শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
'বাংলাদেশের জনগণকে আমি স্যালুট করি'

মিথ্যা কথা বানানো আর বলার কারখানা বিএনপি :প্রধানমন্ত্রী

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৪ জুন ২০২২, ০০:০০
আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে সংরক্ষিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় -ফোকাস বাংলা

বিএনপি মিথ্যা কথা বানাতে ও বলতে খুব ভালো মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'মিথ্যা কথা বানানো, আর মিথ্যা কথা বলার যদি কারখানা থেকে থাকে সেটা হলো বিএনপি। যতটুকু মিথ্যা এটার প্রোডাকশনটা এরা ভালো দেয় এবং বলেও যায়। আমাদের কিছু লোক সেটা বিশ্বাস করে বসে থাকে।'

বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।

বন্যার্তদের বিএনপি কোনো সাহায্য দেয়নি অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যা হয়েছে, আজ পর্যন্ত বিএনপির কোনো নেতা বা কেউ কোনো সাহায্য দিয়েছে বানভাসিদের? দেয়নি। ঢাকায় বসে বসে তাদের দলের নেতারা নানা কথা বলে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এমন এমন দুর্গম এলাকায় গেছেন যেখানে বন্যার পানির কারণে কেউ পৌঁছাতে পারছেন না। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ যে যেখানে তারা সেখানেই কিন্তু ত্রাণ বিতরণ করে যাচ্ছে। তারা মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে, তারা খাদ্য সাহায্য দিচ্ছে। উদ্ধার কাজ করছে।

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার কথা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, এটা নিয়েও প্রশ্ন তোলে। বিএনপি আবার প্রশ্ন তোলে কোন মুখে, যাদের আপাদমস্তক দুর্নীতিতে ভরা। এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজা পেয়েছেন খালেদা জিয়া। শুধু এতিমের অর্থ কেন নাইকো, গেটকো- এরকম বহু কেস ঝুলে আছে। ওই কেসে তিনি তো কখনো কোর্টেই যেতে চাননি। প্রত্যেকটা প্রজেক্টে দুর্নীতি করে তারা টাকা বানিয়েছে। তারেক জিয়া, খালেদা জিয়া, কোকো সবাই। কোকো তো পরে মরেই গেছে।

বিদেশে তারেক জিয়ার

বিলাসবহুল জীবন-যাপন নিয়ে প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, এই দুর্নীতি করে যদি টাকা না বানাবে বিদেশে এত বিলাসবহুল জীবন-যাপন করে কি করে? কত টাকা খরচ করে সেখানে কোম্পানি খুলেছে এবং সেই কোম্পানিতে প্রথমেই সে যে (তারেক) ব্রিটিশ নাগরিক সেটা লিখেছে। এক বছর পরে সেটাকে আবার সংশোধন করে সেখানে বাংলাদেশের নাগরিক লিখেছে। কারণ, মিথ্যা কথা লেখাতে ধরা পড়ে যায়। কাজেই সেটাকে আবার সংশোধনও করেছে। যখন টাকার কথা তুলেছি যে, সে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পেল কোথা থেকে? একটা সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ব্রিটিশরা কিভাবে নাগরিকত্ব দেয়? সেটা এখন তারা উইথড্র করেছে। এখন বাংলাদেশের লিখেছে। তথ্য তো আমাদের কাছে আছে।

বাংলাদেশের মানুষের যতটুকু অর্জন সবটুকুই আওয়ামী লীগের হাতে উলেস্নখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ এখানে নিজের ভাগ্য গড়তে আসেনি। আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছে। বাংলাদেশের ইতিহাস আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যদি দেখা যায়, আজ পর্যন্ত এদেশের মানুষের যতটুকু অর্জন সবটুকুই আওয়ামী লীগের হাতে। আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে এসেছে এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। এজন্য আওয়ামী লীগকে বারবার ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয় না। কারণ, তাহলে বাংলাদেশের মানুষকে শোষণ করতে পারে না, নির্যাতন করতে পারে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, '৯৬ সালে সরকারে এসে আমরা যতটুকু অর্জন করতে পেরেছিলাম ২০০১-এ বিএনপি ক্ষমতায় এসে সবই নস্যাৎ করে বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছিল। পাঁচ-পাঁচবার বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি অর্জন করেছে। খালেদা জিয়া প্রাইম মিনিস্টার থাকতে দুর্নীতিতে এক নাম্বার চ্যাম্পিয়ন। সেই ভাবমূর্তি বাংলাদেশের জন্য কতটা অসম্মানজনক। সেখান থেকে আমরা দেশকে আজকে পরিবর্তন করে এখন বিশ্বে একটা সম্মানজনক স্থানে নিয়ে গেছি। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল এবং উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা আমরা পেয়েছি। ওদের (বিএনপি) এই মিথ্যাচার এটা থাকবেই।

বন্যার প্রথম দিন থেকেই সরকার বানভাসি মানুষের পাশে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু আমরা উদ্বোধন করব ২৫ তারিখে। যেমন- বানভাসি মানুষের পাশে আওয়ামী লীগ দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড থেকে শুরু করে পুলিশ বাহিনী, প্রশাসন সবাই সেখানে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত তাদের উদ্ধার করা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, তাদের খাদ্য দেওয়া সেখানে এতটুকু গাফিলতি নেই।

তিনি বলেন, বন্যা এটা প্রাকৃতিক কারণেই বাংলাদেশে আসবে, হবেই। এর সঙ্গে আমাদের বসবাস করতে হবে। কিন্তু তাই বলে আমাদের যে, এত বড় একটা অর্জন পদ্মা সেতু। যেটা ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অভিযোগ, দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল যেটাকে আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। প্রমাণ করতে পারেনি। কানাডার কোর্টে মামলা দিয়েছিল। সেই মামলায় স্পষ্টভাবে রায়ে বলা হয়েছে, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক যে যে অভিযোগ এনেছে সবই মিথ্যা-ভুয়া, কোনোটাই সঠিক না। একটা অপবাদ দিতে চেয়েছিল সেটা তো আজকে প্রমাণিত যে, এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। তারপরে এই সেতুটা যে আমরা করেছি, এটা তো একটি মাল্টিপারপাস সেতু করেছি। সেটা নিয়েও তারা প্রশ্ন তোলে কোন মুখে? ওরা (বিএনপি) তো কিছুই করে যেতে পারেনি।

যমুনা সেতু নির্মাণের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে খুব বেশি এগোতে পারেনি। কারণ, সব জায়গায় তো কমিশন খাওয়ার অভ্যাস। আবার কমিশন তো একজনকে দিলে হবে না। মায়ের জন্য একটা, দুই ছেলের জন্য দুইটা, ফালুর জন্য একটা, অমুকের জন্য একটা- এই করতে করতে কেউ আর ওখানে কাজ করতে পারত না। এত ভাগে ভাগে তাদের কমিশন দিতে হতো। সেই কারণেই কোনো কিছু এগোতে পারেনি। আমরা '৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে এই যমুনা সেতুতে রেল লাইন, গ্যাস লাইন, বিদু্যতের লাইন নিয়ে, এটার ডিজাইনটা আবার মাল্টিপারপাস ব্রিজ করে আমরা তৈরি করি।

বিএনপির হৃদয়ে এখনো পাকিস্তান রয়ে গেছে উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশের প্রকৃতি, মানুষের উন্নয়ন আওয়ামী লীগ যতটা বুঝবে অন্যরা তা বুঝবে না। বুঝবে কী করে? বিএনপির হৃদয়ে তো থাকে পাকিস্তান। তাদের মনেই আছে পাকিস্তান। দিল ম্যা হ্যায় প্যায়ারে পাকিস্তান। সারাক্ষণ গুনগুন করে ওই গানই গায়। এই যাদের মানসিকতা তাদের দ্বারা তো বাংলাদেশের ভালো চাইবে না এটা খুব স্বাভাবিক। এটা নিয়ে আপনাদের এত দুঃখ করার, চিন্তা করার কিছু নেই।

তিনি বলেন, ওদের কথা যত না বলা যায় ততই ভালো। কারণ, ওরা বাংলাদেশের স্বাধীনতাই বিশ্বাস করে না; বরং এই সবগুলোকে গাট্টি বেঁধে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিলে ভালো হয়। পাকিস্তানের এখন যে অবস্থা ওখানে থাকলেই তারা ভালো থাকবে। এখনো লাহোরে সোনার দোকানে খালেদা জিয়ার বড় ছবি আছে যে ওই দোকানের সোনার গহনা তার খুব প্রিয়। মেরা জান পাকিস্তান- এটা খালেদা জিয়ার কথা।

জিয়া, খালেদা জিয়া বা এরশাদ কারও জন্মই বাংলাদেশে নয় স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এদের জন্মও তো বাংলাদেশে না। না জিয়ার জন্ম বাংলাদেশে, না খালেদা জিয়ার জন্ম বাংলাদেশে- কারও জন্মই না। এরশাদও তো কুচ কুচ বিহারি। তারও তো জন্ম হচ্ছে কুচবিহারে।

আওয়ামী লীগের আদর্শই হচ্ছে জনগণের সেবা করা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, একমাত্র আমার বাবাই ছিলেন এই দেশের, আমারও এই দেশের মাটিতে জন্ম। কাজেই মাটির টান আলাদা। এখানে আমাদের নাড়ির টান। কাজেই এই দেশের মানুষের ভাগ্য গড়াটাই তো আমাদের লক্ষ্য। সে জন্যই আমরা কাজ করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ গঠনের মাধ্যমে আবার এই ভূখন্ড স্বাধীনতা অর্জন করে। আমরা পাই স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকে এই ভূখন্ডের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছে এবং সাফল্য এনেছে। আওয়ামী লীগের ইতিহাস আর বাংলাদেশের ইতিহাস একই ইতিহাস।

আওয়ামী লীগকে আদর্শের ভিত্তিতে সুসংগঠিত হিসেবে গড়ে তুলতে সবসময় বঙ্গবন্ধু দৃষ্টি দিয়েছিলেন বলে উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রথমে আওয়ামী মুসলিম লীগ হলেও ১৯৫৫ সালে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দলকে গড়ে তোলার জন্য মুসলিম নামটি বাদ দেওয়া হয়।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনা ও পরবর্তী রাজনৈতিক ঘটনাবলি বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সময় ১৯টি সামরিক অভু্যত্থান হয়। যেখানে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশ ও দেশের মানুষ। সামরিক শাসন দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয় সংবিধানকে।

শেখ হাসিনা বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের তখন কিছু লোক তার সঙ্গে জুড়ে যায়। সংবিধান ও সেনা আইন লঙ্ঘন করে যে ব্যক্তি দল গড়া শুরু করল, তাকেই বানানো হলো গণতন্ত্রের প্রবক্তা। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের জন্য ট্র্যাজেডি। তাদের সঙ্গে অনেকেই যুক্ত হয়ে গেল। অনেক জ্ঞানী, গুণীজন হাত মিলাল।

মুষ্টিমেয় কিছু পদলেহনকারী ক্ষমতার চাটুকারী করতে ছুটে গেলেও সাধারণ বাঙালি তা করেনি বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু সবসময় ঠিক ছিল। '৭০-এর নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ২০ দলীয় জোট করা হয়েছিল। মাঝেমধ্যে আমার মনে হয়, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপির ২০ দলীয় জোট হলো।

স্বাধীনতাপরবর্তী নানা ষড়যন্ত্রের কথা উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ। সেটা বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হয়নি। তারপর অপপ্রচার। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত এই ভূখন্ডের বিরুদ্ধে করা হয়। তারপরও যখন দেখল বাংলার জনগণের মন থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা যাবে না, তখন ১৫ আগস্ট চরম আঘাত হানা হয়।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ?'গুম, খুন জিয়া শুরু করেছিল। এরপর খালেদা জিয়া এসে এটা এগিয়ে নিয়ে যায়। আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে তারা হত্যা করেছে।'

সরকারপ্রধান বলেন, ?'আমাকেও খালেদা-তারেক হত্যার চেষ্টা করেছে। বারবার আঘাত করেছে। ১৫ আগস্টের ঘটনাতেও জিয়া জড়িত ছিল। '৭৫-এর হাতিয়ারকে সমর্থন করে তারেক তার প্রমাণ করেছে।'

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এবং তার স্ত্রী খালেদা জিয়া যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে 'হত্যার সঙ্গে জড়িত', তাদের ছেলে তারেক রহমান তা 'প্রমাণ করেছেন' বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সমর্থন দিয়ে।

তিনি বলেন, আজকে তাদের কথার মধ্য দিয়ে... এরাই যে ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত, বা চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে, '৭৫-এর হাতিয়ারকে সমর্থন দিয়ে অর্থাৎ খুনিদের সমর্থন দিয়ে। কারণ, এই খুনিদের বিচারের হাত থেকে মুক্ত করেছিল জিয়াউর রহমান এবং তাদের পুরস্কৃৃত করেছিল ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স দিয়ে, সেটা আইনে পরিণত করেছিল জিয়াউর রহমান এবং এদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃৃত করেছিল।

তিনি বলেন, আজকে এখানে আমি যখন শুনলাম, খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক জিয়া স্স্নোগান দেয় '৭৫-এর পরাজিত শক্তি...' এটার মধ্য দিয়ে সে এটাই প্রমাণ করে যে, তার বাপ যে পাকিস্তানের দালাল ছিল, তার মাও যে পাকিস্তানি দালাল হিসেবেই ছিল এবং এই বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করতে চেয়েছিল, আদর্শগুলো একে একে মুছে ফেলে দিয়েছিল, ইতিহাস মুছে ফেলে দিয়েছিল, জাতির পিতার নামটা মুছে ফেলেছিল...।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কাজেই এটা তো খুব স্বাভাবিক, তারা তো সেই স্স্নোগান দেবেই। সেই পাকিস্তানি সেনাদের পদলেহন করে চলাটাই তো তাদের অভ্যাস। তারা তো স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না। স্বাধীন জাতি হিসেবে যে একটা মর্যাদা আছে, এটাই তাদের পছন্দ না। তারা পরাধীন থাকতেই পছন্দ করে। পাকিস্তানিদের পায়ের লাথি-ঝাটাটাও তাদের কাছে ভালো লাগত মনে হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, এই ইতিহাস মনে রেখে 'এদের করুণা' করতে হবে। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে, 'এরা চক্রান্তকারী, ষড়যন্ত্রকারী'। গুম, খুন- এটা তো জিয়াউর রহমানই শুরু করে দিয়েছিল সেই '৭৫-এর পর, যখন সে রাষ্ট্রপতি হয়। খালেদা জিয়া এসেও তো আমাদের কত নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। এরশাদের আমলেও আমাদের নেতাকর্মী নির্যাতিত হয়েছে।

জিয়াউর রহমানকেও যে পরে নিহত হতে হয়েছিল, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। খালেদা জিয়াও বলতে পারবে না, তার ছেলেও বলতে পারবে না যে, কোনো দিন বাপের লাশ দেখেছে। কারণ, গুলি খাওয়া লাশ তো দেখা যায় না। তারা তো দেখতে পায়নি। সেই কথাটা তো একবারও স্মরণ করে না বিএনপির নেতারা যে, জিয়ার লাশ কোথায়।

তিনি বলেন, হঁ্যা, একটা বাক্স এরশাদ সাহেব নিয়ে এসেছিলেন এটা ঠিক। কিন্তু সেই বাক্সে কী ছিল? পরে এরশাদ সাহেবের মুখেই তো আছে যে, ওই বাক্সে জিয়ার লাশ ছিল না, কারণ জিয়ার লাশ তখন তারা পায়নি। জিয়ার লাশ কোথায় গেছে কেউ বলতে পারে না। এটা বাস্তবতা, এটা এক দিন না এক দিন প্রকাশ হবে।'

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে আসতে না দেওয়ার যে অভিযোগ দলটির নেতারা করে আসছেন, তার জবাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, '২০০৭ সালে তারেক জিয়া তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়েছিল। একেবারে লিখিত দলিল যে, সে আর রাজনীতি করবে না। এই শর্তে সে কারাগার থেকে মুক্তি নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। এটা তো বিএনপি নেতাদের ভুলে যাওয়ার কথা না। কাজেই তাকে তো কেউ বিতাড়িত করেনি। স্বেচ্ছায় চলে গিয়েছিল। তারপরে আর সে ফিরে আসেনি। একজন রাজনৈতিক নেতা, তার যদি এই সাহস না থাকে ফিরে আসার, সে আবার নেতৃত্ব দেয় কিভাবে?

নিজের জীবনে আসা নানা 'বাঁধা, ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত' সফলভাবে মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার কথা দলের নেতাকর্মীদের সামনে তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ?আমাকেও তো বাধা দিয়েছে। আমি তো ফিরে এসেছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার মামলা দিয়েছে। আমি তো সবকিছু মোকাবিলা করেছি।

২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মনোনয়ন বাণিজ্য করেছিল অভিযোগ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, নেতৃত্বশূন্য একটা দল ইলেকশন করবে জনগণ ভোট দেবে কী দেখে? ওই চোর, ঠকবাজ, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করা, খুন, অস্ত্র চোরাকারবারি, সাজাপ্রাপ্ত আসামি তাদের এদেশের জনগণ ভোট দেবে? এ দেশ চালানোর জন্য? তা তো এদেশের জনগণ দেবে না। বাংলাদেশের মানুষ এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। তারা জানে আওয়ামী লীগ নৌকা মার্কা। আর নৌকার যে প্রয়োজন এবার বন্যায়ও তো নৌকার জন্য হাহাকার। নৌকা ছাড়া তো গতি নেই বাংলাদেশে- এটাও মনে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা শুধু এনে দেয়নি, স্বাধীনতার সুফল এখন ঘরে ঘরে পৌঁছাচ্ছে।

করোনা আবার বাড়ছে। তাই সবাইকে স্বাস্থ্য বিধি? মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বন্যা কিন্তু এখানেই থামবে না। এই পানি নিচে যত নামতে থাকবে, ধীরে ধীরে একেকটা এলাকা পস্নাবিত হতে থাকবে। কাজেই আমাদের সেই প্রস্তুতিও রাখতে হবে। এটা কিন্তু একেবারে ভাদ্র মাস পর্যন্ত চলবে। অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চলতে পারে এই বন্যা। সেটা মাথায় রেখেই আমাদের কিন্তু প্রস্তুতি নিতে হবে।

গণভবন থেকে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ প্রমুখ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে