শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
হত্যাকান্ডে জড়িত পাঁচজন গ্রেপ্তার

লেনদেনের সূত্র ধরে বন্ধুকে খুন

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
লেনদেনের সূত্র ধরে বন্ধুকে খুন

লেনদেনের সূত্র ধরে আক্রোশে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে চোখ তুলে বন্ধুকে হত্যার আলোচিত ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছের্ যাব। হত্যার আগে ওই যুবককে বাসযোগে অপহরণ করা হয়। অপহরণের আগে ও অপহরণের পর তার ওপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে পুরো শরীর ক্ষত-বিক্ষত করা হয়। এরপর বাসের ভেতরেই হাত-পা চেপে ধরে বাম চোখ তুলে ফেলে। পরে হত্যাকারীরা লাশ ফেলে দেয় নারায়ণগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ের পাশে নির্জন জায়গায়। হত্যাকান্ডের মোটিভ ঘুরিয়ে দিতেই এমন কৌশল নিয়েছিল হত্যাকারীরা।

শুক্রবার দুপুরে ঢাকার কারওয়ান বাজারর্ যাব মিডিয়া সেন্টারে এমনটাই জানালেনর্ যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, গত ৯ জানুয়ারি সকাল দশটার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানাধীন এশিয়ান হাইওয়ের রঘুরামপুর এলাকায় এক যুবকের চোখ উপড়ানো বীভৎস লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পরই এমন ঘটনায় রীতিমতো হইচই পড়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ,র্ যাব-১ এর গোয়েন্দা ও পোশাকধারী সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। অজ্ঞাত হিসেবে লাশটি উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়।

র্

যাব কর্মকর্তা জানান, উদ্ধারের সময় লাশের সঙ্গে একটি মানিব্যাগ ছিল। মানিব্যাগে থাকা কাগজপত্র ও অজ্ঞাত লাশ শনাক্ত করার বিশেষ যন্ত্রের সহায়তায় নিহতের পরিচয় পাওয়া যায়। পরে নিহতের পরিবারের সদস্যরাও লাশ শনাক্ত করেন। জানা যায়, নিহতের নাম ফারুক হোসেন (২৬)। পিতার নাম আব্দুল বারেক শেখ। বাড়ি চাঁদপুরে। এ ঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় ওইদিন অজ্ঞাত খুনিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

র্

যাব কর্মকর্তা কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।র্ যাব সদরদপ্তর ওর্ যাব-১ এর গোয়েন্দারা হন্যে হয়ে হত্যাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে হত্যাকারীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়। সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যমতে, হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারে ঢাকার উত্তরা, গাজীপুরের টঙ্গী ও লক্ষ্ণীপুরের রায়পুর এলাকায়র্ যাবের একাধিক গোয়েন্দা দল অভিযান চালায়।

র্

যাব কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার হয় ৫ জন। তারা হচ্ছেন- হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী নিজাম উদ্দিন (৩৬), পিতা-মৃত শফি উলস্নাহ হাওলাদার, লক্ষ্ণীপুর সদর, লক্ষ্ণীপুর। সোহাগ (৩৮), পিতা মৃত তোফাজ্জেল হোসেন, রাজাপুর, ঝালকাঠি। জহিরুল ইসলাম (৪৮), পিতা-মৃত আলী আজম, লক্ষ্ণীপুর সদর, লক্ষ্ণীপুর। রনি হোসেন (২৩), পিতা-আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার, থানা-রায়পুর, জেলা-লক্ষ্ণীপুর এবং বাদশা (২৩), পিতা. শাহজাহান, বাড়ি কুমিলস্নার দাউদপুরে।

র্

যাব কর্মকর্তা জানান, ফারুক স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঢাকার তুরাগ থানাধীন বাউনিয়া এলাকার একটি বাসায় ভাড়ায় থাকতেন। তিনি গাজীপুর জেলার টঙ্গী থানাধীন চেরাগ আলী এলাকায় ঢাকা এক্সপ্রেস নামে যাত্রীবাহী বাসের টিকিট কাউন্টারে টিকিট বিক্রির কাজ করতেন। সেখানে কাউন্টারের ম্যানেজার ছিলেন নিজাম। একই পরিবহণে কাজ করার সুবাদে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়।

গত ৮ জানুয়ারি নির্বাচনের পর দিন সকাল ১০টার দিকে ফারুক কাজের জন্য বাসা থেকে বের হন। প্রতিদিনই সাধারণত রাত ৮-৯টা বা ১০টার দিকে বাসায় ফিরতেন। ওইদিন আর ফেরেননি। বাসার লোকজন ফারুকের মোবাইলে ফোন করে তা বন্ধ পান। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, গণমাধ্যম ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে ফারুকের সন্ধান পায় তার পরিবার।

গ্রেপ্তারদের বরাত দিয়ের্ যাব কর্মকর্তা কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, নিজাম উদ্দিন গাজীপুরের টঙ্গীর চেরাগ আলী বাসস্ট্যান্ডে ঢাকা এক্সপ্রেস যাত্রীবাহী বাসের কাউন্টার ম্যানেজার হিসেবে ৭ বছর ধরে চাকরি করছিলেন। কাজের সূত্রধরে ফারুকের সঙ্গে তার পরিচয়। পরে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতাও হয়। পরে তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু হন। বন্ধুত্ব এতটাই ঘনিষ্ঠ পর্যায়ে পৌঁছায় যে, তারা একে অন্যের কাছ থেকে টাকা লেনদেনও করতেন। যা দীর্ঘদিন ধরে চলমান ছিল। টাকা লেনদেনের সূত্রধরেই আবার তাদের মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি হয়।

র্

যাব কর্মকর্তা বলেন, গত ৮ জানুয়ারি নিজাম পাওনা টাকা চান ফারুকের কাছে। ফারুক টাকা দিতে দেরি হবে বলে যুক্তি দেখায়। কিন্তু নিজাম তা বিশ্বাস করে না। এ নিয়ে দু'জনের মধ্যে চরম ঝগড়া হয়। নিজাম চরম ক্ষিপ্ত হয়ে ফারুককে উচিত শিক্ষা দেওয়ার ঘোষণা দেন। তারই জেরে নিজাম তার সহযোগী সোহাগ, জহিরুল, রনি ও বাদশাসহ কয়েকজনের সঙ্গে ফারুককে চরম শিক্ষা দেওয়ার বিষয়ে পরিকল্পনা করেন।

র্

যাব কর্মকর্তা জানান, গত ৮ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৭টায় নিজাম ফোন করে ফারুককে আরও টাকা ধার দেওয়ার কথা জানায়। টাকা নিতে তাকে টঙ্গী বাস কাউন্টারে যেতে বলে। ফারুক সরল বিশ্বাসে সেখানে যান। এ সময় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী নিজাম পাশের একটি নির্জন জায়গায় ডেকে নিয়ে যান ফারুককে। সেখানে আগ থেকেই অবস্থান করে থাকা নিজামের গ্রেপ্তার হওয়া চার সহযোগী ফারুককে বেধড়ক মারধর করে।

পরে তারা ফারুককে জোরপূর্বক ঢাকা এক্সপ্রেস নামে একটি যাত্রীবাহী খালি বাসে তোলে। বাসের ভেতরে মারতে থাকে ফারুককে। মারের চোটে ফারুক অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এ সময় ফারুকের সারা শরীরের এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। রাগের মাথায় গ্রেপ্তার সোহাগ ও রনি হাত-পা চেপে ধরে ফারুকের। আর বাদশা বাসের টুল বক্সে থাকা স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে ফারুকের বাম চোখ উপড়ে ফেলে। এক পর্যায়ে বাসের ভেতরেই ফারুকের মৃতু্য হয়।

র্

যাব কর্মকর্তা বলছেন, হত্যার ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার পরিকল্পনা করে। বিশেষ করে নির্বাচন পরবর্তী গুপ্তহত্যা বা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে চালিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে লাশ ওই নির্জন জায়গায় ফেলে দিয়ে তারা পালিয়ে যায়। নিজাম দুর্ধর্ষ প্রকৃতির লোক। তার বিরুদ্ধে লক্ষ্ণীপুর সদর থানায় ১টি হত্যাচেষ্টা আছে। বাদশা গাজীপুরের টঙ্গীতে একটি গ্রিল বানানোর ওয়ার্কশপে কাজ করতেন। তার সঙ্গে নিজাম ও রনির পূর্ব পরিচয় ছিল।

পুরনো সখ্য থেকেই নিজামের ডাকে তিনি সেখানে গিয়ে ফারুক হত্যায় অংশ নেন। তিনি ফারুক হত্যার পর টঙ্গীতেই আত্মগোপন করেছিলেন। রনি ঢাকা এক্সপ্রেস ও লাবিবা ক্লাসিক পরিবহণের টঙ্গী স্টেশনের কাউন্টার ম্যানেজার। তিনি ঢাকার উত্তরায় আত্মগোপন করেছিলেন। সোহাগ ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহণে ১৭ বছর যাবৎ চাকরি করছিলেন। তিনি ঘটনার পর লক্ষ্ণীপুরের রায়পুর এলাকায় আত্মগোপন করেছিলেন। তিনি দুর্ধর্ষ প্রকৃতির মানুষ। তার বিরুদ্ধে ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর থানায় মারামারির মামলা আছে।

জহিরুল ৪ বছর ধরে ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহণের চালক হিসেবে কাজ করছিলেন। যে বাসযোগে ফারুককে হত্যার পর লাশ রাস্তার পাশে ফেলা দেওয়া হয়, সেই বাসটির চালক ছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে লক্ষ্ণীপুর সদর থানায় একটি মামলা আছে। ফারুক হত্যার পর তিনি লক্ষ্ণীপুরে পালিয়ে ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে