শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

আমদানির ফাঁদে ছোট খামারিরা!

রেজা মাহমুদ
  ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
আমদানির ফাঁদে ছোট খামারিরা!

দেশের বাজারে প্রথমবারের মতো ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। তবে বাজারে দাম কার্যকর না হওয়ায় ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি নিয়েছে সরকার। স্থানীয় উৎপাদকরা বলছেন, এতে করপোরেট খামারিরা লোকসানে না পড়লেও বিপাকে পড়বে কয়েক লাখ ছোট খামারি।

তাদের দাবি, ডিম আমদানিতে সাময়িকভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও এ শিল্প দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সরকার যদি নির্ধারিত দাম কার্যকর করতে চায় তাহলে উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে। বিশেষ করে ফিডের ও বাচ্চার যে অস্বাভাবিক দাম বিদ্যমান আছে তা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলেই বাজারে ডিমের দাম অনেকটাই কমে আসবে।

বর্তমানে দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ ডিমের উৎপাদক ক্ষুদ্র বা প্রান্তিক

খামারিরা। বাকি ২০ শতাংশের উৎস বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও তাদের নিয়ন্ত্রিত খামারগুলো। কিন্তু ফিড ও বাচ্চার মূল্য ব্যবধানের কারণে করপোরেট উৎপাদন ব্যয় অনেকটাই কম। এর বিপরীতে প্রান্তিক খামারিদের ডিমের উৎপাদন ব্যয় নির্ধারিত পাইকারি দামের সমান। এ অবস্থায় আমদানি করা হলে প্রান্তিক উদ্যোক্তারা লোকসানে পড়বে।

তারা বলছেন, সরকারী হিসেবে বর্তমানে প্রতি পিস ডিমের উৎপাদন ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ টাকা ৫০ পয়শা এবং খুচরায় বিক্রি মূল্য ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু খামারিদের দাবি এই দামে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ডিম বিক্রি করতে পারে কারণ তাদের উৎপাদন ব্যয় ৯ টাকার কাছাকাছি। অন্যদিকে বাজার চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশের উৎপাদক প্রান্তিক খামারিদের ব্যয় হয় ১০ টাকার বেশি। ফলে তাদের কোন লাভ থাকে না।

প্রান্তিক খামারিদের একমাত্র সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্র্রি অ্যাসোশিয়েশন (বিপিএ) দাম নির্ধারণের বিষয়টিকে সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও ৮০ শতাংশ ডিমের উৎপাদক খামারিদের উৎপাদন ব্যয় হিসেব করে এটা নির্ধারণ করা উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে মাত্র ২০ শতাংশ ডিমের সরবরাহকারী করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও তাদের নিয়ন্ত্রিত খামারিদের উৎপাদন ব্যয় হিসেবে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

মূলত ফিড ও তিন দিনের বাচ্চার ক্রয় মূল্যের ব্যবধানের কারণেই উৎপাদন ব্যয়ে বিস্তর ফারাক তৈরি হয়েছে। বিপিএ'র সভাপতি সুমন হাওলাদার যায়যায়দিনকে বলেন, সরকার যদি ডিমের দাম সহনীয় রাখতে চায় তাহলে সবার আগে অভিন্ন ফিড ও বাচ্চার দাম নির্ধারণ জরুরি। এতে কেবল বাজারে দাম কার্যকর নয়, খুচরায় প্রতি পিস ডিমের দামও ১০ টাকার মধ্যে চলে আসবে।

বর্তমানে দেশে প্রতিদিন ৪ কোটি ডিমের চাহিদা রয়েছে যার ৮০ ভাগ উৎপাদন করেন প্রান্তিক খামারিরা। অথচ তাদের লেয়ার মুরগির বাচ্চা কিনতে হয় ৭০ টাকা এবং এক বস্তা ফিড কিনতে হয় ৩ হাজার ৫০০ টাকায়। যেখানে করপোরেট খামারিদের বাচ্চায় ব্যয় হয় ৩৫ টাকা এবং ফিডে ২ হাজার ৫০০ টাকা। ফলে এসব খামারিদের মুনাফা হলেও লোকাসানে এ খাতের বড় একটি অংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ অবস্থায় ডিম আমদানি করা হলেও তা বাজার চাহিদার সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পূরণে সক্ষম হবে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কয়েক লাখ খামারি। উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হবেন এবং বাজারে সরবরাহ সংকট আরো প্রকট হবে। ফলে চাহিদা পূরণে আমদানি আরও বাড়াতে বাধ্য হতে পারে সরকার। সে ক্ষেত্রেও এগিয়ে থাকবে করপোরেট পুঁজিধারীরা।

খামারিরা বলছেন দেশের পোলট্রি খাতকে রক্ষা এবং দাম সহনীয় করতে চাইলে অভিন্ন ফিড ও বাচ্চার দাম নির্ধারণ এবং আইনগত পরিবর্তন জরুরি। তা না করা হলে ডিমের দাম বৃদ্ধিসহ এ খাতেও বাড়তে পারে আমদানি নির্ভরতা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে