শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

আনন্দ রূপ নিল বিষাদে

বৃহস্পতি ও শুক্রবার শামীউল ও সুমনের বিয়ের নির্ধারিত দিন ছিল। তাই স্বজন ও পরিবারসহ তাদের মধ্যে বয়ে যাচ্ছিল আনন্দের বন্যা। এক সড়ক দুর্ঘটনা তাদের সব স্বপ্ন তছনছ করে দেয়
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
  ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
আনন্দ রূপ নিল বিষাদে

মনিরুল ইসলাম (৩২), সাইফুল ইসলাম সুমন (২৭) ও শামীউল ইসলাম। তারা আপন তিন ভাই। এর মধ্যে সুমন ও শামীউলের পারিবারিকভাবে বিয়ে ঠিক হয়। বৃহস্পতিবার শামীউলের ও শুক্রবার সুমনের বিয়ের নির্ধারিত দিন ছিল। তাই স্বজন ও পরিবারসহ তাদের মধ্যে বয়ে যাচ্ছিল আনন্দের বন্যা। কিন্তু কে জানত সেই আনন্দ রূপ নিবে বিষাদে। এক সড়ক দুর্ঘটনা তাদের সব স্বপ্ন তছনছ করে দেয়। নিহত হন দুই ভাই- মনিরুল ও সুমন।

বুধবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের নবুওছিমদ্দিনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তারা রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামের মোকছেদ আলী সরদারের ছেলে। মনিরুল ইসলাম গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। সাইফুল ইসলাম রাজবাড়ী সদর উপজেলার যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পে কর্মরত ছিলেন।

প্রতিবেশী ও স্বজনরা জানিয়েছেন, তিন ভাইয়ের মধ্যে মনিরুল সবার বড়। মেঝ ও ছোট ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য মনিরুল ঢাকা থেকে বুধবার সন্ধ্যার পর রওনা দেন। রাতে দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছে বাড়িতে যাওয়ার মতো কোনো গাড়ি না পাওয়ায় মুঠো ফোনে ছোট ভাই সুমনকে বাইক নিয়ে আসতে বলেন। ছোট ভাইয়ের সঙ্গে রাত ১২টায় দৌলতদিয়া ঘাট থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন তারা। রাত সোয়া ১২টার দিকে উপজেলার নবুওছিমদ্দিনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছলে মাটি বহনকারী ট্রাকের সঙ্গে তাদের মোটর সাইকেলের ধাক্কা লাগে। এতে মোটর সাইকেল থেকে দুই ভাই ছিটকে পড়লে ঘটনাস্থলেই মনিরুল মারা যান। গুরুতর আহত অবস্থায় সুমনকে উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

রাজবাড়ীর আহলাদীপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল হালিম বলেন, 'সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। ট্রাকের চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ প্রক্রিয়াধীন।

বৃহস্পতিবার সকালে মনিরুল ও সাইফুলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উঠানের এক পাশে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের মঞ্চ পড়ে আছে। গায়ে হলুদের মঞ্চের পাশে দুটি স্টিলের খাটিয়ায় রাখা হয়েছে দুই ভাইয়ের লাশ।

স্বজনদের কান্না থামছে না।

মোকছেদ সরদারের মেজ ছেলে শামীউল ইসলাম বলেন, পারিবারিকভাবে ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম ও তার (শামীউল) বিয়ে ঠিক হয়েছে। বৃহস্পতিবার তার এবং কাল (শুক্রবার) সাইফুলের বিয়ের বরযাত্রা ছিল। শনিবার দুই ভাইয়ের বউভাত অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। বুধবার রাতে দুই ভাইয়ের একসঙ্গে গায়েহলুদের অনুষ্ঠান হয়েছে। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষে রাতে বড় ভাইকে আনতে দৌলতদিয়া ঘাটে যান সাইফুল। ফেরার সময় দুর্ঘটনায় দুই ভাইয়ের মৃতু্য হয়েছে। বাড়িভর্তি স্বজন, এর মধ্যে এমন করুণ পরিস্থিতি হবে, কখনো ভাবতে পারেননি তারা।

প্রতিবেশী বাচ্চু শেখ বলেন, 'দুই ভাইয়ের বিয়ে বলে সবাই আনন্দে ছিল। একসঙ্গে দুই ভাইয়ের মৃতু্য কোনোভাবে মেনে নিতে পারছি না। বৃহস্পতিবার বিয়ের সাজে থাকার কথা, সেখানে চিরবিদায় দেওয়া হচ্ছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে