শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
নিহত প্রায় তিন হাজার

ভূমিকম্পে মৃতু্য উপত্যকা তুরস্ক-সিরিয়া

৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প ম তুষারপাতে উদ্ধার কাজ ব্যাহত ম জরুরি অবস্থা জারি ম তুরস্কের সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা ম সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে বিশ্ব
যাযাদি ডেস্ক
  ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

একই দিনে পরপর দুই দফার শক্তিশালী ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এতে নিহত হয়েছেন প্রায় তিন হাজার। এর মধ্যে শুধু তুরস্কেই মারা গেছেন দুই হাজারের বেশি মানুষ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন হাজার-হাজার মানুষ। স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪টার দিকে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় গাজিয়ানতেপের কাছে আঘাত হানে সাত দশমিক আট মাত্রার ভূমিকম্প। এতে ধসে পড়ে প্রায় দুই হাজার ঘরবাড়ি। প্রতিবেশী দেশ সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকা ইদলিবের বহু বাড়িঘরও একইভাবে ধসে পড়ে। কয়েকটি ভবন ধসে পড়েছে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কেও। এদিকে, প্রথম দফর ধাক্কা না সামলাতেই তুরস্কের স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ২৪ মিনিটে দেশটির কাহরামানমারাস শহরের কাছে দ্বিতীয় দফায় ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর মাত্রা ছিল সাত দশমিক পাঁচ। এতে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষজনকে উদ্ধার করা আরও দুরূহ হয়ে পড়েছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, ডেইলি মেইল, আল-জাজিরা

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গাজিয়ানতেপের কাছে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পে প্রতিবেশী সিরিয়াসহ লেবানন, ইসরাইল, ফিলিস্তিন ও সাইপ্রাসও কেঁপে ওঠে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপের (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটি তুরস্কের গাজিয়ানতেপ প্রদেশের নুরদাগি এলাকা থেকে ২৩ কিলোমিটার পূর্বে ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে আঘাত হানে। এর গভীরতা ছিল ২৪ দশমিক এক কিলোমিটার।

এই প্রথম দফা ভূমিকম্পের ১১ মিনিট পর তুরস্কের মধ্যাঞ্চলে শক্তিশালী আফটারশক (পরাঘাত) অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ছয় দশমিক সাত। কর্তৃপক্ষ বলেছে, আগামী কয়েক দিন বা সপ্তাহগুলোতে ভূমিকম্পের আফটারশক আঘাত হানতে পারে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ান ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে এরই মধ্যে উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছেন। সোমবার রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান শেষ হয়নি। বলা যায়, উদ্ধারকারীরা বেশিরভাগ এলাকায় উদ্ধার কাজ শুরুই করতে পারেননি। তুরস্কের কর্তৃপক্ষ বলেছে, সাত দশমিক আট মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে দেশটিতে অন্তত এক হাজার ৭১৮টি ভবন ধসে পড়েছে। ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের কারণে তুরস্কে আগামী ১৩ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এক মিনিটে আটটি আফটারশক তুরস্কে : তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ খারমানমারাসের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে আঘাত হানা সাত দশমিক আট মাত্রার ভূমিকম্পের এক মিনিটের মধ্যে আটটি আফটারশক (পরাঘাত) আঘাত হেনেছে। সাত দশমিক আট মাত্রার ভূমিকম্পের পর খুবই শক্তিশালী আটটি আফটারশকও হয়েছে। এতে তার ঘরে থাকা বিভিন্ন জিনিসপত্র মাটিতে পড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ রকম শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর কয়েক ঘণ্টা, এমনকি কয়েকদিন পর পর্যন্তও আফটারশক হতে পারে।

আশপাশ তখন দোলনার মতো দুলছিল: তুরস্কের মালত্য শহরে বাস করেন ২৫ বছর বয়সি ওজগুল কনাকচি। দেশটিতে সোমবার ভোরে আঘাত হানা ভূমিকম্পের প্রত্যক্ষদর্শী তিনি। ভূমিকম্পে অক্ষত ওজগুল বলেন, 'চোখের সামনে ভবনের জানালাগুলো সশব্দে চূর্ণবিচূর্ণ হতে দেখলাম। আশপাশ তখন দোলনার মতো দুলছিল। তিনি বলেন, ভূমিকম্পের সময় তিনি ও তার ভাই ঘুমাচ্ছিলেন। ওজগুল বলেন, 'আমরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে বলি, 'তুমি কি কাঁপছ?' ওজগুল আরও বলেন, 'আমি ল্যাম্পের (বাতি) দিকে তাকালাম। মনে হচ্ছিল ল্যাম্পটি ভেঙে যাচ্ছে। আমরা আমাদের তিন বছর বয়সি ভাতিজাকে সঙ্গে নিয়ে লাফিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। আমাদের চোখের সামনে আফটারশকে একটি ভবনের জানালাগুলো ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়।'

ভূমিকম্পে ওজগুলদের ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের আশপাশের পাঁচটি ভবন ধসে গেছে। তিনি বলেন, অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে এখন খুব ঠান্ডা রয়েছে। তুষারপাত হচ্ছে। এটা আরেক উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। তার ভাষায়, সব লোক এখন রাস্তায় অবস্থান করছেন। তারা কী করবেন, তা নিয়ে বিভ্রান্ত।

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের বাসিন্দা সামের বলেন, 'ভোরের দিকে হঠাৎ ঘরের দেয়ালে টাঙানো ছবিটি বিকট শব্দে পড়ে যায়। আমি হকচকিয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়ি।

বুঝতে পারি, ভূমিকম্প হচ্ছে। সবাইকে নিয়ে হুড়মুড় করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় নিজের বাড়িটি মাটিতে মিশে যেতে দেখলাম। নিহাত আলতুন্ডাগ নামে এক ব্যক্তি বলেন, 'আমার চারপাশে ভবনের ধ্বংসস্তূপ। সেখানে আগুন লেগেছে। যেসব ভবন টিকে আছে, সেগুলোতেও বড় বড় ফাটল। শত শত মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে, তাদের মধ্যে কত যে শিশু আছে তার ঠিক নেই। তারা বেঁচে আছে কি-না, তা আমরা কেউই জানি না।'

তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর আদানার নিলুফার আসলান নামে এক নারী বলেন, 'ভূমিকম্পে আমাদের পাঁচতলার অ্যাপার্টমেন্টটি কেঁপে ওঠে। প্রায় এক মিনিট ধরে পুরো ভবন কাঁপতে থাকে। এ সময় আমি পরিবারের অন্য সদস্যদের এক জায়গায় জড়ো হওয়ার জন্য বলি। আমার মাথায় তখন শুধু একটি কথাই ঘুরপাক খাচ্ছিল, মারা গেলে অন্তত সবাই একই জায়গায় একসঙ্গে মরে যাই। ভূমিকম্প থামলে, দৌড়ে বাইরে চলে আসি। এর পরপরই আমাদের ভবনটিসহ আশপাশের চারটি ভবন ধসে পড়ে। বেরিয়ে আসার সময় আমার সঙ্গে কিছুই নিয়ে আসতে পারিনি। সব শেষ হয়ে গেছে। তবে, বেঁচে আছি সেটিই এখন সবচেয়ে ভাগ্যের বিষয়।' গাজিয়ানতেপের বাসিন্দা এরদেম বলেন, 'আমি আমার ৪০ বছরের জীবনে এত বড় ভূমিকম্প দেখিনি।'

জরুরি অবস্থা জারি, হতাহতদের উদ্ধারে

জোর তৎপরতা তুরস্কে

এদিকে, বিধ্বস্ত ভবনগুলোতে আটকে পড়া হতাহতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছে তুরস্কের সরকারি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তর এএফএডি, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। এরই মধ্যে জরুরি অবস্থা জারির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়ে 'চার মাত্রা'র সংকেত জারি করেছে দেশটির সরকার।

তুরস্কের সরকারি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তর এএফএডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খারমানমারাস ছাড়াও দেশটির মালাতিয়া, সানিল, দিয়ারবাকির এবং ওসমানিয়া প্রদেশে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটেছে ব্যাপক হারে। তুরস্কের টিআরটি ও হাবেরতুর্ক টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিবেদনে ধসে পড়া ভবনে উদ্ধারকাজ চালানোর বেশকিছু ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়েছে।

দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সয়লু সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'আমাদের প্রাথমিক কাজ হলো উদ্ধার তৎপরতা চালানো এবং সরকারি উদ্ধারকর্মী বাহিনীর সব সদস্য তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ আছেন।'

এদিকে, ভূমিকম্পে আহতদের ভিড়ে উপচে পড়ছে সিরিয়ার বিভিন্ন হাসপাতাল। দেশটিতে ত্রাণ তৎপরতা পরিচালনাকারী সংস্থা 'দ্য সিরিয়ান আমেরিকান মেডিকেল সোসাইটি' সোমবার এক বিবৃতিতে উলেস্নখ করেছে এ তথ্য। মেডিকেল সোসাইটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'সিরিয়ার অধিকাংশ হাসপাতাল (আহতদের ভিড়ে) পূর্ণ হয়ে গেছে। এমনকি স্থানের আল-দানাসহ আরও কয়েকটি হাসপাতাল রোগী ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। ইদলিব প্রদেশের একটি ম্যাটার্নিটি হাসপাতাল আহতদের জায়গা করে দিতে নবজাতক শিশুদের নিকটবর্তী অপর একটি হাসপাতালে পাঠাতে বাধ্য হয়েছে। শিগগিরই হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা উপকরণের ঘাটতি শুরু হওয়ার সমূহ আশঙ্কা আছে। কারণ হাজার হাজার আহত রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।'

ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর তুরস্কে এখন রক্তের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। হাজার হাজার আহত ব্যক্তির চিকিৎসায় দরকার হচ্ছে বিভিন্ন গ্রম্নপের প্রচুর পরিমাণ রক্ত। এমন পরিস্থিতিতে তুর্কি রেড ক্রিসেন্টের প্রেসিডেন্ট কেরেম কিনিক গোটা জাতিকে ভূমিকম্পে আহতদের জন্য স্বেচ্ছায় রক্তদানের আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার দুপুরে এক টুইটে তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে রক্তের অতিরিক্ত চালান পাঠানো হচ্ছে। এর পাশাপাশি তিনি জনসাধারণকে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে ভিড় না জমিয়ে উদ্ধারকারীদের জন্য রাস্তা পরিষ্কার করার আহ্বান জানান।

বিরূপ আবহাওয়ায় উদ্ধার কাজ ব্যাহত

তুরস্ক ও সিরিয়ায় আঘাত হানা ভয়াবহ দুই ভূমিকম্পের পর বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কাজ। উদ্ধার কাজ পরিচালনায় বাধা দিচ্ছে বিরূপ আবহাওয়া। তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতায় বলেছেন, চরম বিরূপ আবহাওয়ার কারণে কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে। তিনি বলেন, 'আমরা যত দ্রম্নত সম্ভব ঘটনাস্থলগুলোতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।'

তীব্র শীতল আবহাওয়ার কারণে পরিস্থিতি খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। চারদিকে তুষার ও বৃষ্টি, সঙ্গে তীব্র শীত। আবহাওয়ার পরিস্থিতি ও জলবায়ু উদ্ধারকর্মী ও বেসামরিকদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন করে তুলেছে। মনে হচ্ছে এটিই সবার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

তুর্কি শহর দিয়ারবাকির থেকে পাওয়া টেলিভিশনের ছবিতে দেখা গেছে, শীতের জ্যাকেট পরে এবং তুষারে ঢাকা মুখ নিয়ে ধ্বংসস্তূতে জীবিতদের সন্ধানে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ভূমিকম্পটি উত্তর সিরিয়ায় বড় ধরনের ঝড় আঘাত হেনেছে। সেখানেও তীব্র শীত। অনেক মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। তাদের স্থান এখন উন্মুক্ত স্থানে। এমনিতেই উত্তর সিরিয়ায় লাখো মানুষের বাড়ি তাঁবু। ফলে এটি এমন এক জরুরি পরিস্থিতি তা সহজে মোকাবিলা সম্ভব নয়।

সিরিয়ার ইদলিব শহরের আলা নাফি ভূমিকম্পকে খুব ভয়ংকর এবং আতঙ্কজনক হিসেবে উলেস্নখ করেছেন। তিনি বলেন, 'ঘুম ভাঙার পর পুরো ভবনকে দুলতে দেখা আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ অনুভূতি। এটি সহজে ভুলতে পারছি না।' তিনি আরও বলেন, 'শীতের মধ্যে মানুষজনকে সন্তানদের নিয়ে রাস্তায় কাঁদছে দেখা ছিল হৃদয়বিদারক। আমরা সবাই সব ভবন থেকে একটি জায়গায় জড়ো হয়েছিলাম।'

তুর্কি শহর গাজিয়ানতেপে ভূমিকম্পের পর থেকে তীব্র শীতের মধ্যে অনেক মানুষ বাইরে। তারা অপেক্ষায় ছিলেন মসজিদের দরজা খুললে তারা হিমশীতল আবহাওয়া থেকে ভেতরে আশ্রয় নেবেন। তবে অনেক মানুষ সেখানেও নিরাপদবোধ করছেন না। পুরো রাস্তা গাড়িতে ভরে গেছে। মানুষ গাড়ির ভেতর বসে আছেন। এটি একেবারে দুঃস্বপ্নের মতো। এটি অবর্ণনীয়।

সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে বিশ্ব

ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক ও সিরিয়ার পাশে দাঁড়াতে এরই মধ্যে সহায়তাসহ তাদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘ, আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ। তবে তুরস্ক ও সিরিয়া উভয়েই ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হলেও এখন পর্যন্ত অধিকাংশ সহায়তার প্রস্তাব এসেছে তুরস্কের প্রতি।

জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিস্নউএইচও) মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস সোমবার এক তাৎক্ষণিক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে গুরুতর আহতদের চিকিৎসাসেবা দিতে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা উপকরণসহ ডবিস্নউএইচওর একটি চিকিৎসক দল এরই মধ্যে গঠন করা হয়েছে। তুরস্ক-সিরিয়ার যেসব এলাকায় গুরুতর আহতের সংখ্যা বেশি সেসব এলাকায় চিকিৎসাসেবা দেবে ডবিস্নউএইচওর দলটি।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন তুরস্ক ও সিরিয়া উভয় দেশের হতাহতদের প্রতি শোক জানিয়েছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ানকে তিনি বলেছেন, ১০০ জন উদ্ধারকর্মীর একটি দল এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। তুরস্ক যখনই চাইবে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

এছাড়া সিরিয়ার সেনাদের সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দিতে বেশ কয়েক কোম্পানি রুশ সেনা সদস্য বর্তমানে সিরিয়ায় অবস্থান করছে। তাদের সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়ে ত্রাণ তৎপরতা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তর ১০০ জন কর্মীর সমন্বয়ে দুটি দল গঠন করে শিগগিরই তুরস্কে পাঠানো হবে। এই দলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তরের কর্মীরা ছাড়াও থাকবে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত কুকুর, বেশ কয়েকজন চিকিৎসক, ওষুধ ও অন্যান্য চিকিৎসা উপকরণ।

পোল্যান্ডের স্বরাষ্ট্র ও প্রশাসন মন্ত্রী মারিউসজ কামিনস্কি বলেছেন ৭৬ জন উদ্ধারকর্মী ও ৮টি প্রশিক্ষত কুকুরের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল শিগগিরই তুরস্কে পাঠানো হবে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক বার্তায় বলেছেন, 'তুরস্কের এই বিপদের দিনে ইউক্রেনের জনগণ তাদের পাশে আছে এবং যে কোনো প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে তারা প্রস্তুত।'

গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কাইরিকোস মিটসোটাকিস তুরস্কের হতাহতদের প্রতি শোক জানিয়ে বলেছেন, গ্রিস এরই মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী ও উদ্ধার কর্মীদের একত্র করা শুরু করেছে। এই কাজ শেষ হলেই তাদের তুরস্কে পাঠানো হবে। স্পেন ও তাইওয়ানের সরকারও তুরস্কে শিগগিরই ত্রাণ, উদ্ধারকর্মী ও চিকিৎসা সামগ্রী পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তুরস্ক ও সিরিয়া উভয় দেশের হতাহতদের প্রতি শোক জানিয়ে বলেছেন, 'আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সরকারের সব প্রতিষ্ঠানকে এরই মধ্যে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই উপদ্রম্নত বিভিন্ন এলাকায় আমরা চিকিৎসা সহায়তা ও চিকিৎসকদের দল পাঠাব।'

এদিকে, ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতিকে ট্র্যাজেডি অ্যাখ্যা দিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ান টুইট বার্তায় বলেন, 'সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠব আমরা।' নিহতদের পরিবারের প্রতি শোক এবং আহতদের দ্রম্নত আরোগ্য কামনা করেন তিনি।

বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলোর একটি হলো তুরস্ক। ১৯৯৯ সালে তুরস্কের দুজক অঞ্চলে সাত দশমিক চার মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। সেই দুর্যোগে দেশটিতে মোট নিহতের সংখ্যা ছিল ১৭ হাজারের বেশি। একক শহর হিসেবে ইস্তাম্বুলে নিহতের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি, প্রায় এক হাজার। তারপর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তুরস্কের পূর্বাঞ্চলীয় শহর এলাজিগে ছয় দশমিক আট মাত্রার ভূমিকম্পে ৪০ জন নিহত হন। একই বছর অক্টোবরে এজিয়ান সাগর উপকূলে সাত মাত্রার আরও একটি ভূমিকম্প হয়েছিল। সেই দুর্যোগে নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছিল ১১৪ জনে। তবে সোমবারের ভূমিকম্পটি ছিল তুরস্ক ও সিরিয়ায় গত ৮০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী। সিরিয়ার জাতীয় ভূমিকম্প কেন্দ্রের প্রধান রায়েদ আহমেদ রাষ্ট্রীয় এক রেডিও স্টেশনকে বলেছেন, এই ভূমিকম্প তাদের ভূকম্পন কেন্দ্রের ইতিহাসে রেকর্ড করা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। সিরিয়ার এই ভূমিকম্প কেন্দ্রটি ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে