শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
আজ বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু

তুরাগ তীরে মানুষের ঢল

যাযাদি ডেস্ক
  ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে অংশ নিতে টঙ্গী তুরাগ তীরে লাখো মুসলিস্নর ঢল। ছবিটি বৃহস্পতিবার তোলা -নাজমুল ইসলাম

গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরের বিশ্ব ইজতেমায় মানুষের ঢল নেমেছে। মূল ময়দানের খিত্তায় জায়গা না পেয়ে আশপাশের সড়কে অস্থায়ী তাঁবু খাটিয়ে মুসলিস্নরা বয়ান শুনতে ও ইবাদতে মশগুল থাকতে আয়োজন করছেন।

বুধবারের মতো বৃহস্পতিবারও ভোর থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, পিকআপে করে দলে দলে ইজতেমায় আসছেন। তাদেরকে সুশৃঙ্খলভাবে ময়দানে পৌঁছে দেওয়া ও সড়কের পাশে অবস্থান নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর হতে দেখা গেছে।

শুক্রবার ভোরে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমার মূল কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার থেকেই মূল মঞ্চে প্রাথমিক বয়ানের কাজ শুরু করেছেন মুরুব্বিরা। প্রাথমিক বয়ান করেন দিলিস্নর মাওলানা আহমদ লাট, তা বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা ওমর ফারুক। ময়দানে আগতরা নিজেদের প্রস্তুতির পাশাপাশি খিত্তায়-খিত্তায় বসে সেসব বয়ান শুনছেন।

তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলাদাভাবে। জুবায়েরের অনুসারীরা ইজতেমা পালন করবেন ২, ৩ ও ৪ ফেব্রম্নয়ারি। চার দিন বিরতির পর সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা ইজতেমা করবেন ৯, ১০ ও ১১ ফেব্রম্নয়ারি।

ময়দানে গিয়ে দেখা যায়, এখনো বাস, ট্রাক, ট্রেন ও হেঁটে দলে দলে ইজতেমায় আসছেন মানুষ। তাদের কাঁধে বা পিঠে ঝুলছে ময়দানে অবস্থানের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। ভারী ব্যাগ মাথায় নিয়েও অনেকে আসছেন ময়দানে।

রোববার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মানুষের এ আগমন অব্যাহত থাকবে বলে জানান আয়োজকরা।

তবে আগতদের অনেকেই ময়দানে যেতে পারছেন না। তারা আশপাশের সড়ক ও খালি জায়গায় ত্রিপল ও পলিথিন দিয়ে অস্থায়ী তাঁবু বানাচ্ছেন। সেখানেই চট বিছিয়ে শীতের কাপড় নিয়ে বসছেন।

এ কারণে কামারপাড়া সড়ক, বাটা রোড, টিএন্ডটি রোড ও এর আশপাশের সড়কে সাধারণ যানবাহন বন্ধ হয়ে গেছে। এসব সড়ক দিয়ে শুধু বিদেশি মেহমানদের গাড়ি বিশেষ ব্যবস্থায় চলাচল করতে দেখা গেছে।

নেত্রকোনা থেকে ২৪ সাথী নিয়ে ইজতেমায় এসেছেন ইউনুছ আলী। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'গ্রামের মসজিদ থেকে প্রতি বছরই দলবদ্ধ হয়ে

তাবলিগ জামাতের ইজতেমায় আসি আমরা। এবারও এসেছি। তিনদিন এখানে থাকব, ইবাদত-বন্দেগি করে কাটাব।'

মুন্সীগঞ্জের ইছাপুরা থেকে ২০ সাথী নিয়ে এসেছেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা হায়দার আলী। তিনি বলেন, 'সড়ক পথে কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই ইজতেমা ময়দানে এসে পৌঁছেছি। তবে মাঠে অন্য বছরের তুলনায় এবার চাপ অনেক বেশি বলে মনে হচ্ছে।'

আয়োজকরা জানান, এবার ইজতেমার প্রথম দিনই শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে তুরাগ তীরে দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিবারই জুমার নামাজে অংশ নিতে তাবলিগের অনুসারী ছাড়াও গাজীপুর ও আশপাশের জেলা থেকে আসা মানুষ বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ইজতেমা ময়দানে অবস্থান নিতে থাকেন।

ফলে সন্ধ্যার পর ও রাতে অনেক মানুষ ইজতেমাস্থলে জড়ো হবেন বলে আশা করছেন আয়োজকরা।

জামালপুর থেকে বাসে করে ৫০ জনের দল নিয়ে ইজতেমা মাঠে বিকাল ৩টায় পৌঁছেছেন নুরুল হক।

তিনি বলেন, 'সকাল ৮টায় জামালপুর থেকে রওনা হয়ে বিকালে এসেছি ইজতেমা ময়দানে। কিন্তু মাঠে এবার মানুষ গতবারের চেয়ে অনেক বেশি। ইজতেমা শুরুর আগের দিনই পুরো ময়দান ভরে গেছে।

ময়দানে স্থান না পেয়ে অনেকে ইজতেমাস্থলের আশপাশের বহুতল ভবনের ছাদে অবস্থান নিয়েছেন।

খোলা আকাশের নীচে ত্রিপল বা পলিথিন টানিয়ে তিনদিন কাটিয়ে দেবেন বলে জানান ময়মনসিংহ থেকে আসা আব্দুল করিম। তিনি বলেন, তার দলের মতো আরও অনেকে আশপাশের ভবনের ছাদে অবস্থান নিয়েছেন।

পলিথিন শিট-পস্নাস্টিকের বস্তার কদর বেড়েছে

এদিকে আমাদের গাজীপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বিশ্ব ইজতেমায় পলিথিন শিট ও ফয়েল কাগজের তৈরি মলাট বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। আর তিন জনের থাকার পস্নাস্টিক বস্তায় তৈরি শিটের দাম তিনশ টাকা।

বৃহস্পতিবার বিকালে বিশ্ব ইজতেমার ময়দান ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।

বিশ্ব ইজতেমার ৭নং গেটের সামনে পলিথিনে মোড়ানো কাগজের তৈরি মলাট বিক্রি করছিলেন পারভেজ আহমেদ। তিনি বলেন, আমি একটি কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করি। একটি কারখানা থেকে পাইকারি দরদাম আলোচনা করে আমি ইজতেমায় এ পণ্য এনে বিক্রি করছি। মুসলিস্নরাও তা কিনে নিচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, ৬ টাকায় কাগজ কিনে এনে ১০ টাকায় বিক্রি করছি। ৪ টাকা লাভ হচ্ছে। কোনো মুসলিস্নর কাছে যদি টাকা কম থাকেও চেষ্টা করি তাকে দিয়ে দিতে।

সাখাওয়াত হোসেন পস্নাস্টিকের বস্তায় তৈরি চট বিক্রি করছিলেন। তিনি জানান, প্রতি বছর বিশ্ব ইজতেমায় চট সংকট দেখা দেয় মুসলিস্নদের মধ্যে। এ চিন্তায় আগে থেকেই বস্তা তৈরি করে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি চারশ টাকা দাম চাচ্ছি। কোনো মুসলিস্ন সাড়ে তিন শ বা তিনশ টাকা দাম বললেও তা দিয়ে দিচ্ছি। তিনশ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব না বলে জানান।

এছাড়াও প্রতি গজ পলিথিন ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছিলেন আরাফাত হোসেন। তিনি বলেন, এবারের ইজতেমায় কিছু অংশ সামিয়ানা টানানো হয়নি। ময়দান ছেড়ে মুসলিস্নরা বসেছেন রাস্তায়। তাই গজ পলিথিন চাহিদায় রয়েছে, আমরা সামান্য কিছু লাভে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছি গজ পলিথিন।

পাশেই পটেটো ক্র্যাকার্সের প্যাকেট পলিথিন হিসেবে বিক্রি করছিলেন আনিছ। তিনি বলেন, প্রতি পিচ পলিথিন ২০ টাকায় বিক্রি করছি। এতে সামান্য আয় হলেও মুসলিস্নদের উপকার হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে