বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ঢাকায় যাচাইবাছাই ছাড়াই নেওয়া হচ্ছে আবাসন প্রকল্প

রেহমান সোবহান
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ঢাকায় যাচাইবাছাই ছাড়াই নেওয়া হচ্ছে আবাসন প্রকল্প

আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরাই নগর পরিকল্পনার নির্ণায়ক হয়ে উঠছে এবং তাদের কারণেই ঘিঞ্জি নগর গড়ে উঠছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান। ঢাকার চারদিকে কৃষি জমিতে যাচাইবাছাই ছাড়াই আবাসন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে সতর্ক করে এখনই এসব থামানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

'দায়িত্বশীল নগরায়ন : সমস্যা ও সমাধান' বিষয়ে শনিবার ঢাকায় এক বিশেষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির এই চেয়ারম্যান। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে।

ঢাকা থেকে পদ্মাসেতু পার হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত গেলে রাস্তার দুই পাশের কৃষি জমিতে আবাসন ব্যবসায়ীদের সাইনবোর্ড থাকার কথা তুলে ধরে সিপিডি চেয়ারম্যান বলেন, 'এভাবেই এক সময়ের ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকা কেরানীগঞ্জ এখন ঢাকা শহরের কেন্দ্রে রূপান্তরিত

\হহয়ে গেছে। একইভাবে আপনি সাভার পর্যন্ত দুই পাশের সব জমিতেই আবাসিক এলাকা হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা মহানগর একদিকে পদ্মা, অন্যদিকে যমুনা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে গেছে।'

অপরিকল্পিতভাবে আবাসন খাতকে এখনই থামানো উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'ব্যবসায়ীরা যেভাবে আগাচ্ছে তাতে পদ্মা আর যমুনা পার হয়ে এভাবে নগরায়ন যশোর-খুলনায় গিয়ে পৌঁছাতে পারে।'

এই প্রক্রিয়ায় জমির দাম 'সোনার দামে' ঠেকেছে উলেস্নখ করে রেহমান সোবহান বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রে সোনার খনি ডাকাতি হয় আর আমাদের দেশে জমি ডাকাতি হচ্ছে। এভাবে অপরিকল্পিতভাবে জমি দখলের কারণে রাজধানীর পানির উৎস হিসেবে থাকা জলাশয় দখল হয়ে যাচ্ছে, আবার টেকসইভাবে ড্রেনেজ ব্যবস্থাও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।'

সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন না করার কারণেই এ ঘটনা ঘটছে বলে জানান রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, '১৯৯১ সালের পর রাজধানী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জমি ব্যবহার নিয়ে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। ওই পরিকল্পনায় কোন জমি কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, কোথায় কৃষি জমি থাকবে, কোথায় নগরায়ণের জন্য অধিগ্রহণ করা হবে পরিকল্পনায় এসব চিহ্নিত করা হয়েছিল। এটা আদর্শগতভাবেই বাস্তবায়ন করা দরকার। কিন্তু ওই পরিকল্পনা গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়নি। বরং পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী সংস্থা আবাসন খাতের ব্যবসায়ী ও জমি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে।'

ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নগর গবেষণা কেন্দ্র (সিইউএস) এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।

বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ নগরে বসবাস করছে এবং তাদের প্রায় ৩২ শতাংশই ঢাকার বাসিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে নগরায়ণ সংকটের সম্মুখীন। শহরভিত্তিক উন্নয়ন ধারার কারণে ঢাকার জনসংখ্যা অতি দ্রম্নত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কিন্তু বর্ধিত এই জনসংখ্যার ভার বহনে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। অপ্রতুল সড়ক ব্যবস্থার কারণে বিপর্যস্ত হয়েছে পরিবহণ খাত।

রাজধানীর আয়তনের ২৫ শতাংশে সড়ক থাকার কথা থাকলেও এখন কেবল ৮ শতাংশে তা আছে জানিয়ে প্রবন্ধে বলা হয়, এর আবার ৫২ শতাংশ মোটরযান চলাচলের অনুপযোগী। এ কারণে যানজট বাড়ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপার সভাপতি নূর মোহাম্মদ তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির ও সহসভাপতি ইকবাল হাবিবও সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে