বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

বিশ্বে করোনায় মৃতু্যর সঠিক তথ্য না পাওয়ার জন্য দায়ী চীন

উপধরনের সংক্রমণ ঠেকাতে পেস্ননে মাস্ক পরার পরামর্শ
যাযাদি ডেস্ক
  ১৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিস্নউএইচও) মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস অভিযোগ করে বলেছেন, চীন সরকার করোনায় মৃতু্য সম্পর্কিত সঠিক তথ্য না দেওয়ায় মহামারিতে বিশ্বজুড়ে মৃতু্যর পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের সাব ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় তা মোকাবিলার জন্য দূরপালস্নার ফ্লাইটে মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় ডবিস্নউএইচওর সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মহাপরিচালক গেব্রিয়েসুস বলেন, 'আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে কোভিডজনিত অসুস্থতার কারণে বিশ্বে মৃতু্য হয়েছে প্রায় ১১ হাজার ৫০০ জনের। শতাংশ হিসেবে এই মৃতদের মধ্যে ৪০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র ও আমেরিকা মহাদেশের, ৩০ শতাংশ ইউরোপের এবং বাকি ৩০ শতাংশ পশ্চিম প্রশান্ত অঞ্চলের।'

'কিন্তু এই তথ্য অসম্পূর্ণ; কারণ চীনের সরকার তাদের দেশে করোনার মৃতু্য সম্পর্কিত সঠিক ও নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য দিচ্ছে না। ফলে আমরা এখনও জানি না, গত সপ্তাহে বিশ্বজুড়ে করোনায় ঠিক কতজনের মৃতু্য হয়েছে।'

উলেস্নখ্য, ২০২০ সালে মহামারি শুরুর পর থেকে প্রায় তিন বছর দীর্ঘমেয়াদি লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, বিদেশ ভ্রমণে বিধিনিষেধসহ কঠোর সব করোনাবিধি জারি রেখেছিল চীন। শেষে জনগণের ব্যাপক বিক্ষোভের পর গত ডিসেম্বরে যাবতীয় বিধি শিথিল করে দেশটির সরকার।

এরপর থেকেই করোনা সুনামি শুরু হয় চীনজুড়ে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, দেশটিতে বর্তমানে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। চীনের বেসরকারি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, হাসপাতালগুলো উপচে পড়ছে গুরুতর অসুস্থ করোনা রোগীর ভিড়ে এবং বেশিরভাগ শহরের ফার্মেসিগুলোতে করোনার ওষুধ শেষ হয়ে গেছে।

দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট সরকার বর্তমান এই সংক্রমণ পরিস্থিতির হালনাগাদ কোনো তথ্য প্রকাশ করছে না। দেশটির সরকারি ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ২০২০ সালে মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত চীনে করোনায় মৃতু্য হয়েছে মোট ৫ হাজার ২৫৮ জনের।

সংবাদ সম্মেলনে ডবিস্নউএইচওর মহাপরিচালক বলেন, 'আমরা চীনকে বারবার বলছি- যেন সেখানকার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের সঠিক ও নির্ভুল তথ্য দেওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা সেখান থেকে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য পাইনি।'

করোনাভাইরাসের যে ধরনটি এখন সবচেয়ে বেশি মাত্রায় ছড়াচ্ছে- সেটির নাম এক্সবিবি.১.৫। ওমিক্রন গ্রম্নপের এই ভাইরাসটির আবির্ভাব ঘটেছে গত কয়েক মাস আগে।

সংবাদ সম্মেলনে ডবিস্নউএইচওর মহাপরিচালক প্রত্যেক দেশকে করোনা রোগীদের নমুনা ভালোভাবে পরীক্ষা ও ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স উদ্ঘাটনের আহ্বান জানিছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এক্সবিবি১.৫ ভাইরাসটির আবির্ভাব ঘটেছে অল্প কয়েক মাস আগে। সুতরাং এই মুহূর্তে এ ভাইরাসটির আরও একাধিক পরিবর্তিত ধরনের ক্রিয়াশীল থাকা খুবই স্বাভাবিক।'

'ডবিস্নউএইচওর বিভিন্ন সদস্যরাষ্ট্রের প্রতি আমাদের আহ্বান- করোনা রোগীদের নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স উদ্ঘাটন করুন এবং আমাদের জানান। যদি এক্ষেত্রে কোনো সহযোগিতা লাগে- তাহলেও বলুন।'

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে ওমিক্রনের উপধরন এক্সবিবি.১.৫ ছড়িয়ে পড়ায় দূরপালস্নার ফ্লাইটে মাক্স পরিধানের পরামর্শ দিয়ে ডবিস্নউএইচওর কর্মকর্তা ক্যাথরিন স্মলউড বলেন, 'এটি যেকোনো জায়গা থেকে আসা যাত্রীদের মেনে চলা উচিত। তাহলে তার দেশ সুরক্ষিত থাকবে। করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে না।'

প্রসঙ্গত ওমিক্রন এক্সবিবি.১.৫ সাব ভ্যারিয়েন্ট সবচেয়ে বেশি সংক্রমণযোগ্য বলে শনাক্ত হয়েছে। ৭ জানুয়ারি শেষ হওয়া সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনার ২৭.৬ শতাংশ সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য দায়ী এ ভ্যারিয়েন্ট।

বর্তমানে করোনার ভ্যাকসিনগুলো গুরুতর লক্ষণযুক্ত রোগী, হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃতু্যর বিরুদ্ধে কাজ করছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। ডবিস্নউএইচওর কর্মকর্তা বলেন, যদি দেশগুলোতে নেওয়া নানা পদক্ষেপ বিবেচনা করা হয়, তবে এ কথা বলা দরকার যে, ভ্রমণ বিধিগুলো মানতে কোনো বৈষম্য রাখা ঠিক নয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে