শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২
অগ্নিঝরা মার্চ

পাকিস্তান দিবসের কর্মসূচি বাতিল করে সরকার

যাযাদি রিপোর্ট
  ১২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
পাকিস্তান দিবসের কর্মসূচি বাতিল করে সরকার
পাকিস্তান দিবসের কর্মসূচি বাতিল করে সরকার

ক্ষোভে-প্রতিবাদে উত্তাল এক মাস মার্চ। দিন যত সামনে এগোচ্ছিল, বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন ততই বেগবান হচ্ছিল। ১২ মার্চ এর ব্যতিক্রম নয়। পূর্ব বাংলায় অসহযোগ আন্দোলনের চাপে এই দিনে রাওয়ালপিন্ডিতে এক ঘোষণায়, ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের নির্ধারিত সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ, খেতাব বিতরণ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বাতিল করে ইয়াহিয়া সরকার।

এই দিন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের জন্য খাদ্য বোঝাই মার্কিন জাহাজের গতি বদলে করাচি পাঠানোয় উৎকণ্ঠা ও তীব্র নিন্দা জানান। এই দিন পাকিস্তান সরকারের দেওয়া খেতাব বর্জন করেন জাতীয় পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ জহিরউদ্দিন।

এই দিন আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শোক পালনরত দেশবাসীর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে দেশের ১৯টি প্রেক্ষাগৃহের মালিকরা সিনেমা হলগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন এবং বঙ্গবন্ধু ঘোষিত আওয়ামী লীগের সাহায্য তহবিলে ১৩ হাজার ২৫০ টাকা দান করেন। চলচ্চিত্রের সঙ্গে

সম্পর্কিত পেশাজীবীরা, সাংবাদিক সমাজ, চারু ও কারু শিল্পীরা সবাই মিছিল সহকারে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেন।

এই দিনে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে, সিএসপি ও ইপিসিএস কর্মকর্তাদের সংগঠন পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম শ্রেণির প্রশাসকেরা এক সভায় মিলিত হয়ে বলেন, 'এখন থেকে আমরা জননেতা শেখ মুজিবের সকল নির্দেশ মেনে চলব' এবং এ মর্মে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেন।

একাত্তরের ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ এই দিন সম্পর্কে লিখেছেন ১৯৭১ সালের ১২ মার্চ ছিল শুক্রবার। বস্তুত বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ- জাতির জনকের নির্দেশে পরিচালিত হতে থাকে। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে সমাজের সর্বত্র সংগ্রামী জনতা তার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে থাকে। এমন সর্বাত্মক অসহযোগ ইতিহাসে নজিরবিহীন। এমনকি মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগকেও তা ছাপিয়ে যায়। এ দিনে আমরা আমাদের যুবসমাজ ছাত্র সমাজকে সংগঠিত করে সশস্ত্র যুদ্ধের জন্য অস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু করি।

তিনি আরও লিখেছেন- পাকিস্তানের উভয়াংশের জাতীয় নেতারা রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে বঙ্গবন্ধুর শর্তসমূহ মেনে নেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার প্রতি জোর দাবি জানান। ঢাকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে গিয়ে ইশতেকলাল পার্টির প্রধান এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান টানা তৃতীয় দিনের মতো লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'পশ্চিমাঞ্চলের কিছু লোক বলছে, পূর্ব পাকিস্তান যখন যাবেই তখন যত দ্রম্নত যায় ততই মঙ্গল।' তিনি এসব কায়েমি স্বার্থান্বেষীদের উদ্দেশ করে বলেন, 'তারা ভেবে দেখেছেন কী, এ পন্থায় তারা রোগীর মৃতু্যকাল উপস্থিত ভেবে তাকে গলাটিপে হত্যা করার পরামর্শ দিচ্ছেন। দেশকে খন্ড-বিখন্ড হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষাকল্পে এই পরিস্থিতিতে অবিলম্বে প্রথম ফ্লাইটেই প্রেসিডেন্টের উচিত ঢাকায় গিয়ে শেখ মুজিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মুজিব প্রদত্ত সকল শর্ত মেনে নেওয়া। আমি শেখ সাহেবের ঐতিহাসিক বক্তৃতার পর ঢাকা গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ঢাকার পরিস্থিতি দেখে এসেছি।'

একাত্তর সালের এই দিনে বগুড়া জেলখানা ভেঙে ২৭ জন কয়েদি পালিয়ে যান। এ সময় কারারক্ষীদের গুলিতে এক কয়েদি নিহত ও ১৫ জন আহত হন। অব্যাহত আন্দোলনে সরকারি-আধাসরকারি অফিসের কর্মচারীরা কর্মস্থল বর্জন করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা, সরকারি ও বেসরকারি ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসায় ও যানবাহনে কালো পতাকা উড়তে থাকে।

এইদিকে দেশের সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধু ঘোষিত কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মিছিল সহকারে ধানমন্ডির বাসভবনে আসতে থাকে। সারা দিন এমনকি গভীর রাত পর্যন্ত সংগ্রামী জনতা বিভিন্ন সেস্নাগান ধ্বনিতে চারদিক প্রকম্পিত করতে থাকে। এ দিন দেড় শতাধিক মিছিল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে আসে এবং বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নেতারা সাক্ষাৎ করেন।

এইদিন এক ঘোষণায় স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা কালোবাজারি, মজুতদারি ইত্যাদি অপতৎপরতার বিরুদ্ধে কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, 'যারা এসব কার্যকলাপ চালাচ্ছে তারা স্বাধীনতাবিরোধী গণশত্রম্ন। ধরা পড়লে এদের বিরুদ্ধে কঠিন এবং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে