, সংগীতানুষ্ঠান, কবিতা আবৃত্তিসহ তিনদিনব্যাপী উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুর আড়াইটায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ডক্টর শিরীন শারমিন চৌধুরী। সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর, স্মারক বক্তব্য রাখবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক ও প্রফেসর সনৎ কুমার সাহা, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম সিমিন হোসেন রিমি এমপি। বাঙালির চিরকালের সঙ্গী রবীন্দনাথ ঠাকুর। উৎসবে-সুখে-দুঃখে, সংগ্রামে দ্রোহে তিনি আমাদের সাহস ও অনুপ্রেরণা। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মাতা সারদা সুন্দরী দেবী। রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষরা খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দীর্ঘ রোগ ভোগের পর ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট কলকাতায় পৈতৃক বাসভবনে মৃতু্যবরণ করেন। তিনি না থাকলেও তার নিজ হাতে গড়া রবীন্দ্রভারতী ও শান্তিনিকেতন বিশ্ববিদ্যালয় তারই বিপুল কর্মকান্ডের দু্যতি ছড়িয়ে দিচ্ছে সারা বিশ্বে। রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষাকে যে ঐশ্বর্য দান করেছেন, তাতে এই ভাষা জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা, সকল ভাব-অনুভূতির প্রকাশ এবং নির্মল হাস্য কৌতুকের বাহন হতে সমর্থ হয়েছে। দেড় শত বছর পেরিয়েও কবি আমাদের মাঝে চিরজাগরূক হয়ে আছেন। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে ১৮৯১ সাল থেকে পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নির্দেশে তিনি নিজেদের পরিবারের জমিদারি দেখা শুরু করেন। এর মধ্যে রয়েছে কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, পাবনার শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসর এবং উড়িষ্যার জমিদারিগুলো। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। কবি বিশ্ব ভ্রমণ করেন বারোংবার। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন। রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি সেজেছে বর্ণিল সাজে : এদিকে, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত শাহজাদপুরের রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে ৩ দিনব্যাপী রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কবির জন্মদিনকে কেন্দ্র করে কাছারিবাড়িতে করা হয়েছে সাজসজ্জা। রংতুলির আঁচড়ে নানা আল্পনায় রঙিন হয়ে উঠেছে কাছারিবাড়ির আঙিনা। বিচিত্র আলোকসজ্জায় বর্ণিল হয়ে উঠেছে চারপাশ। আজ রোববার সকাল ১০টায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ৩ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা শুরু হবে। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ডক্টর ফারুক আহাম্মদের সভাপতিত্বে স্থানীয় এমপি প্রফেসর মেরিনা জাহান কবিতা উপস্থিত থেকে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এদিন রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি অডিটোরিয়ামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতনামা শিল্পীদের পাশাপাশি আবৃত্তি, নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করবেন জাতীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীবৃন্দ। এদিকে, রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীকে ঘিরে স্থানীয় শাহজাদপুর সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজন করা হয়েছে রবীন্দ্র মেলা। সুষ্ঠু, নির্বিঘ্নে ও উৎসবমুখর পরিবেশে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীকে ঘিরে কাছারিবাড়ি রবীন্দ্র ভক্ত অনুরাগীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। রবীন্দ্র জীবনে ও সাহিত্য ভুবনে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর এক অবিস্মরণীয় নাম। শাহজাদপুরের উন্মুক্ত উদার দ্বারে এসে নিখিল বিশ্বের সামনে কবিপ্রাণের গভীর বন্ধন সূচিত হয়। তাঁর চিত্তে ও কর্মবোধের সর্বোচ্চ সমন্বয় ঘটেছিল শাহজাদপুরে এসেই- যা তিনি স্বীকারও করেছেন লেখনির মাধ্যমেই। শাহজাদপুরের কাছারিবাড়ি রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত একটি ঐতিহাসিক স্থান ও পর্যটন কেন্দ্র। ইতিহাস থেকে জানা যায়, তিন তৌজির অন্তর্গত ডিহি শাহজাদপুরের জমিদারি একদা নাটোরের রানী ভবানীর জমিদারির অংশ ছিল। ১৮৪০ সালে শাহজাদপুরের জমিদারি নিলামে উঠলে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর মাত্র তের টাকা দশ আনায় এই জমিদারি কিনে নেন। জমিদারির সঙ্গে সঙ্গে ওই কাছারিবাড়িও ঠাকুর পরিবারের হস্তগত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। আগে এই কাছারিবাড়ির মালিক ছিল নীলকর সাহেবরা। ১৮৯০ সাল থেকে ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারি দেখাশোনার কাজে শাহজাদপুরে যাতায়াত ও সাময়িকভাবে বসবাস করতেন। এখানে অবস্থানকালে কবিগুরু রচনা করেন: - কাব্য: সোনারতরী, বৈষ্ণব কবিতা, দুটি পাখি, আকাশের চাঁদ, পুরস্কার, যমুনা, হৃদয়, ভরা ভাদরে, প্রত্যাখ্যান ও লজ্জা। চিত্রা : চিত্রা, শীত ও বসন্তে, নগর সংগীত। চৈতালী : নদীযাত্রা, মৃতু্যমাধুরী, স্মৃতি বিলয়, প্রথম চুম্বন, শেষ চুম্বন, যাত্রী, তৃণ, ঐশ্বর্য, স্বার্থ, প্রেয়সী, শান্তিময়, কালিদাসের প্রতি, কুমার, মানষলোক, কাব্যপ্রার্থনা, ইছামতী নদী, সুশ্রম্নসা, অশিক্ষা গ্রহণ, বিদায়। করুনা : নববিবাহ, রজ্জিতা, বিদায়, হতভাগ্যের গান, গতোনিক, বঞ্চনা, সংকোচ, মানষ প্রতিভা, রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা, ব্যবধান, তারাপ্রসন্নের কীর্তি, ছুটি, সম্পত্তি, ক্ষুধিত পাষাণ, অতিথি ইত্যাদি। সেই সঙ্গে ৩৮টি ছিন্ন পত্রাবলী। প্রবন্ধ :পঞ্চভূতের অংশবিশেষ এবং নাটক:বিসর্জন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে